ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ... ক্রিকেটেও চাই স্বপ্নের জয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ মার্চ ২০১৫

স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ... ক্রিকেটেও চাই স্বপ্নের জয়

মোরসালিন মিজান ॥ ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা;/ ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা...। বাংলাদেশ সত্যি স্বপ্ন দিয়ে গড়া। স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। নয় মাস যুদ্ধে লড়ে বিজয়ী হওয়ার স্মৃতি এখনও বুকে জ্বল জ্বল করছে বাঙালীর। স্বাধীন দেশে এই স্বপ্ন আরও বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিনিয়ত বোনা হচ্ছে নতুন নতুন স্বপ্ন। বলা বাহুল্য, ক্রিকেট সেই স্বপ্নের খেলা! বাঙালীর স্বপ্নের পুরোভাগে এখন ব্যাট বলের লড়াই। যেন রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে গেছে। মাশরাফিরা বিজয়ী হলে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ। হারলে মুহূর্তেই মলিন বাংলা মায়ের মুখ। আজ বৃহস্পতিবার সেই টান টান উত্তেজনার দিন। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী দেশটি আয়তনে বড়। জনসংখ্যায় বেশি। ক্রিকেটে অর্জনও অনেক। তাতে কী? একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ। বরং বিজয়ী হতে মরিয়া। সেই সামর্থ্যও এখন রাখে টাইগাররা। ভারতকে শুধু নয়, সকল পরাশক্তিকেই হারানোর অভিজ্ঞতা আছে। আর চলতি বিশ্বকাপের পারফরমেন্স তো বুক ভরিয়ে দিয়েছে। প্রতিটিট ম্যাচেই ছিল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা। সঙ্গত কারণেই সেমিতে ওঠার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এইটুকুন ছেলেটির বুড়োটির ওই একটি চাওয়া। শুধু কি তাই? বসন্তের প্রকৃতি, বৃক্ষের নতুন পাতা, হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি, নদীর জল যেন বলছে- গুডলাক বাংলাদেশ! গত কয়েকদিন ধরে বিচিত্র উপায়ে, রংয়ে ঢংয়ে শুভ কামনা জানানো হচ্ছে টাইগারদের। খেলাটি সুদূরের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। অথচ সারাদেশে দৃশ্যমান হচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ১১ জনের খেলা। দেশে খেলছে ১৫ কোটি মানুষ! লাল সবুজ জ্যার্সি গায়ে সাধারণ রিক্সাচালকও মাশরাফি সাকিব মুশফিক হয়ে যাচ্ছেন। রিক্সাচালকের স্বপ্ন মাশরাফির স্বপ্নের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে! লাল সবুজের পতাকা ওড়ছে সারাদেশে। নয় মাস বীরের মতো লড়ে পাওয়া পতাকা উৎসাহ যোগাচ্ছে টাইগারদের। স্বাধীনতার মাসে জয় বাংলার জয় দেখতে চায় বাঙালী। ঘরে ঘরে চলছে সেই প্রার্থনা। হাঁটি হাঁটি পা পা সোনামনিরাও ব্যাট হাতে নিজেদের স্বপ্নের কথা বলছে। স্কুল কলেজ অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি পাবলিক বাসে একমাত্র আলোচনা ভারত বদ। উত্তাপটা সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বুধবার এখান থেকে বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। দীর্ঘ পতাকার চার কোনা ধরে গোটা এলাকা প্রদক্ষিণ করেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সবার এক উচ্চারণÑ গো বাংলাদেশ গো। শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া তরুণ আরিফ বললেন, বাংলাদেশ এখন অনেক শক্তিশালী। কে প্রতিপক্ষ সেটি নিয়ে আলাদা করে ভাবার আমাদের সময় নেই। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই জয় আসবে। মাশরাফি সাকিব মুশফিক মাহমুদুল্লাহ তামিম সৌম্য রুবেলদের নির্ভার হয়ে খেলার পরামর্শ দেন আরেক ক্রিকেটপাগল হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, মাথা ঠা-া রেখে খেলতে পারলেই কাজের কাজটা হয়ে যাবে। এখানেই শেষ নয়, একই দিন বাংলাদেশ দলের সমর্থনে ভারতের কলকাতায় শোভাযাত্রা করেছেন সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। দেশের পক্ষে বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে, নেচেগেয়ে রাজপথ মোটামুটি মুখরিত করে তোলেন তারা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। জানা যায়, আয়োজন দেখে প্রথমে কলকাতাবাসী বেশ অবাক হয়ে যান। পরে অবশ্য হাসিমুখেই মেনে নেন এই বাস্তবতা। শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বাইরে থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সমর্থনে সব করবেন তাঁরা। খেলায় জেতার ব্যাপারেও তাঁরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী বলে জানা গেছে। তবে শুধু জেতার কথা বলা হলেও প্রকৃত ভক্তরা সব সময় থাকতে চান টাইগারদের সঙ্গে। যদি আজ দল হেরে যায়- এমন প্রশ্নে অনেকেই তেমনটি জানালেন। বললেন, না জিতলেও ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ এরপর নিজের অজান্তেই গাইতে হয়Ñ ভাইয়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ...। এই স্নেহ এই ভালবাসা নিশ্চয়ই অনুভব করছেন ক্রিকেটাররা। সারাদেশের শুভ কামনা নিশ্চয়ই তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। হয়ত তাই সেরাটা খেলার ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী টিম বাংলাদেশ। দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা তো না বললেই নয়। সাফকথা তাঁর। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এই তরুণ ভারতকে হারানোর একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছেন। শুধু তাই নয়, ভারতকে হারালে সেটি যে কোন ‘আপসেট’ হবে না, তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, ভারত জিতলে সেটা ‘আপসেট’ হতে পারে বৈকি! এবার সাকিবের কথাটা। এই বিশ্বসেরা নিজের দুষ্ট হাসিটি হেসে বলেছেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। সেভাবেই তৈরি করছি নিজেদের। একটাই তো ম্যাচ। সেরা খেলাটা খেলতে পারলে সবই সম্ভব। বিশেষ করে আমরা এই বিশ্বকাপে ভাল খেলছি। আমাদের আত্মবিশ্বাসও অনেক উঁচুতে। তারও আগে বিশ্বের নামী-দামী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকারদের দৃষ্টি কেড়েছে বাংলাদেশের তরুণরা। ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ ঘিরে দুই দেশের ভক্তদের মাঝে যে লড়াই চলছে, সেখানেও কোণঠাসা ভারত। অনেকেই উল্টো কথা বলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমা চেয়েছেন। তবে বর্তমান অবস্থাটা সবচেয়ে ভাল বর্ণনা করেছেন ভারতীয় দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, দেখুন কে কী বলেছে সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। আমি কেবল এটুকু বলতে পারি, টিমটা আমাদের দুটো বড় টুর্নামেন্টে হারিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মতো টিমকে টানা সাতবার হারিয়েছে। তাদের সম্মানের সঙ্গে দেখা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আর আসলে বলার দরকারও হয় না। বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্ভাবনা এটুকুন কথাতে বেশ বোঝা যায়! আজ খুব ভালকিছুর আশা নিয়ে দিন শুরু করবে বাঙালী। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। কেবল এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলবে। আর কিছু নয়, জয় বাংলার জয় ঘোষিত হবে অস্ট্রেলিয়া থেকে- গোটা জাতির তাই প্রত্যাশা। গুডলাক বাংলাদেশ।
×