ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বিপ্লবের রাজধানী’ বেনগাজি এখন বিপজ্জনক শহর

লিবিয়ায় জিহাদীদের উত্থানের নেপথ্যে-

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৬ মার্চ ২০১৫

লিবিয়ায় জিহাদীদের উত্থানের নেপথ্যে-

যখন ১৭ আসনের বিমানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে অবতরণ করতে শুরু করে, তখন খাদিজার গাল বেয়ে পানি পড়ছিল। একনায়ক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর লিবিয়ার ভবিষ্যত আরও ভাল হবে বলে খাদিজা আশা করেছিলেন, কিন্তু তার এ আশা ক্ষোভ ও ভয়ের রূপ নিয়েছে। এখন তো অবস্থা আগের মতোই, বরং নিরাপত্তা আরও কমেছে। তার দেশবাসীর অনেকেই তার সঙ্গে এক মত। ২০১১ সালের ন্যাটো-সমর্থিত যুদ্ধে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হন। এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর লিবিয়া দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার ও তাদের মিত্র সশস্ত্র দলগুলো ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। নবসূচিত গণতন্ত্রের স্থলে নির্যাতন ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আইনের শাসন এবং জাতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতিতে দেশটিতে মিলিশিয়ারাই সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত মাত্র তিনবছর আগে ২০১২ সালে লিবীয়রা তাদের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভোট দিতে কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গিয়েছিল। এক স্বৈরশাসককে সরাতে আট মাস লড়াই করতে হয়েছিল, কিন্তু তার শাসনাধীন ছিল এমন লোকজনের মানসিকতার পরিবর্তন হতে আরও অনেক বেশি সময় লাগবে বলে দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। গণতন্ত্রের অনুকূল এমন কোন প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ভিত্তি না থাকায় লিবিয়ার নতুন শাসকরা পুরাতন রাজনীতিই অবলম্বন করেন। দুর্নীতি গাদ্দাফির শাসনামলের চেয়েও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। কারণ প্রত্যেক রাজনীতিকই স্বজনপ্রীতি ও পৃষ্ঠপোষকতার জোরে তার পদ অর্জন করেন। লিবিয়ার তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। পরম্পরাগত সরকারগুলো দুর্বল হওয়ায় এবং অন্য কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ না থাকায় ইতোপূর্বে গাদ্দাফিকে উৎখাত করতে গঠিত যোদ্ধাদের দলগুলো নিজেদের ভেঙ্গে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বড় বড় স্থাপনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। ত্রিপোলিতে মিসরাতা ও পার্বত্য শহর জিনতান থেকে আগত মিলিশিয়াদের মধ্যে লড়াইয়ে শত শত লোক নিহত হয়। এ অবস্থাতেই ইসলামী চরমপন্থীদের বিস্তার ঘটে। কট্টরপন্থী জিহাদী দল আনসার শরিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস স্টিভেনসের হত্যাকা-ের জন্য এ দলটিকে দায়ী করা হয়। ‘বিপ্লবের রাজধানী’ পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি এক অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সালে সেখানেই প্রথম গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছিল। শহরটিতে ২০০ ব্যক্তি আততায়ীদের হাতে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। তাদের মধ্যে উদারপন্থী ও মানবাধিকার কর্মীরাও ছিলেন। Ñটেলিগ্রাফ
×