ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ো সেঞ্চুরি, শ্রীলঙ্কার হার ৬৪ রানে

কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ মার্চ ২০১৫

কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৪ রানের বড় জয় পেল বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ো সেঞ্চুরির সৌজন্যে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৭৬ রানের পাহাড় গড়ে অসিরা। জবাবে কুমার সাঙ্গাকারার কীর্তিময় সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ৪৬.২ ওভারে ৩১২ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। পঞ্চম খেলায় তৃতীয় জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘এ’এর দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে হার সত্ত্বেও সমান জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কা। দুটি দল কোয়ার্টার ফাইনালের রেসে রয়েছে ভালমতোই। ফল দেখে মনে হবে একতরফা ম্যাচে সহজ জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বোলারদের হতাশার মাঝে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন দু’দলের ব্যাটসম্যনরা। যার শুরুটা করেন ম্যাক্সওয়েল-মাইকেল ক্লার্ক, শেষে চমৎকার রং ছড়িয়েও হার বরণ করতে হয় সাঙ্গাকারা-তিলকারতেœ দিলশানদের। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া অস্ট্রেলিয়া দলীয় ৪১ রানে দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (৯) ও এ্যারন ফিঞ্চকে (২৪) হারিয়ে চাপে পড়ে। এরপর টপ-অর্ডারে বিস্ফোরণ। তৃতীয় উইকেটে ক্লার্ক-স্টিভেন স্মিথ ১৩৪ রান যোগ করে দলকে বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেন। স্মিথ ফেরেন ৭২ রানে। তার আগে অবশ্য ৬৮ রান করে প্যাভিলিয়নমুখী হন অধিনায়ক ক্লার্ক। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ১৩.৪ ওভারে ১৬০ রান যোগ করে বড় ঝড়টা তোলেন ম্যাক্সওয়েল-শেন ওয়াটসন জুটি। মাত্র ৫৩ বলে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ১০২ রান করে থিসারা পেরেরার বলে লাসিথ মালিঙ্গার হাতে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাক্সওয়েল। সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৫১ বলে। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডের পথে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে (৫২ বলে) পেছনে ফেলেন তিনি। সর্বোপরি বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনের (২০১১ সালে, ৫০ বলে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পথে আরও একাধিক অর্জনে নাম লেখান ২৬ বছর বয়সী হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। ওয়ানডেতে কোন অস্ট্রেলিয়ানের দ্রুততম সেঞ্চুরি এটিই। আগেরটি ছিল জেমস ফকনারের, ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরে ভারতের বিপক্ষে ৫৭ বলে। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা ম্যাক্স হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৬ বলে। ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রানে ফেরেন শেন ওয়াটসন। ৪১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রান করে আউট হন এ তারকা অলরাউন্ডার। আট নম্বরে নামা ব্র্যাড হ্যাডিন ৯ বলে ২৫ রান করলেও শেষদিকে প্রত্যাশিত রান তুলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া! তবে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সপ্তম সর্বাধিক দলীয় রান তুলে জয়ের পথ ঠিকই তৈরি করে নেয় ক্লার্কের দল। শ্রীলঙ্কার হয়ে লাসিথ মালিঙ্গা ও থিসারা পেরেরা প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট। দলীয় ৫ রানে ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নেকে হারালেও জবাবটা মন্দ দেয়নি লঙ্কানরা। সাঙ্গাকারার সেঞ্চুরি, দিলশান (৬০ বলে ৬২) ও দিনেশ চান্দিমালের (২৪ বলে ৫২, রিটায়ার্ড হার্ট) দুটি হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৪৬.২ ওভারে ৩১২ রান তুলে অসিদের চোখ রাঙাচ্ছিল তারা। বিশ্বকাপে জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানের ইনিংস এটি। সর্বোচ্চ ৩২৬/১০Ñ আগের দিনই আয়ারল্যান্ডের কাছে ৫ রানে হারা ম্যাচে করেছিল জিম্বাবুইয়ে! ১০৭ বলে ১১ চারের সাহায্যে ১০৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাঙ্গাকারা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে ইতিহাসে প্রথম কোন ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়েন ৩৭ বছর বয়সী লঙ্কান হিরো। ৪০২তম ওয়ানডেতে এটি তার ২৪ নম্বর সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপে চতুর্থ। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১০৫ ও ১১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন সাঙ্গাকারা। এর আগে বিশ্বকাপের এক আসরে ৩টি করে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব ছিল সাবেক ভারতীয় সৌরভ গাঙ্গুলী এবং অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ ও ম্যাথু হেইডেনের। কেবল তাই নয়, কালকের সেঞ্চুরি ইনিংসের মধ্য দিয়ে শচীন টেন্ডুলকরের পর মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ১৪ হাজারের বেশি রান করেন ‘সুপার সাঙ্গা’। ৩৯ রান করেই ১৪ হাজারী ক্লাবে নাম লেখান তিনি। সাঙ্গাকারার মোট রান এখন ১৪ হাজার ৬৫, শচীনের ১৮ হাজার ৪২৬। ও হ্যাঁ, বিশেষ কারণে দিলশানের কথাও বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ষষ্ঠ ও পেসার মিচেল জনসনের তৃতীয় ওভারের ৬ বলে ৬টি চার মেরে অনন্য নজির স্থাপন করেন লঙ্কান এ মারকাটারি ওপেনার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জেমস ফকনার ৩টি ও ২টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও মিচেল জনসন।
×