ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতে চীনা বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৪ মার্চ ২০১৫

বিদ্যুতে চীনা বিনিয়োগ

আধুনিক জীবনযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদ্যুত। দেশে জনচাহিদার অন্যতমও বিদ্যুত। অতীতে বহু সমস্যায় জর্জরিত ছিল বিদ্যুত খাতটি। নানা সময়ে দুর্নীতির কালো মেঘ ঢেকে রেখেছিল এই সেক্টরটি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে বিদ্যুত সেক্টরে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা। সরকারের জন্য বিদ্যুত একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। কারণ ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। সেই দুরবস্থা কাটিয়ে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা এখন ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি শুধু আনন্দেরই নয়, গর্ব করার মতোও। এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক কয়েকটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছে। প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও। চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের একটা ঘাটতি এখনও থেকে যাচ্ছে। তাই সরকার নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্যুতের উৎপাদনের ক্রম অগ্রসরমানতা বজায় রাখতে। রবিবার জনকণ্ঠে বিদ্যুত সম্পর্কে আরও একটি সুসংবাদ জানা গেল। এবার বিদ্যুত খাতে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা দুই লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। দেশটির এক ব্যাংক বিদ্যুত বিভাগের ১০ কোম্পানির ৬৫টি প্রকল্পে এই অর্থ ব্যয় করবে। এ ব্যাপারে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় চীনের ওই ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। জানা গেছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জিত হবে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন হবে ১৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, গ্যাস থেকে ৮ হাজার ৯৫৬ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার ২১৭ মেগাওয়াট, ডিজেল থেকে ৫০০ এবং পানি থেকে আরও ১০০ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য উৎস থেকে বাদবাকি বিদ্যুত আসবে। খবরটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। বিদ্যুত ছাড়া কোন দেশের সমৃদ্ধি অর্জন প্রায় অসম্ভব। কৃষি, শিল্প থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন সবই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণ বাড়াতে হবে। অতীতে বিশেষ করে ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বিদ্যুতের দাবিতে নাগরিকদের বিক্ষোভ করতে হয়েছে, রাজধানী ঢাকাও এই বিক্ষোভের বাইরে ছিল না। বিদ্যুতের অভাবে আবাসন ব্যবসা এবং শিল্প স্থাপনেও এসেছিল স্থবিরতা। চাষাবাদও বিঘিœত হতে দেখা গেছে। সে সময় কৃষক বিদ্যুত না পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এবং ঢাকার শ্যামপুরে যে ভয়াবহ জনবিস্ফোরণ ঘটেছিল, তাও কারও বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। এখন অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান সরকার বিদ্যুতের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সঙ্কট উত্তরণে সরকার স্বল্প, দীর্ঘ এবং ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রই শুধু চালু করেনি, বিদ্যুত আমদানিও করেছে। যেভাবে বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহারের ক্ষেত্র বাড়ছে, তাতে করে আগের সীমিত উৎপাদন ও ধীরলয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিস্থিতি এখন নেই। তাই বাড়াতে হবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা। জনগণের স্বার্থে এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্জ্য ও আবর্জনা থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত উপাদনের কথাও শোনা যায়, এই বিষয়গুলোতে নজর দেয়া উচিত। তবে বিদ্যুত এখনও পর্যন্ত ভর্তুকিমূলক একটি লোকসানি খাত। এর জন্য প্রতিটি বাজেটে প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান রাখতে হয়। অতীতে এই সেক্টরে নানা দুর্নীতির কথা শোনা যেত, এখন অবশ্য সে পরিস্থিতি নেই। তবে ‘সিস্টেম লস’ নামে এক ধরনের বিদ্যুত অপচয়ের কথা শোনা যায়, যা আসলে বহুলাংশে দুর্নীতিরই আরেক নাম। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে এগোতে পারলে বর্তমানে বিদ্যুতের এই সফলতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিদ্যুতের জন্য সরকার যে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে তাতে জনগণের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। কারণ মানুষ জানে অর্থনৈতিক ও জীবনমান উন্নয়নে বিদ্যুতের কোন বিকল্প নেই।
×