ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রইল বাকি এক ‘ল্যান্ড’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ মার্চ ২০১৫

রইল বাকি এক ‘ল্যান্ড’

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপের গত আসরে ২০১১ সালে গ্রুপ পর্বে তিন ‘ল্যান্ড’কে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও সেই তিন ‘ল্যান্ড’কে হারানোর পুনরাবৃত্তির অপেক্ষাই এখন। আয়ারল্যান্ডের পর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হল্যান্ডকেও ২০১১ সালে বধ করেছিল বাংলাদেশ। এবারও বাংলাদেশের সামনে গ্রুপ পর্বে তিন ‘ল্যান্ড’ই পড়েছে। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ডের পর নিউজিল্যান্ড। স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। এবার বাংলাদেশের সামনে আছে নিউজিল্যান্ড। এই নিউজিল্যান্ডকেই এখন হারানোর অপেক্ষা। হারাতে পারলেই ২০১১ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে যাবে। আবারও বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিন ‘ল্যান্ড’কে হারাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেই তিন ‘ল্যান্ড’ বধের অপেক্ষার ম্যাচ খেলতে নামবে শুক্রবার। শুধু আজকের দিনটিই বাকি। শুক্রবার সকাল সাতটায় হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাকবে ‘এ’ গ্রুপের সেরা দল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ড। দুই দলেরই গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ হবে এটি। ম্যাচটিতে জিততে পারলেই আবার গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে যাবে বাংলাদেশ। আর যদি শনিবার কোনভাবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া, কোন অঘটন ঘটে; তাহলে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানেই উঠে যাবে বাংলাদেশ! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে বাংলাদেশের জেতা কঠিনই ধরে নিতে হচ্ছে। তাই যদি হয় তাহলে গ্রুপ ‘এ’ থেকে পয়েন্ট তালিকায় নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশের অবস্থান হবে। গ্রুপ পর্বে চতুর্থ হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। তখন ‘বি’ গ্রুপের সেরা দল ভারতের বিপক্ষেই নকআউট পর্বে বাংলাদেশকে লড়াই করতে হবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যদি নিউজিল্যান্ড যদি জিতে যায়, তাহলে প্রথমবারের মতো আবার কিউইরা গ্রুপ পর্ব থেকে অপরাজিত হয়ে পরের পর্বে খেলবে! এর আগে কখনই যে রেকর্ড গড়তে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ১৯৭৫ সাল থেকেই বিশ্বকাপ খেলছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের ১১তম আসর চলছে। প্রতিটি আসরেই অংশ নিয়েছে কিউইরা। সেই শুরু থেকেই গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচে হার হলেও আছে নিউজিল্যান্ডের। এর মধ্যে কখনই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি দলটি। ১৯৯২ সালে নিজ মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপসহ মোট ৬ বার খেলেছে সেমিফাইনালে (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১১)। ১৯৮৩, ১৯৮৭ সালে তো গ্রুপ পর্বই অতিক্রম করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ২০০৩ সালে গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করে সুপারসিক্সে পঞ্চম দলটি হয়েছে নিউজিল্যান্ড। সেরা চার দলের একটি না হতে পারায় সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি কিউইরা। এবারও তাদের দেশেই হচ্ছে খেলা। সঙ্গে আগেরমতোই যৌথ আয়োজক হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এবার নিউজিল্যান্ড দলটিকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। দলটি এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছে। দুর্দান্ত খেলছে। শিরোপার দাবিদারও দলটি। তবে কথায় আছে, উড়ন্ত দল কখন কখন এমনও জায়গায় ধরা খায়, যেই জায়গা নিয়ে খুব বেশি ভাবনার ছিল না। বাংলাদেশই তাহলে সেই দল নাকি! যদি ১৯৯২ সালের স্মৃতি ধরা দেয় তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে তো বাংলাদেশেরই জেতার কথা! ’৯২ সালে গ্রুপ পর্বে ৯ দল খেলেছে। গ্রুপ পর্ব থেকে সরাসরি সেমিফাইনাল হয়েছে। গ্রুপ পর্বের পয়েন্ট তালিকার সেরা চার দল খেলেছে সেমিফাইনালে। নিউজিল্যান্ড গ্রুপ পর্বে টানা ৭ ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচটিতে এসে পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল। এরপর তো সেমিফাইনালেও এই পাকিস্তানের কাছে হেরেই বিদায় নেয় নিউজিল্যান্ড! যদি ২০১১ সাল ও ১৯৯২ সালের স্মৃতি ধরা দেয় তাহলেও তো হয়। বাংলাদেশ জিতে যায়। সেই সঙ্গে তিন ‘ল্যান্ড’কে এবারও হারানোর স্মৃতিই আবারও জেগে যায়। পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটে যায়। বাংলাদেশ পারবে তা ঘটাতে? বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাস চোখ রাঙ্গাচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলে। এবার নিয়ে পাঁচবার খেলা হচ্ছে। ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০১১ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাস বলছে, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ছাড়া প্রতিবারই (১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০০৭ সালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়) অন্তত একটি বড় দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেই ‘কোঠা’ পূরণ হয়ে গেছে। তবে ২০০৭ সালের স্মৃতি যদি আবার ধরা দেয়। সেই আসরে ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দুটি বড় দলকে হারিয়েছে। যখন বাংলাদেশ দল, দলের ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকে, তখন যে কোন দলকেই, যত শক্তিমত্তায় ভরপুর দলই থাকুক; হারানোর ক্ষমতা রাখে। যেমনটি ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল। কে জানে এবার সেই স্মৃতি ধরা দেবে না। আরেকটি শক্তিশালী দলকে (নিউজিল্যান্ডকে) হারিয়ে দেবে না বাংলাদেশ। যদি জিতে যায় বাংলাদেশ তাহলেই তো তিন ‘ল্যান্ড’কে আবারও হারানোর ২০১১ সালের স্মৃতিরই পুনরাবৃত্তি ঘটে যাবে। সেই অপেক্ষাই এখন।
×