ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর জনমনে জিজ্ঞাসা

আর কত মানুষ মরলে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ মার্চ ২০১৫

আর কত মানুষ মরলে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি পাবে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আর কত পেট্রোলবোমা মারলে, কত মানুষ মরলে, কত যানবাহন জ্বলে-পুড়ে ছাই হলে, বার্ন ইউনিটগুলোতে আগুনে পোড়া আর কত মানুষের সংখ্যা বাড়লে ২০ দলীয় জোটনেত্রীর আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছুবে- এ প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠে এসেছে শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়া আহূত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার পর। পুরো দেশের মাটি ও মানুষের গায়ে যখন দগদগে ঘা তখন তিনি তার যথারীতি স্বভাবসূলভ প্রক্রিয়ায় খোশমেজাজ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। তাঁর এ সাংবাদিক সম্মেলনের দিকে দৃষ্টি ছিল দেশের সকল মহলের। আশা করেছিলেন কাক্সিক্ষত যে কোন ঘোষণা। অর্থাৎ, আর অবরোধ নয়, আর হরতাল নয়, আর পেট্রোলবোমা নয়, আর মানুষের যানমাল নিয়ে কোন ছিনিমিনি খেলা নয়। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন পুরো উল্টো। তিনি চলমান এ এক অযৌক্তিক আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পরিণত করতে তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে উৎসুক মহলকে বিস্ময়ের অতল গহ্বরে নিপতিত করলেন। আশা-ভরসা সবই ধূলিসাত হয়ে গেল সাধারণ মানুষের। ব্যবসায়ী মহল একেবারে হতাশায় ডুবে গেলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে আরও অনিশ্চিত হয়ে গেল। অস্বাভাবিক পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার আশাটুকু একেবারে ধুলোয় মিশে গেল। বেগম জিয়ার অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচী চলতে থাকার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময় পর এ ধরনের ঘোষণা কাক্সিক্ষত ছিল না কারও। কারণ, কোন মহলই চায় না দেশ পিছিয়ে যাক। আন্দোলনের নামে মানুষের অকাল ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু আর দেখতে চাইছিল না কেউ। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের পর শুধু হতাশার চিত্রই ফুটে উঠল। তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য শুনে সর্বত্র শুধু হতাশাই ব্যক্ত হয়েছে। মানুষ দুঃখ পেয়েছে। বিরক্ত হয়েছে চরম। প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠেছে এভাবে কি সরকার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে কিনা। এ পথ ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কিনা। এ আন্দোলন গণতান্ত্রিক কিনা। এভাবে আরও দিনের পর দিন আন্দোলন চললেও সরকারকে টলানো যাবে কিনা। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যরাতো ভালই আছেন। কিন্তু বারটা নয়, তেরটা বেজে গেছে দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষের। সরকারের ক্ষতি হলে তা সরকার কিভাবে পুষিয়ে নেবে তা তাদের ব্যাপার। কিন্তু মানুষের ব্যক্তিগত ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কারও আছে কি। ২০ দলীয় জোটের এ আন্দোলন দু’মাস সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কি সফলতা বয়ে এনেছে। চট্টগ্রামের চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাল হোসেন জনকণ্ঠকে জানালেন, ২০ দলীয় জোটনেত্রীর বক্তব্যে তারা সম্পূর্ণ হতাশ। তারা আশা করেছিলেন বেগম জিয়া চলমান হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার পথ প্রশস্ত করবেন। কিন্তু তা না করে উল্টো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যা চরম দুর্ভাগ্যজনক। তার মতে, সাধারণ মানুষ চলমান এ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চায় বলে শুক্রবার এ সংবাদ সম্মেলনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়ার বক্তব্য শোনার পর তা রীতিমত বুকে শেল মারার মতো হয়েছে। বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যে যে বারটা বেজে গেছে তা ২০ দলীয় জোটনেত্রীর উর্বর মস্তিষ্কে জানা হয়েছে কিনা তা তাদের অজানা। ব্যাংক ঋণে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছে তাদের অনেকে ইতোমধ্যেই দেউলিয়া হওয়ার পথে বসেছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষ এক আতঙ্কময় জীবন অতিবাহিত করছে প্রতিদিন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন থমকে গেছে। সাধারণ মানুষের অনেকে বলেছেন, তারাতো কোন রাজনীতি করেন না। অথচ, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের নামে রাজনীতি করেন এবং সাধারণ মানুষকে গিনিপিকের মতো ব্যবহার করছেন। একের পর এক সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে। পেট্রোলবোমায় প্রাণহরণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের। যাদের সহায় সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, যারা স্বজন হারিয়েছে সে ক্ষতি কিভাবে ২০ দলীয় জোট বা এর নেত্রী পুষিয়ে দেবেনÑ তার কোন দিকনির্দেশনা না দিয়ে উল্টো তিনি আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতির কথা বললেন। সঙ্গত কারণে আলোচনায় উঠে এসেছে আর কত মানুষ পুড়লে, আর কত সহায় সম্পদ ধ্বংস হলে, আর কত দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অচল রাখা হলে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি লাভ করবে। শুক্রবার ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এতে চরম হতাশা ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ভোগ্যপণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের এসব নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার না করার ঘটনায় সর্বত্র চরম হতাশা নেমে এসেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে হরতাল অবরোধের কারণে দেশের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেচাকেনা নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয়েছে। অনেকের ব্যবসা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা আশা করেছিলেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। উল্টো তিনি তা অব্যাহত রাখার বক্তব্য দিয়েছেন। যা কোন অবস্থাতেই কোন মহলের কাম্য ছিল না। এ অবস্থায় হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচী প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়ার পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিদাতারা হলেন- খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী, সহ-সভাপতি মীর আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমদ রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জামাল হোসেন, বন্দর বিষয়ক সম্পাদক স.ম বখতেয়ার ও প্রচার সম্পাদক মনোরঞ্জন সাহা।
×