ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ॥ বিদেশী ঋণ ব্যয়ে অনীহা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৭ মার্চ ২০১৫

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ॥ বিদেশী ঋণ ব্যয়ে অনীহা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের ঝোঁক বাড়ছে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থের প্রতি। দিন দিন বাড়ছে এই প্রবণতা। বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে নানা প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা, দাতাদের আমলান্ত্রিকতা, দুর্নীতির সুযোগ কম থাকা এবং ব্যাপক মনিটরিংসহ নানা কারণে এমনটি হয় বলে জানা গেছে। তবে এটিকে অশুভ প্রবণতা হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর চাপ পড়ছে এবং বেসরকারী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে বৈদেশিক সহায়তার পাইপলাইন। বিষয়টি স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে সেসব প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকগণ বরাদ্দকৃত অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করতে পারছেন না। প্রকল্প অর্থ ব্যয়ে আমরা একটা ধারা দেখছি, তা হলো- আমাদের প্রকল্প পরিচালকগণ সরকারী অর্থ ব্যয়ে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ঠিক ততটাই অস্বস্তিবোধ করেন বরাদ্দকৃত বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে । এটা কখনই কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে এ সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) সঙ্গে নিয়ে একটি কার্যকর পন্থা হাতে নেয়া হবে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) সংশোধনের সময় দেখা গেছে, কোন কোন মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করতে না পেরে ফেরত দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পের জন্য ওই মন্ত্রণালয় সরকারী তহবিল (জিওবি) থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। সংশোধিত এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারী তহবিলের চেয়ে বৈদেশিক সহায়তা থেকে বেশি অর্থ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে গেছে ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপির সরকারী তহবিল থেকে কমেছে ২ হাজার ১১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কমছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, দাতাদের শর্ত ও নানা নিয়ম-কানুন থাকে। এসব শর্ত মানতে হলে নানা কাগজপত্র পূরণ করতে হয়। তাছাড়া বিদেশী টাকা ব্যয়ের জবাবদিহিতা রয়েছে। প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন না। তাছাড়া ভাষাগত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তারা উন্নয়নসহযোগীদের সঙ্গে কার্যকর নেগোসিয়েশন করতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একজন প্রকল্প পরিচালক ১২টি প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন। তাহলে তিনি কোন্ প্রকল্পে কতটুকু সময় দিতে পারবেন। এসব কারণে পিডিরা বৈদেশিক ঋণের টাকা ব্যয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করনে না। অন্যদিকে সরকারী তহবিলের টাকা ইচ্ছামত ব্যয় করা যায়। কোন রকমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপরের স্যারদের হিসাব বোঝানো যায়। আবার দেশী টাকা আগে-পরে কিংবা সুবিধাজনকভাবে ব্যয়ের সুযোগ থাকে; যা বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বরং বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয় বাড়ানো উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়Ñবিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত ১৭২ কোটি ডলারের মোট ১৩ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিহীনতার কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে চরম খারাপ অবস্থায় ছিল ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে(ইআরডি) পাঠিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বলা হয়েছিল, গতিহীন এসব প্রকল্পের অধিকাংশেরই মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও অর্থছাড় হয়েছে খুবই কম। এর ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জনবল নিয়োগ, ক্রয়-প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরিতে ক্রটি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হতাশা প্রকাশ করেছে এমন কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑঢাকা পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের ১৪৯ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের এই প্রকল্পটি শুরু হয় ২০০৯ সালে। এর প্রায় তিন বছর পর অর্থছাড় হয় মাত্র ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। একই অবস্থা চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে, দুই বছরে অর্থ ছাড় হয় দশমিক ৩ শতাংশ। প্রায় ১৭ কোটি ডলার ব্যয়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পল্লী এলাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় মাত্র ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ইমারজেন্সি-২০০৭ সাইক্লোন সেন্টার পুনর্বাসন প্রকল্পে মনিটরিং জোরদার করতে বলা হয়েছিল সংস্থাটির পক্ষ থেকে। প্রকল্প শুরুর চার বছর পর প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ১১ শতাংশ অর্থ। এ রকম উদাহরণ আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) অন্যান্য অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ৩৫টি জনগুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পের গতি কম হওয়ায় গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে ৪০ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণে অর্থ ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট নামে প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬৮ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন কম হওয়ায় বরাদ্দ কমানো হয়। চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় ৪০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ কমানো হয়। এলজিইডির আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট, আরবান পাবলিক এ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল হেলথ সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্প, কর্ণফুলি ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প, স্ট্রেনদেনিং গবর্মেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প, কনস্ট্রাকশন অব খুলনা-মংলা পোর্ট রেললাইন ফেসিলিটিস প্রজেক্ট, প্রাইমারী এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমানো হয়। এসব প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা ছিল। সূত্র জানায়, এর আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করতে না পারার বা অনাগ্রহের কতক কারণ চিহ্নিত করেছিল। এগুলো হচ্ছে, প্রকল্প নকশায় ত্রুটির কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। এ অবস্থায় ডিপিপি বা টিপিপি সংশোধন ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। এসকল ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশোধনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব হয়। যার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নেও বিলম্বিত হয়। আবার অনেক সময় নির্ধারিত পরামর্শক কাজে যোগদান করেন না। পরামর্শক প্রতিস্থাপনের জন্য কাজে বিঘœ ও বিলম্ব ঘটে। প্রকল্প প্রণয়নকালে কনসালট্যান্টের টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয় না। ফলে পরামর্শকদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কাজ পেতে দেরি হয়। প্রকল্পের দরপত্রের প্রক্রিয়াকরণকালে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার নিকট কলোসিভ প্র্যাকটিস, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ দাখিল করা হয়। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীর সম্মতি পেতে দেরি হয়। সরকারী ক্রয় আইন ও ক্রয় বিধিমালা এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রকিউরমেন্ট গাইড লাইনস সম্পর্র্কে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তার পর্যাপ্ত ধারণা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। এডিপি প্রণয়ন পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক পেশকৃত চাহিদা বাস্তবমুখী না হয়ে উচ্চাকাক্সক্ষী ও অনুমাননির্ভর হয়। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বাধ্য হয়ে বরাদ্দ হ্রাসের প্রস্তাব করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন কোন সংস্থা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে না বরং ডিপিপিতে উল্লেখিত বছরওয়ারি সাধারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের সাহায্যের চাহিদা পেশ করে। জনবল নিয়োগ নিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হয়। সাধারণ আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে প্রকল্পে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্প চলাকালীন এসব কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। যার জন্যও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য কত সময় লাগবে তা হিসাব করা হয় না। একই সঙ্গে ডিসবার্সমেন্টের বিষয়ে অর্থায়ন কিংবা বাস্তবায়ন চুক্তিতে স্বীকৃত শর্তসমূহ পালনে কত সময় লাগবে তা বিবেচনা না করে উচ্চাকাক্সক্ষী চাহিদা পেশ করা হয়। যে সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (যেমন সৌদি ফান্ড, কুয়েত ফান্ড, ওপেক ফান্ড ও এলডিএফ) স্থানীয় অফিস বাংলাদেশে নেই সেসব সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। যার জন্য অর্থায়নের ডিসবার্সমেন্টে বিলম্বিত হয়। অর্থবছরের শুরুতে, এমনকি তার আগেও প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং তাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মতি গ্রহণে সূযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না। যার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হয়। এমনই নানা কারণে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প আস্তবায়ন দেরি হয় এবং প্রকল্প পরিচালকরা বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এখন এসব সমস্যা কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ডোনার এবং সরকার উভয় পর্যায়েই এটি করা হয়েছে। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পগুলোতে একাধিক দাতা যুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে একটি দাতা বেশি অর্থছাড় করলে তো হবে না। সবার অর্থছাড় থাকতে হবে। এজন্য যেসব প্রকল্পের অর্থছাড়ে সমস্যা ছিল সেগুলোর বিষয়ে প্রতিমাসে ডোনার ও সরকারী পর্যায়ে টেকনিক্যাল লোকজন প্রথমে বৈঠক করতেন। সেখানে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের করণীয় নির্ধারণ করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হতো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো। পরের মসের মিটিংয়ে আবার এগুলোর ফলোআপ করা হতো। যদি দেখা যেত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না তখন প্রতি তিনমাসে উচ্চ পর্যায়ের (সচিব ) একটি বৈঠক করা হতো। সেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হতো। এভাবে সমস্যা সমাধান করা হতো। আগে বৈঠক ডাকলে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কেউ আসতেন না। ওই সময় সমস্যা চিহ্নিত হলোও ওই পর্যন্তই থাকত। সমাধান হতো না। কিন্তু এখন সমস্যা সমাধানে সবার আন্তরিকতা ও গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি না বাড়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত প্রায় ১ হাজার ৯৪৬ কোটি ডলার অর্থ পাইপলাইনে আছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বৈদেশিক সহায়তার এত অর্থ জমা হওয়ার ঘটনা। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ফরেন এইড বাজেট এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস উইংয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদা নাসরিন জনকণ্ঠকে বলেন, পাইপলাইনের অর্থ ব্যয় করার দায়িত্ব ইআরডির নয়, এ দায়িত্ব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। প্রকল্প বাস্তবায়ন যত বাড়বে অর্থছাড় ততই হতে থাকবে। তবে ইআরডি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারে। তিনি জানান, এর আগে ইআরডি থেকে বৈদেশিক অর্থায়নের ৫৫ থেকে ৬০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছিল, যার বাস্তবায়ন গতি ছিল ধীর। এছাড়া আরও ৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছিল যার ব্যয় ২০০ কোটি টাকার ওপর। এগুলোরও বাস্তবায়নে গতি ছিল না। এসব প্রকল্পের পরিচালককে (পিডি) ডেকে বৈঠক করা হয়েছিল। সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধানের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর কাছ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা যেসব কারণ পাঠিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব, প্রকল্প অনুমোদনের বা প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে বিলম্ব, প্রকল্প বাস্তবায়নে যে কোন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উন্নয়নসহযোগী সংস্থার কাছে চিঠি পাঠালে তার উত্তর পেতে কালক্ষেপণসহ নানা কারণ উঠে এসেছে।
×