ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নিবন্ধন শুরু

বিদেশে চাকরি ॥ ঢাকা বিভাগে ৫ লাখের বেশি নারী কর্মী নিবন্ধিত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৩ মার্চ ২০১৫

বিদেশে চাকরি ॥ ঢাকা বিভাগে ৫ লাখের বেশি নারী কর্মী নিবন্ধিত

ফিরোজ মান্না ॥ বিদেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক পাঁচ লাখেরও বেশি নারী কর্মী নিবন্ধিত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত বুধবার ছিল এ বিভাগের নিবন্ধন কার্যক্রমের শেষ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে চলছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নিবন্ধন কাজ। এ দুই বিভাগের নিবন্ধন চলবে ১৬ মার্চ পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগে নিবন্ধন কার্যক্রম ২৮ মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে বিএমইটি সূত্র। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক নারী কর্মীদের নিবন্ধন প্রতিদিন সকাল নয়টায় শুরু হয়ে শেষ হবে বিকেল পাঁচটায়। গত বুধবার ঢাকা বিভাগের নারী কর্মীদের নাম নিবন্ধন হয়েছে। এরপর বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর আর কোন সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএমইটি। সৌদিতে কর্মী নিয়োগের চুক্তি হওয়ার পর নিবন্ধন নিয়ে সারাদেশে হট্টগোল হওয়ার কারণে এ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। সূত্র জানিয়েছে, ৫ মার্চ থেকে ১১ মার্চ বুধবার পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় ছিল ঢাকা বিভাগে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫ লাখেরও বেশি নারী কর্মী নিবন্ধিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে নিবন্ধনের কাজ চলবে। ঢাকায় নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খোলা হয়েছিল ডিজিটাল সেন্টার। সেন্টারে গিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ নিবন্ধন করতে পেরেছেন। যে নারী বিদেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক তার বয়সসীমা ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এর কম বা বেশি হলে তিনি নিবন্ধন থেকে বাদ পড়েছেন। এবার নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় নিবন্ধন নিযে কোন প্রকার প্রশ্ন তুলতে পারেনি কেউ। নিবন্ধনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। এই টাকার মধ্যে সরকারী ফি ২০০ টাকা এবং নিবন্ধন ফরম পূরণ বাবদ ১০০ টাকা। নিবন্ধন করতে লাগবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। জন্মনিবন্ধনে যে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে পাসপোর্টেও থাকতে হবে হুবহু সেই নাম-ঠিকানা। শিক্ষাগত যোগ্যতার একসেট ফটোকপি সনদপত্র (যদি থাকে), প্রশিক্ষণের সনদ (যদি থাকে), অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) লাগবে। এছাড়া লাগবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র অথবা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দেয়া কর্মীর চারিত্রিক সনদপত্র। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই নিবন্ধন চলবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নিবন্ধন হবে আগামী ১২ থেকে ১৬ মার্চ। ১৭ থেকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ২৪ থেকে ২৮ মার্চ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে নিবন্ধন হবে। এছাড়াও ঢাকার বাইরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নগর ডিজিটাল সেন্টার এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে নিবন্ধন করা যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের নাম নিবন্ধনে নিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ছিল। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি কর্মীর নাম নিবন্ধনে এক থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি নিয়েছে নিবন্ধন কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল চক্র। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, তাদের বাড়তি টাকা না দিলে নাম নিবন্ধন করতে পারতেন না কোন কর্মী। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। সৌদিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছিল গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ নারী পুরুষ নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রতি কর্মীকেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এবার নারী কর্মী নিবন্ধনের বিষয়ে জানার জন্য বিএমইটির ডিজির সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে নিবন্ধন নিয়ে অভিযোগ উঠায় এবার ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যদি এই টাকার চেয়ে এক টাকা বেশি নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই সময় সারাদেশে ১৫ লাখের বেশি কর্মী সৌদি যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি প্রতিনিধিদল ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। তার আগের দিন থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন করা শুরু করে বিএমইটি। প্রথমে নাম নিবন্ধনের জন্য চার দিন সময় ঠিক করা হয়। কর্মী সংখ্যা ব্যাপক হওয়াতে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিবন্ধনের শেষ দিনে ভিড় সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ব্যবসার সুযোগ নেয়। প্রতি কর্মীর নাম নিবন্ধনের জন্য একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি নিয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ শুরু করেন। যারা বাড়তি টাকা দেন তাদের আর কোন বেগ পেতে হয়নি। একপর্যায়ে নিবন্ধন ফরম শেষ হয়ে গেলে ওই ফরম ফটোকপি করে বিক্রি করা শুরু হয়। প্রতিটি ফরম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা শুরু করে। এই টাকাও কর্মীদের বাড়তি দিতে হচ্ছে। বিনামূল্যে নিবন্ধন ফরম ফটোকপি করে ফরম বিক্রি করেছে। অতিরিক্ত মূল্যে নিবন্ধন ফরমের ফটোকপি বিক্রির টাকা বিএমইটি উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে পিয়ন দারোয়ানের হাতে গিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও এই সুযোগে ভালই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। পরে মন্ত্রণালয় নাম নিবন্ধনের শেষ দিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো থেকেও বিদেশে যেতে ইচ্ছে করা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ঢাকা ও জেলা শহরে আসতে হবে না। এ ঘোষণার পর ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে নিবন্ধনে আগ্রহীদের ভিড় কমে যায়। এর আগে নাম নিবন্ধনের জন্য দেশের কয়েকটি এলাকায় ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ভবনেও হট্টগোল হয়েছে।
×