ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

খালেদার গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ মার্চ ২০১৫

খালেদার গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট থানায় আদালতের গ্রেফতারি ও তল্লাশি পরোয়ানা পৌঁছামাত্রই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার এবং তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশির আদেশ পালন করা হবে। দেশের কেউ আইনের উর্ধে নয়। যারা নিষ্ঠুরভাবে এত মানুষকে হত্যা করেছে, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। এটা শুধু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে, আইন অনুযায়ী সকল হত্যাকা-ের বিচার করা হবে। দেশের মানুষ ঘৃণাভরে বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে বহু আগেই জনগণ তাঁকে (খালেদা জিয়া) গুলশানের কার্যালয় থেকে বের করে দিত। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে পুনর্বার সন্ত্রাস-নাশকতাকারী ও জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রী বাড়ি ছেড়ে কেন কার্যালয়ে গিয়ে বসে আছেন সেটাই রহস্য। তিনি এখন আর রাজনৈতিক নেত্রী নন, জঙ্গীবাদী নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। দেশে জঙ্গীবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে উনি জঙ্গী-সন্ত্রাসীমূলক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন সুস্থ মানুষ দেশের মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে না। নিজের মৃত পুত্রের প্রতিও যাঁর দরদ নেই, সেই নেত্রীর কাছ থেকে দেশবাসী কী আশা করতে পারে? তাই গুলশান থানায় তল্লাশি পরোয়ানা পৌঁছলেই ওই কার্যালয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি চালাবে, গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে প্রশ্নোত্তরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যাওয়ায় দলের সকল খেলোয়াড়, ম্যানেজার, কোচসহ সংশ্লিষ্টদের সকল এমপিদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। দেশবাসীর কাছে বাংলাদেশ দলের জন্য দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করবেন, যাতে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা সেমিফাইনালে যেতে পারে। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমি আশাবাদী বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটেও বিশ্বকাপ জিতবে। সরকারী দলের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশে আইনের কোন অভাব নেই। একাধিক ট্রাইব্যুনালও রয়েছে। তবে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যারা এভাবে মানুষ হত্যা করছে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এটা জনগণেরও দাবি। জনগণও তা চায়। শফিকুল ইসলাম শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করছি। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সাইকেল বোমা, পেট্রোলবোমা বানিয়ে মানুষ মারার জঙ্গীবাদী শিক্ষা দিচ্ছেন। এসব করে উনি বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, এই জঙ্গী ও সন্ত্রাসী নেত্রীর চেহারা (খালেদা জিয়া) শুধু দেশেই নয়, বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে। উনি এতদিন বসে ছিলেন কেউ এসে ক্ষমতার দুয়ার খুলে তাঁকে নিয়ে গিয়ে বসাবেন, কিন্তু কেউ আসেনি। যেসব বিদেশীদের দিকে উনি চেয়েছিলেন, তাঁরাও এসব জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। তাই এখন বিএনপি নেত্রীর পাশে কেউ নেই। জাতীয় পার্টির শওকত চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারাই বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করুন, বারে বারে হরতাল-অবরোধ ডেকে কী লাভ, একবারে ডাকলেই তো হয়। তবে দেশের জনগণ আর বিএনপি নেত্রীর হরতাল-অবরোধ মানছেন না। তবে দেশবাসীকে আরও সজাগ ও সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এখন তো আর আন্দোলন নেই, চোরাগোপ্তা হামলা ও বোমা হামলা করা হচ্ছে। এটাও যাতে করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন জনগণ নাশকতাকারী-জঙ্গীদের ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গীবাদ-নাশকতা দমনে সরকারী অভিযান অব্যাহত থাকবে, আদালতের নির্দেশ মতো সরকার কাজ করে যাবে। নুর জাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার থেকে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, তা সবই নেবে। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মাঠে মেনেছে। বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে গণহত্যার মতো কাজ করেই যাচ্ছেন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় কে কে এসব ঘৃণ্য কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জানান, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এ ব্যাপারে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন। তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়ালের মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যে সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া নিরাপরাধ, সাধারণ নারী পুরুষকে পুড়িয়ে মারছে। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছে, তা সবই নিজের ও পুত্রের জন্য। সেখানে দেশের মানুষের কোন দাবি নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬৪ দিনের হরতাল-অবরোধে পেটের তাগিদে কাজে বের হয়ে ১১৯ জন মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে। এর অধিকাংশই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। পেট্রোলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এ কয়দিনে ২ হাজারের অধিক যানবাহনে আগুনে পুড়ে ও ভাংচুর করা হয়েছে, ৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ৩৪ দফায় ট্রেনে নাশকতা হয়েছে। তিনি বলেন, এ নৈরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেয়া যায় না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। প্রয়োজনে তারা আরও কঠোর হবে। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা অনেক কমে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে দূরবর্তী এলাকার বাস কিছুটা কম চলছে। বর্তমানে হরতাল অবরোধের মধ্যেও ঢাকাবাসীকে প্রচ- যানজটে পড়তে হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী যে দাবি-দায়া দিয়েছে তার সবই নিজের ও পুত্রের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তার কোন চিন্তাও নেই, দাবিও নেই। তাই জনগণ এখন তাঁকে একেবারেই সমর্থন করে না বরং জনগণ তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর এসব কর্মকা-ের কারণে তাঁর দলের নেতাকর্মীরাও তাঁর সঙ্গে নেই। তারপরও বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামূলক কাজ করছেন। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করছেন। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি জামায়াত নেত্রী আইন মানেন না। কোর্ট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোন নাগরিক দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আত্মসমর্পণ করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সঙ্গে কোর্টের আদেশ মান্য করবেন- এটাই সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু খালেদা জিয়া কোর্টে আত্মসমর্পণ না করে অত্যন্ত খারাপ নজির সৃষ্টি করেছেন। এজন্য আমি বলতে চাই, আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলবে, আর আইনকে সমুন্নত রাখাই সরকারের দায়িত্ব। এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিপূর্ণ অঞ্চল ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়তে বঙ্গবন্ধুর প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর প্রতি বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করে থাকে। জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করেই আমি ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি নতুনতর বিশ্বশান্তির মডেল উপস্থাপন করেছি। তিনি জানান, ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে এই মডেলটি একটি নতুন রেজুলেশন আকারে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এই রেজুলেশনে মডেলটির রূপকার হিসেবে আমাকে প্রদত্ত স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ এওয়ার্ড বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয় বরং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি অগ্রণী রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত লাভ করেছে। দক্ষিণ এশিয়াকে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমদানি-রফতানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ॥ সরকারী দলের অপর সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের আমদানি ও রফতানির পরিমাণ দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। তিনি জানান, বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও সুসংহত করার জন্য বর্তমান সরকার ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ এবং ‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর’ নামে দুটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
×