ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নয়

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১২ মার্চ ২০১৫

বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নয়

শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর নামে শিক্ষাকে সঙ্কটের পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বাস্তবতা বিবর্জিত নানান ধাঁচের পদ্ধতি চালু করার নামে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে কী ফলোদয় হয়, তা তাঁরাই জানেন, যাঁরা নানা কিসিমের পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেন। দেখা গেছে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে কোচিং সেন্টারের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ বাড়ানো হয়েছে। আর এই কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা নাচ-গান ও চারুকলা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের সুকুমারবৃত্তি বিকাশের পথ এভাবে রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এখন আবার নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার পথকে বিপর্যস্ত করে তোলার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় ফেল করলেও ক্লাসে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ উপস্থিত থাকলেই দেয়া যাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, যা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের কাছে। অবস্থা এমন যে, পড়ালেখা বাদ দিয়ে কোনমতে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দিলেই চলবে। মন্ত্রণালয় সর্বশেষ যে পরিপত্র জারি করেছেন, তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সঙ্কটে ফেলতে সহায়ক যেমন হবে, তেমনি অর্ধশিক্ষিত, কুশিক্ষিত জনসংখ্যার হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। বলা হচ্ছে, কোন কোন বিদ্যালয় শতভাগ পাস কিংবা ভাল ফল দেখানোর জন্য টেস্ট পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার অজুহাতে পরীক্ষার্থী ছাঁটাই করে। অপরদিকে অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন অযাচিত ঘটনার জন্য কিছু শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সরকারের কাম্য নয়। যুক্তিটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন? এতে পাবলিক পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী পরীক্ষা পুরোপুরি গুরুত্বহীন করে দেয়া হচ্ছে না তো? যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই পদ্ধতিকে আকস্মিকভাবে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে এক নতুন বাণিজ্য শুরু হতে পারে। কোনভাবে ক্লাসে উপস্থিতি দেখাতে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষা বাণিজ্য চালু হতে পারে। এমনিতে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে অনেক স্থানে টাকা নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার অলিখিত বিধান চালু রয়েছে বহুকাল ধরেই। তাই এখনকার এই সিদ্ধান্ত যে শিক্ষার্থীদের পাঠবিমুখ করে তুলবে, তা বলাই বাহুল্য। টেস্ট পরীক্ষাকে ঘিরে পরীক্ষার্থীরা যে পরিমাণ পড়াশোনা করত, তা আর করতে হবে না। ফলে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে বাধ্য। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া মন্ত্রণালয় যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা শিক্ষার ক্ষতি করা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই বিষয়টি সুবিবেচনার দাবি রাখে। শিক্ষার স্বার্থে এটা খুবই জরুরী। কোনভাবেই বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
×