ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাঙ্গাকারার অবসর ওয়ানডে থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ মার্চ ২০১৫

সাঙ্গাকারার অবসর ওয়ানডে থেকে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে আমি তার পায়ে ধরব। সে যেন আরও কয়েক বছর খেলে।’ কিন্তু না, ম্যাথুসের এমন আকুতিও থামাতে পারেনি কুমার সাঙ্গাকারাকে। শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটিং নক্ষত্র পূর্ব ঘোষণানুযায়ী ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। বুধবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রঙ্গিন পোশাকে শেষবারের মতো খেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী সাঙ্গাকারা। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের পরই ওয়ানডেকে বিদায় বলবেন। এই হিসেবে প্রোটিয়াদের কাছে লঙ্কানরা কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নেয়ায় শেষ ম্যাচ খেলেছেন সাঙ্গাকারা। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন তিনি। করেন ৪৫ রান। এর আগের চার ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়েন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। বিদায়বেলায় এই মহানায়ক আশাবাদের সুরে বলেছেন, তার বিদায়ে লঙ্কান ক্রিকেটে শূন্যতা হবে না। ম্যাথুসের নেতৃত্বে এখন যারা আছে তারা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতও তিনি দেখছেন বলে জানিয়েছেন বিদায়বেলায়। আগেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো মাহেলা জয়াবর্ধনেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু দুই তারকার বিদায়টা সুখকর হয়নি। দু’জনই বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে পরাজিত শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন সাঙ্গা ও মাহেলা। এবার তাই দলকে শিরোপা পাইয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। এ লক্ষ্যে সাঙ্গাকারা দুর্দান্ত খেললেও মাহেলা ছিলেন অনেকটাই নিষ্প্রভ। আগেই টেস্টকে বিদায় জানানো জয়াবর্ধানে শেষ ওয়ানডেতে মাত্র ৪ রান করে আউট হন। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সাঙ্গাকারার বিদায়কে ট্র্যাজিকও বলা যায়। এবারের বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরি করে অনন্য রেকর্ড গড়েন। এখন পর্যন্ত পাঁচ শ’র বেশি রান করে এক নম্বরে। এরপরও বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে সাঙ্গার। এ নিয়ে অবশ্য আপসোস নেই বলে জানিয়েছেন কুমার। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আরও কয়েক বছর হয়ত খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু যেতেই যখন হবে, তাহলে বিশ্বকাপ খেলেই চলে যাওয়া ভাল। ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীনের পর সাঙ্গারই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। দুই দু’বার রানার্সআপ হয়েছেন। কিন্তু শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি। আক্ষেপ বা আপসোস থাকতেই পারে। এ প্রসঙ্গে সাঙ্গার ভাষ্য, আক্ষেপ করার কিই বা আছে! আপনি জীবনে সব পাবেন তা কী হয়? এক ধরনের অপূর্ণতা বোধ হয় জীবনকে পূর্ণতা এনে দেয়। ক্রিকেট অনেক কিছু দিয়েছে জানিয়ে সাঙ্গাকারা বলেন, অনেক পেয়েছি। যে সম্মান আর ভালবাসা পেয়েছি তা ভোলার নয়। দেশের হয়ে খেলে আমি ধন্য, গর্বিত। তিনি আরও বলেন, যদি কেউ বলে, হ্যাঁ, সাঙ্গার সঙ্গে খেলেছি। সাঙ্গার বিরুদ্ধে খেলেছি। আর যারা এতদিন ভালবাসলেন ক্রিকেটার সাঙ্গাকে, তারা যদি মানুষ সাঙ্গাকে মনে রাখেন তাহলে মনে হবে ক্রিকেট নামের খেলাটা খেলে ভুল করিনি। এটাই হবে বাকি জীবনের অনেক বড় প্রেরণা। বিশ্বকাপে অবসর প্রসঙ্গে বলেন, অবসর নেয়ার জন্য বিশ্বকাপ সবচেয়ে সেরা উপলক্ষ। এরচেয়ে ভাল মঞ্চ আর কি হতে পারত। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৯ রানের ইনিংস দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে মিশন শুরু করেন সাঙ্গাকারা। পরের ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ৭ রানে আউট হন। টানা দুই ম্যাচে তেমন কিছু না করতে পারার জ্বালা জুড়াতেই হয়ত পরের ম্যাচ থেকে আদাজাল খেয়ে শুরু করেন! ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১০৫ ও ১ মার্চ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৭ রানের দুটি অপরাজিত ইনিংস খেলার পর ৮ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও খেলেন ১০৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস। এরপর ১১ মার্চ স্কটিশদের বিরুদ্ধে খেলেন ১২৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। এর মধ্যে প্রথম দুই শতক হার না মানা। অসিদের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের ২৪তম শতক হাঁকিয়ে সাঙ্গাকারা প্রবেশ করেন ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রানের ক্লাবে। আগের ম্যাচে তিন অঙ্কে পৌঁছানোয় বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারার মোট শতরানের ইনিংস হয় চার। এর ফলে তিনি স্বদেশী মাহেলা জয়াবর্ধনে, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী ও অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহর পাশে নাম লেখান। আর পেছনে ফেলেন তিন শতক হাঁকানো স্বদেশী সনাথ জয়সুরিয়া ও তিলকারতেœ দিলশানকে ছাড়াও রমিজ রাজা, সাঈদ আনোয়ার, ভিভ রিচার্ডস ও ম্যাথু হেইডেনকে।
×