ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফাহাদ পরিচালক, পোল্ট্রি খামারের আড়ালে জঙ্গীদের আস্তানা

বাঁশখালী পাহাড় ছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৭ মার্চ ২০১৫

বাঁশখালী পাহাড় ছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ছাত্রশিবির পরিচালিত ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লার এ্যাডমিন শিবির নেতা খন্দকার জিয়াউদ্দিন ওরফে ফাহাদের পিতা বাঁশখালির ইউপি চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিনের সহায়তায় গড়ে উঠেছিল দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাঁশখালির সাধনপুরের লটমনি পাহাড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে সন্ধান মেলে এ আস্তানাটির। সেদিন ওই আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। গরু ও পোল্ট্রি খামারের আড়ালে সেখানে চলে আসছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণ। দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি সহায়তা ছিল পিতা-পুত্রের। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবিÑ এ ব্যক্তি আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই। স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে তিনি দলের পরিচয় ব্যবহার করতেন এবং সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। জঙ্গী আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার নেপথ্যে ছমিউদ্দিনের সহযোগিতার বিষয়টি প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে অভিমত এলাকাবাসীর। লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানার জন্য জায়গার বন্দোবস্ত দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিন। তিনি মাওলানা মোবারককে ভূমিহীন দেখিয়ে গবাদি-পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং কৃষিকাজের জন্য ভূমি প্রদান করেন। আর সেখানে খামারের আড়ালে চলে জঙ্গী প্রশিক্ষণ। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিন ও তার পুত্র বাঁশের কেল্লার এ্যাডমিন ফাহাদের কর্মকা-ের বিষয়ে অনেক তথ্য এর মধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। বাঁশখালির লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার নেপথ্যে এই পিতা-পুত্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ফাহাদ এ আস্তানাটি পরিচালনার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিল। বাঁশখালির লটমনি পাহাড়ে যে আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পরিচালিত হয়ে আসছিল তার মূলহোতা মনে করা হয় মাওলানা মোবারক আলীকে। এ ব্যক্তিও জঙ্গী নেতা, যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিনের। চেয়ারম্যানের সহায়তা ছিল পাহাড়ে গরু পালনের জন্য জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে। বাঁশের কেল্লার ফাহাদ সেখানে নিয়মিতই আসা-যাওয়া করত বলে তথ্য মিলেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, লটমনি পাহাড়ের আস্তানায় যাতায়াত ছিল বাঁশখালির সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার ছমিউদ্দিনের। পাহাড়টি দুর্গম হওয়ায় সেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছিল না। তবে বহিরাগত ও সন্দেহভাজনের আনাগোনায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানাগুঞ্জন ছিল। আস্তানাটি আবিষ্কার হওয়ায় শুরুতেই সন্দেহের তীর ছিল চেয়ারম্যান ছমিউদ্দিনের দিকে। এরপর তার পুত্র বাঁশের কেল্লার এ্যাডমিন ফাহাদ গ্রেফতার হওয়ায় সেই সন্দেহ সত্যে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সেদিন র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৫ জঙ্গীকে। এর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা ১২ জঙ্গীর দেয়া তথ্যানুযায়ী র‌্যাব সদস্যরা বাঁশখালিতে অভিযান চালায়। বাঁশখালি উপজেলার মেয়র শেখ ফখরু উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ছমিউদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই জানেন এলাকার লোকজন। তার ছেলেকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জঙ্গী সহায়তায় ছমিউদ্দিনের নামটি এখন আলোচিত হচ্ছে। বাঁশখালির সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমানউল্লাহ চৌধুরী অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে এ ছমিউদ্দিনের কখনই সম্পৃক্ততা ছিল না। শুধুমাত্র চেয়ারম্যান হিসেবে সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্যই তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন। তার পুত্র ফাহাদ লটমনি পাহাড়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা করত বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। উল্লেখ্য, লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানা পাওয়ার পর থেকেই লাপাত্তা রয়েছেন ওই আস্তানার হোতা মাওলানা মোবারক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কথিত এ মাওলানাকে খুঁজছে।
×