ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ জিতলেই কো. ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ মার্চ ২০১৫

আজ জিতলেই কো. ফাইনালে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ঝামেলার কোন সমীকরণ নেই। কোনভাবে পয়েন্ট পেলেই হলো। ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যাবে। আর জিতলে তো কথাই নেই। হাসতে হাসতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। সেই নক আউট পর্বে ওঠার ম্যাচই আজ বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ম্যাচটি এ্যাডিলেডে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে। ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটি ‘মরণপণ’ লড়াই। বাংলাদেশের জন্যও তাই। তবে এ ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ থাকবে। যদি গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড জিতলেও গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকেও হারাতে হবে। ইংল্যান্ড যদি বাংলাদেশ, আফগানিস্তানকে হারায় আর বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় তাহলেও বাংলাদেশই খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালে। যেহেতু শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড খেলবে দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটিই ইংল্যান্ডের শেষ সুযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সমীকরণ নিয়ে এত ভাবছেন না। সব ভাবনা আনন্দ-উপভোগ করে খেলার। মাশরাফিই যেমন বলেছেন, ‘যে সমীকরণ আমরা টুর্নামেন্টে শুরুর আগে জানতাম সেটাই কিন্তু এখন আমাদের সামনে এসেছে। এখন সব কিছুই নির্ভর করে আমরা কেমন খেলব তার ওপর। আমাদের সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী নতুন এ চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য। অবশ্যই চাপ কিছুটা থাকবে। এটা স্বাভাবিকভাবেই থাকে। প্রায় ১৬ কোটি মানুষ দেশে অপেক্ষা করছে, এখানেও সবাই অপেক্ষা করছে ভাল কিছু দেখার জন্য। এখানে চাপটা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই চাপ থেকে বের হয়ে ভাল কিছু করার মাঝেই আনন্দ। আমার বিশ্বাস সবাই এই আনন্দটুকু পেতে চাচ্ছে। সবাইকে আনন্দ দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব আমরা।’ ওপেনার এনামুল হক বিজয় ইনজুরির জন্য বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছেন। তাঁর স্থানে ইমরুল কায়েসকে নেয়া হয়েছে। ভাগ্য কী সুপ্রসন্ন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে যে বাংলাদেশ জিতেছে, ইমরুলের ব্যাটিং নৈপুণ্যেই জয় ধরা দিয়েছে। এবারও ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ইমরুল দলে আছেন। তাহলে কি ইমরুল খেলবেন? মাশরাফি বলেছেন, ‘সময়, উইকেট, দলের কম্বিনেশন বিবেচনা করে মূল দলটা নির্বাচন করা হয়। মাঝে মাঝে আমারও মনে হয়েছে একটা স্পিনার খেলালে হয়ত ভাল হতো। আবার সব কিছু ব্যালেন্স করেও খেলতে হয়। কারণ কন্ডিশনটা সব সময় মানিয়ে নেয়া যায় না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য স্পিনার খেলানোর সুযোগ আছে। আমি মনে করি ইংল্যান্ডের জন্য সুবিধা না হয়, এমন একটা দলই খেলানো হবে।’ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, স্পিনার একজন খেলালে ইমরুলের জায়গা নাও হতে পারে। এ্যাডিলেডে খেলা। ফ্ল্যাট উইকেট। বড় মাঠ। তবে রানও হয় প্রচুর। মাশরাফি উইকেট নিয়ে বললেন, ‘উইকেট ফ্ল্যাট। প্রচুর রান হবে এই উইকেটে। আমার বিশ্বাস আমরাও রান করতে পারব। আমরা ৩১৮ রান চেজ করে জিতেছি। যাদের বিপক্ষেই করি না কেন ৩০০ প্লাস রান চেজ করা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। হয়ত ওদের সঙ্গে এই রান চেজ করা একটু কঠিন হবে। তারপরও আমার মনে হয়, এখানে ২৭০-২৮০ ভাল স্কোর হবে। আমাদের ব্যাটসম্যান যারা আছে তারা সবাই আত্মবিশ্বাসী, সবাই রান করেছে। সাকিব-মুশফিক ২ জনই রানের ভেতর ছিল। তামিম ফর্মে ফিরেছে। বোলিংয়ের কথা বললে বলব ছোটখাটো ভুল কিছু হয়েছে শেষ ম্যাচে। আশা করি সোমবার ম্যাচে বোলাররা তাদের কাজগুলো ভালভাবেই শেষ করবে।’ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে বাংলাদেশের চেয়ে ইংল্যান্ডই বেশি চাপে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। ‘মাস্ট উইন গেম’ ইংলিশদের জন্য। এমন ম্যাচে তাহলে সুবিধা পাবে বাংলাদেশই? মাশরাফি বলেছেন, ‘সবাই সবার কঠিন সময় থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে। ছোট দলের বিপক্ষে খেলার সময় একটা চাপ তৈরি হয় এটাই স্বাভাবিক। এখন আমরা যদি এই সুযোগ নিতে পারি, দ্রুত সুযোগগুলো তৈরি করতে পারি। তবে এটা আমাদের সাহায্য করবে।’ মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলে ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশ। বড় মাঠে বড় দলের বিপক্ষে এবার আবারও খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এমসিজিতে বড় মাঠে ভাল হয়নি, এ্যাডিলেডে কি তাই কোন নেতিবাচক কিছু কাজ করছে? মাশরাফি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের মাঠে কখনই খেলে অভ্যস্ত নই। ভাল অবস্থানে থেকে এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল। বড় মাঠ কিংবা ছোট মাঠ এটা কোন সমস্যা নয়। যদি আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারি এগুলো হয়ত কোন সমস্যাই হবে না।’ তবে ইংল্যান্ডের সামনে যে বিশাল চাপ, তা মেনেই নিয়েছেন ইংল্যান্ড কোচ পিটার মুরস। বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে চাপ আছে এবং দল হিসেবে আমাদের ওপরেই চাপটা বেশি। আমরা ভাল ক্রিকেট খেলতে পারিনি। আমরা জানি, ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অংশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ সামলানোর সামর্থ্য থাকতে হবে।’ গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ২ উইকেটে হেরেছিল ইংল্যান্ড। এরপরও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এবার আর সেই সুযোগ থাকছে না। হারলেই বিদায়ঘণ্টা বাজবে ইংল্যান্ডের। সেই ২০১১ সালের বিশ্বকাপের স্মৃতি কী ইংল্যান্ডকে আরও বেশি করে জেদি করে তুলছে? প্রতিশোধ নেয়ার তাড়নায় জাগাচ্ছে? ইংলিশ কোচ বলেছেন, ‘এই দলটা ভিন্ন দল। এখানে প্রতিশোধ নেয়ার কিছু নেই।’ প্রতিশোধ নেয়ার কোন ভাবনা থাক কিংবা না থাক, ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। সেই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে সবসময়ই হারার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। বাড়তি চাপ খেলায় প্রভাব ফেলে। প্রতিপক্ষ দলটি যদি আবার বাংলাদেশের মতো হয়, তাহলে সেই চাপ আরও বেশি থাকে। আবার ২০১১ সালের বিশ্বকাপে হারের দুঃখস্মৃতিও আছে। ইংল্যান্ড এখন এই চাপে ভুল করে বসলেই হয়ে যায়। বাংলাদেশ জিতলেই হয়। তাহলেই কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
×