ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাইগারদের লক্ষ্য এবার নিউজিল্যান্ড বধ, কিউইদের হারাতে পারলে শেষ আটে ভারতকে এড়ানো সম্ভব

আমাদের শক্তি ‘টিম স্পিরিট’ ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ মার্চ ২০১৫

আমাদের শক্তি ‘টিম স্পিরিট’ ॥ মাশরাফি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্বপ্নটা এখন আরেকটু বেড়েছে। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নির্বিঘেœ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে টাইগাররা। এবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড বধের পালা। মাঝে সময় মাত্র তিনদিন। অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেড থেকে মঙ্গলবারই নিউজিল্যান্ড পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ দল। এবার হ্যামিল্টনে চলতি বিশ্বকাপ আয়োজক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। তাদের হারাতে পারলে বাংলাদেশের জন্য শেষ আটে ভারতকে এড়ানো সম্ভব হবে। কারণ নিশ্চিত হয়ে গেছে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে থেকেই শেষ করছে ভারতীয় দল। কিউইদের হারাতে পারলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হিসেবে ‘বি’ গ্রুপের সম্ভাব্য রানার্সআপ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের। তবে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার দাবি, দলের মূল শক্তি ক্রিকেটারদের দারুণ ধারাবাহিকতা। মাশরাফির কথা সত্য হলে এই ধারাবাহিকতার রেশেই কিউইদের পরাস্ত করা সম্ভব হবে এমন স্বপ্ন এখন দেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। এখন পর্যন্ত অপরাজিত কিউইদের বিরুদ্ধে লড়াইটা বেশ কঠিন। শীর্ষস্থানে আছে তারা টানা ৫ ম্যাচ জিতে। এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপটা অবশ্য একেবারে খারাপ যায়নি বাংলাদেশেরও। ৫ ম্যাচে মাত্র একটি পরাজয় দেখা টাইগাররা তিন ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বাড়তি ১ পয়েন্ট পাওয়াটা সুখকর হয়েছে টাইগারদের জন্য। তবে ওই ১ পয়েন্ট প্রকৃতির আশীর্বাদে পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে এমন বলার আর কোন সুযোগ নেই। কারণ অসিদের কাছে হারলেও এখন তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ঠিকই বাংলাদেশ দল শেষ আটে উঠে যেত। ছিটকে পড়া ইংল্যান্ড ৫ ম্যাচ থেকে মাত্র ১ জয় পাওয়ার কারণে শেষ ম্যাচ জিতলেও তাদের কোন সম্ভাবনাই ছিল না গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করার। একই কারণে সম্ভাবনা শেষ আরব আমিরাত ও স্কটল্যান্ডেরও। যোগ্যতম ও বিজয়ী দল হিসেবেই প্রয়োজনীয় পয়েন্ট সংগ্রহ করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। মহা উত্তেজনা ও স্নায়ুচাপের ম্যাচেও ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে দিয়ে তা নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। সে কারণে এখন বাংলাদেশ দল যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে ৯ পয়েন্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আর শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেও ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ অবস্থান পাবে শ্রীলঙ্কা। সেক্ষেত্রে শেষ আটে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের প্রতিপক্ষ লঙ্কানরা এবং বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ প্রোটিয়া শিবির হবে। টানা ৫ ম্যাচে প্রতিপক্ষদের নাস্তানাবুদ করা ভারতকে এড়ানোর জন্য এখন তাই কিউই বধের স্বপ্ন। গ্রুপের শেষ ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাঠে বরাবরই দুর্দান্ত ব্ল্যাক ক্যাপস শিবির। এবার বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে অন্যতম ফেবারিটরা সেটা প্রমাণ করে যাচ্ছে শুরু থেকেই। আরেক আয়োজক এবং চলতি আসরের হট ফেবারিট চারবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াসহ শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, জিম্বাবুইয়ে ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে তারা। তবে খারাপ দিনটা আসেনি এখনও তাদের। ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও কেন উইলিয়ামসনে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল দলটি সেটা বোঝা গেছে অস্ট্রেলিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ঘোর বিপর্যয়ে পড়ার মধ্য দিয়েই। তাই তাদের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই সম্ভব। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু সর্বশেষ ৭ ম্যাচ মোকাবেলার ইতিহাসটা বেশ মধুর বাংলাদেশের জন্য। টানা দু’বার হোম সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ৪-০ এবং ২০১৩ সালের নবেম্বরে ৩-০। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় এবং পুরনো সেই স্মৃতিগুলোয় এখন বড় অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে আত্মবিশ্বাসী টাইগারদের। কিউইদের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা না থাকলেও ভয়ঙ্কর পেস বোলিং আক্রমণটা ইতোমধ্যেই জানান দিয়েছেÑ যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তাদের পেসাররাই। দলের ক্রিকেটাররা জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন নিজেদের। গোটা বছরটা চরম ব্যর্থতা কাটিয়ে আবার দলের ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে হয়ে উঠেছেন ধারাবাহিক। আর এটাই দলগত সাফল্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। দুর্ধর্ষ কিউই পেস বিভাগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতাই বড় শক্তি হতে পারে। দারুণ ফর্মে আছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে যাওয়া মুশফিকুর রহীম (৫ ম্যাচে ২৫৬ রান), বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তরুণ উদীয়মান টপঅর্ডার সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান। দারুণ বোলিং করছেন পেসার রুবেল হোসেন ও অধিনায়ক মাশরাফি। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বোলিং করে দলকে জিতিয়ে এখন জাতীয় বীর হয়ে উঠেছেন রুবেল। আর এ ধারাবাহিকতাই সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্ত পয়েন্ট। এ বিষয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘মুশফিক কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রায় ম্যাচেই ভাল ব্যাটিং করেছে। দলও এমনটাই চায় তাঁর কাছে। তিনি সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। আশা করছি পরবর্তী ম্যাচে (নিউজিল্যান্ড) সে সেঞ্চুরি পেয়ে যাবে। মাহমুদুল্লাহ খুব কঠোর পরিশ্রম করে। তাঁর মনোসংযোগের পর্যায়টা খুব ভাল। আমার মনে হয় কঠোর শ্রমের জন্যই সে সফল হচ্ছে। সৌম্য খুব পরিণত ব্যাটসম্যানের মতো নিজেকে প্রমাণ করেছে। আমি নিশ্চিত পরবর্তী সময়ে সে আরও বড় স্কোর করবে। উইকেট পাওয়া বোলারদের জন্য ভাগ্যের একটা বিষয়। কিন্তু রুবেলের ভিন্নধর্মী বডি ল্যাঙ্গুয়েজ জানিয়ে দিচ্ছিল সে তা দখল করতে সক্ষম। ক্রিকেটারদের এই ধারাবাহিকতাই আমাদের এখন শক্ত পয়েন্ট।’ মাশরাফির কথা অনুসারে এই শক্ত পয়েন্ট দিয়েই নিউজিল্যান্ডকে পরবর্তী ম্যাচে ঘায়েল করতে হবে।
×