ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ মার্চ ২০১৫

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৭ মার্চ, ১৯৭১। সে ছিল আশ্চর্য এক জাগরণের কাল। সব বাঙালীর চেতনা স্থির ছিল একটি মাত্র লক্ষ্য বিন্দুতেÑ যার নাম স্বাধীনতা। উত্তাল-বিক্ষুব্ধ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের মাটিতে পা দিয়েই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বুঝতে বাকি রইলো না যে, পাকিস্তানের অখ-তা আর রক্ষা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য। ‘সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম / চলবেই দিনরাত অবিরাম’Ñ এ রকম অনেক উদ্দীপনামূলক গান টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে। স্বাধীনতার প্রশ্নে যেন সব বাঙালী বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে অংশ নিয়েছে সংগ্রামে। একাত্তরের উত্তাল এদিনে পাকিস্তানের উর্ধতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। খোদ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থান করে নিশ্চিত হন এ অংশে কার্যত পাকিস্তানের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্গুলী হেলনেই চলছে সবকিছু। বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সব মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে বীর বাঙালীর অকুতোভয় সংগ্রাম আর রণপ্রস্তুতিতে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মানষপটে ফুটে উঠলো অনিবার্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণের পথ বেছে নেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। প্রতিটি বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালীর মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিলেন আপোসহীন। ফলে পাকি সামরিক জান্তারা ভেতরে ভেতরে বাঙালী নিধনযজ্ঞ চালিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভ-ুল করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা আঁটতে থাকে। প্রতিদিনই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ করা হয় পূর্ব-পাকিস্তানে। একাত্তরের উত্তাল মার্চের এদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মুক্তিপাগল হাজারও বাঙালী। সেদিন দুপুরে ধানম-ির বাসভবনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাতে আসা স্বাধীনতাকামী বাঙালীর উদ্দেশে জন্মদিনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কামনা জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ ঠিকই বঙ্গবন্ধু পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। হন বাঙালীর মুকুটমণি, জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। রক্তঝরা একাত্তরের এদিনও শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি সারাদেশে আন্দোলন বাঁধভাঙ্গা রূপ নিয়েছে। রাজপথ মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত করে সাধারণ মানুষও দেশের উদ্ভূত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ মন্তব্যের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এরই মধ্যে ৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে-ময়দানে সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা নিয়ে তোলপাড়। সারাদেশের অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। সব সরকারী ভবন, হাটবাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায় উড়ছে প্রতিবাদের কালোপতাকা। কোথাও কোথাও বাংলাদেশের নতুন পতাকাও উড়তে থাকে। মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স, পেশা ও শ্রেণীর মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বঙ্গবন্ধুকে আরও উজ্জীবিত করতে রাস্তায়, মাঠে-ময়দানে তখন গণসঙ্গীত, নাটক, পথনাটক ও পথসভা করে চলছে স্বাধীনতাকামী শিল্পীরা। বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে থাকেন।
×