ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লঙ্কানদের লজ্জায় ডুবিয়ে সেমিতে দ. আফ্রিকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ মার্চ ২০১৫

লঙ্কানদের লজ্জায় ডুবিয়ে সেমিতে দ. আফ্রিকা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে চলছে অদ্ভুত এক বিশ্বকাপ। ব্যাটসম্যানদের উইলোর ঝলকে পুল-পর্বে বয়ে গেছে রানের বন্যা, হয়েছে রেকর্ডের পর রেকর্ড। একই সঙ্গে পূর্বানুমান মিথ্যা প্রমাণ করে আবার বড় ম্যাচগুলো ছিল একতরফা! নকআউট স্টেজেও অব্যাহত থাকল সে ধারা। বুধবার প্রথম কোয়ার্টারে সাবেক চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন একতরফা কোয়ার্টার বিশ্বকাপের ইতিহাসে খুব কমই হয়েছে! শিরোপা জিতে তারা ‘চোকার’ অপবাদের কবর দিতে পারবে কি না, সেটি সময়ই বলবে, তবে কাল উল্টো লঙ্কানদের ‘চোকের’ ফাঁদে ফেলে ৯ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিল এবি ডি ভিলিয়ার্সের দল! একই সঙ্গে সবার আগে ১১তম আসরের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল প্রোটিয়া শিবির। তাই নয়, নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম নকআউটে জয় পেল দ. আফ্রিকা! ‘টস’ বাইরে রাখলে সিডনিতে একতরফা ম্যাচের গল্পটা কেবলই প্রোটিয়াদের। যেখানে সবকিছু হয়েছে তাদের সাজানো মঞ্চে। লঙ্কানদের ভয় ছিল ডেল স্টেইন-মরনে মরকেল নামের দুর্ধর্ষ সব পেস বোলারদের নিয়ে। টস জিতে ম্যাথুসের ব্যাটিং নেয়া সেই ইঙ্গিতই দেয়। অথচ দ. আফ্রিকার স্পিন বিষে নীল হলো তারা! ৩৭.২ ওভারে ১৩৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে হারল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ৪ উইকেট নিয়ে নায়ক বনে গেলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত প্রোটিয়া স্পিনার ইমরান তাহির। প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের অনন্য নজির স্থাপন করলেন ‘অকেশনাল’ জেপি ডুমিনি। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার ১০ উইকেটের ৭টিই নিলেন দুই স্পিনার! ছোট্ট লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে ফর্মে ফিরলেন কুইন্টন ডি’কক। ৭৮ রানে অপরাজিত থাকলেন তরুণ এই ওপেনার। সঙ্গী ফ্যাফ ডু প্লেসিসকে নিয়ে দলের জয় সঙ্গী করে মাঠ ছাড়ার সময় ডি’কক গভীর আলিঙ্গনে বাঁধলেন প্রতিপক্ষ তারকা কুমার সাঙ্গাকারাকে। আগামী দিনগুলোতে ঠিক তার মতো করে দ. আফ্রিকাকে দারুণ কিছু দেয়ার প্রেরণা- দোয়া চেয়ে নেয়ার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত আর কী হতে পারতেন? মস্তকবনত এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে থেকে বিদায় ঘটল আধুনিক ক্রিকেটের বিরল প্রতিভা কুমার সাঙ্গাকারার, সঙ্গে বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনেরও। লজ্জার ভরাডুবির ম্যাচেও দলের সর্বোচ্চ ৪৫ রান এলো তারই ব্যাট থেকে, মাহেলার ৪! টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি, চলতি আসরে ৫ শতাধিক ব্যক্তিগত রানের সংগ্রহ, ক্যারিয়ারজুড়ে আরও কত সব অনন্য কীর্তি। কিন্তু ক্রিকেটের ভাগ্য বিধাতার খেয়াল বোঝা দায়। তাই তো, আগের দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছোঁয়া হলো না। এবার কোয়ার্টার থেকে বিদায় নিতে হলো লজ্জাবনত মুখে! যে কোয়ার্টারে প্রথমে ব্যাট করা দল ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায়, তা টপকে যেতে প্রতিপক্ষ ১৮ ওভারকেই যথেষ্ট মনে করে, সেটির বর্ণনা আর কি-ই বা হতে পারে? স্পিনাররা নায়ক বনে গেলেও শুরুতেই লঙ্কান ব্যাটিংয়ে ভয় ধরিয়ে দেয়ার কাজটা করেন পেসাররা। পঞ্চম ওভারে দলীয় ৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনার কুশল পেরেরা (৩) ও তিলকারতেœ দিলশানকে (০) সাজঘরে ফেরান কাইল এ্যাবট ও ডেল স্টেইন। সিডনির পিচে অবিশ্বাস্য সুইং আসছিল পেস-স্পিন দু’দিক থেকেই! তবু আশা ছিল লঙ্কানদের। কারণ একপ্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন সুপার সাঙ্গা। সঙ্গে সাবলীল লাহিরু থিরিমান্নের। ১৫ ওভারে ৬৫ রান যোগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তারা। ব্যাট হাতে অপেক্ষায় মাহেলা জয়াবর্ধনে ...। তখনও লঙ্কানদের আশাটা অমূলক ছিল না। রানের গতি বড়াতে গিয়ে ভুলটা করে বসেন দারুণ খেলতে থাকা থিরিমান্নে (৪৮ বলে ৪১)। ইমরান তাহিরের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সাঙ্গাকারার সঙ্গে জুটি বাঁধতে মাঠে নামেন মাহেলা, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যাদের ব্যাট বহুবার দলকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এবার হলো না। ব্যক্তিগত ৪ রানে তাহিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন মাহেলা। এরপরও ম্যাথুস, থিসারা পেরেরা, নুয়ান কুলাসেকারা মিলিয়ে ব্যাটিং-লাইনের দৈর্ঘ্য কম ছিল না। কিন্তু দিনটা যে প্রোটিয়া স্পিনারদের, তাই তো ৪/৮১ থেকে ১৩৩/১০Ñ শেষ ৩২ রান তুলতে বাকি ৬ উইকেট নেই শ্রীলঙ্কার! নিজের ভিন্ন দুটি ওভার মিলিয়ে ম্যাথুস (১৯), কুলাসেকারা (১) ও অভিষিক্ত থারিন্ডু কুশলকে (০) ফিরিয়ে ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ডুমিনি! তাহিরের বোলিং ফিগার ৮.২-০-২৬-৪। ছোট্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে দলীয় ৪০ রানে ওপেনার হাশিম আমলাকে (১৬) হারালেও বাকি কাজটুকু সারতে বেগ পেতে হয়নি ডি’কক-ডুপ্লেসিসদের। ৫৭ বলে ১২ চারের সাহায্যে ৭৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ডি’কক, প্লেসিস ৩১ বলে ২১। লঙ্কার হয়ে এক উইকেট নেন পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। ৯ উইকেটÑ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ. আফ্রিকার এটিই বড় জয়। তাহির-ডুমিনি মিলে ৭ উইকেটÑ দেশটির ইতিহাসের যৌথভাবে কোন স্পিন-জুটির ম্যাচে সর্বাধিক শিকারের রেকর্ড। সাত ম্যাচে তাহিরের মোট উইকেট দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৫- এ্যালান ডোনাল্ড ও ল্যান্স ক্লুসনারে পর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে তৃতীয় সর্বাধিক শিকারের নজির এটি। ম্যাচে দু-দল মিলিয়ে কোন ছক্কার মার নেই, বিশ্বকাপে এমন ঘটনাও বিরল। সিডনিতে কালকের ম্যাচটি ছিল ১৫০তম ওয়ানডে, এর চেয়ে বেশি ওয়ানডে হয়েছে কেবল আমিরাতের শারজায় (২১৮)। ম্যাচ শেষে স্পিনারদের পাশাপাশি রানে ফেরায় ডি’ককেরও প্রশংসা করেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। একই সঙ্গে টস যাই হোক, ম্যাচ জিততে সমান আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলেও জানান তিনি। অপর দিকে ভরাডুবির জন্য নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন লঙ্কাপতি ম্যাথুস।
×