ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাঁশেরকেল্লা এখনও পোস্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ মার্চ ২০১৫

বাঁশেরকেল্লা এখনও পোস্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ জামায়াত-শিবির পরিচালিত ‘বাঁশেরকেল্লা’ এখনও পোস্ট দিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ফেসবুকার ও ব্লগাররা। অপপ্রচারে মেতে ওঠেছে তারা। কারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে পোস্ট দিচ্ছে হদিস করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। বাঁশেরকেল্লার মতো আরও অনেক পেজ খুলেছে জামায়াত-শিবিরের ফেসবুকার ও ব্লগাররা। তাদের রপ্ত করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কুলিয়ে ওঠতে পারছেন না সরকারের প্রযুক্তি বিটিআরসি। অভিজিত রায়, রাজিব হায়দারসহ প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগারদের হত্যা করার পর টনক নড়েছে গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, বাঁশেরকেল্লার এখনও যারা পোস্ট দিচ্ছে তারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, বাঁশেরকেল্লার এডমিন হিসাবে যেই জিয়াউদ্দিন ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি বাঁশেরকেল্লার এডমিন নন। এই ধরনের পোস্ট দিয়ে গ্রেফতারকৃত ফাহাদ সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে কৌশলে তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টার করা হচ্ছে। ফাহাদ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদেশ্য হচ্ছে, তদন্তকারীরা যাতে তার বিষয়ে দুর্বল প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার বিষয়ে দুর্বল প্রতিবেদন দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলে আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত হতে পারবে। এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানোয় ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়েও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ফারাবী। ওইবছর ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে পুলিশ ফারাবীকে গ্রেফতার করে। ফেসবুক ব্যবহার করে ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে জুন মাসে ঢাকার একটি আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করে। কিন্তু হাইকোর্টের জামিনে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যান ফারাবী। আর মুক্তি পেয়েই ‘নাস্তিকদের হত্যাকা- সমর্থন করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ফারাবীর মতোই গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বাঁশেরকেল্লার ফাহাদকে। তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই বিভিন্ন পেজে পোস্ট দিচ্ছে জামায়াতÑশিবিরের ব্লগাররা। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বর্তমানে বাঁশেরকেল্লায় পোস্ট দেয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে যে বা যারা পোস্ট দিচ্ছে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি। পুলিশ যাকে আটক করেছে তিনি বাঁশেরকেল্লার এডমিন নন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের লোক না ধরলে এ নিয়ে এতো মাথাব্যাথা কেন? আমরা নিশ্চিত তিনিই (ফাহাদ) বাঁশেরকেল্লার এডমিন। ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লার এডমিন ও চীফ এডিটর জিয়াউদ্দিন ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং টেকনোলজিক্যাল এনালাইসিসের পর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কাজে সব টাকা দলীয় ফান্ড থেকে দেয়া হতো। ফেসবুকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্যচিত্র প্রচারের জন্য বাঁশেরকেল্লার ৩০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন ফুল টাইম এবং বাকিরা বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি এধরনের কর্মকা- চালাতেন। পার্টটাইমারদের পোস্ট প্রতি ২ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার নজির পাওয়া গেছে। হিট বাড়লে টাকার পরিমাণ বাড়ানো হতো বলে জানিয়েছেন তিনি। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিটিআরসি বাঁশেরকেল্লার ওয়েবসাইট ও ওয়েব পেজ বন্ধ করেছে বার বার। বিটিআরসিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বার বারই বাঁশেরকেল্লা চালু করছে। বিআরটিসি যেই ধরনের বিশ্বাসযোগ্য দক্ষ জনশক্তি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে তার চেয়েও বেশি বিশ্বাসযোগ্য দক্ষ জনশক্তি নিয়ে কাজ করছে জামায়াত-শিবির। এমনকি বিকল্প হিসাবে লন্ডনে ও আমেরিকা থেকেও আমাদের পেজে পোস্ট দিচ্ছে তারা। তারা বিকল্প হিসাবে আমরা টুইটারে পোস্ট দেয়। বাঁশেরকেল্লা নামের আরও কয়েক শ’ পেজ খোলা হয়েছে। এ দু’টি পেজে ইংরেজীতে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের ব্লগারদের সঙ্গে রয়েছে-পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তুর্র্কিসহ সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রকরা। জামায়াত-শিবিরের এসব সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রকদের পেজ, টুইটার, ফেসবুক, ব্লগ বন্ধে প্রযুক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে তারা উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধের অপপ্রচার ও জঙ্গী তৎপরতায় উস্কানি দিয়ে সর্বনাশ ঘটাবে।
×