ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ইসলামিক স্টেট আল কায়েদার চেয়েও বিপজ্জনক’

সন্ত্রাস দমনে সাফল্য ॥ মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দিহান

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৯ মার্চ ২০১৫

সন্ত্রাস দমনে সাফল্য ॥ মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দিহান

বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান অভিযানের সাফল্য নিয়ে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে হতাশা ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স জেমস আর ক্ল্যাপার জুনিয়র বলেন, সন্ত্রাসবাদের গতিপ্রকৃতি ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন গুরুতর রূপ নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অভিযান বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল মাইকেল নাগাটা বলেন, তিনি ইসলামিক স্টেটকে যে কোন সময়ের আল কায়েদার তুলনায় বেশি বিপজ্জনক বলে গণ্য করছেন। তিনি সন্ত্রাস দমন কৌশলবিষয়ক এক আলোচনায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। সিআইএর সাবেক উপপরিচালক মাইকেল মোরেল বলেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় আল কায়েদা ও এর বংশের ধ্বংস দেখে যেতে পারবেন বলে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, এটি দীর্ঘ সময়ের বিষয়। আমার সন্তানদের প্রজন্ম এবং তৎপরবর্তী প্রজন্মকেও এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এসব মূল্যায়নে হতাশাই প্রতিফলিত হয়। এ হতাশা কয়েকটি নিরুৎসাহজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বছর সন্ত্রাসদমন অভিযানে লিপ্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরেছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ইসলামিক স্টেটের উত্থান, বিদেশী যোদ্ধাদের দলে দলে সিরিয়ায় অনুপ্রবেশ, ইয়েমেনে মার্কিন সমর্থিত সরকারের পতন এবং লিবিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি। আর সর্বশেষ বিপদের আভাস দেখা দেয় শনিবার। ওই দিন নাইজিরিয়ার সন্ত্রাসী দল বোকো হারাম কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় এবং ইসলামিক স্টেটের প্রতি এর আনুগত্য প্রকাশ করে। মার্কিন কর্মকর্তারা এক হতবুদ্ধিকর পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ পরিস্থিতিতে আল কায়েদা ও এর প্রভাবিত ইসলামী জঙ্গীবাদ ১৪ বছরের তীব্র সন্ত্রাসদমন তৎপরতার মুখে কেবল টিকেই থাকেনি, বিস্তারও লাভ করেছে। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত এবং আরব বসন্তের সূচনা হওয়ার পর আশাবাদের উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। আরব বসন্তকে প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের এক রাজনৈতিক জাগরণ বলে দেখা হয়েছিল এবং এটি আল কায়েদা ও এর সেকেলে মতবাদকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে বলে মনে করা হয়েছিল। লাদেনের মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন ই প্যানেটা বলেছিলেন, তাঁরা আল কায়েদাকে কৌশলগতভাবে পরাজিত করার মতো অবস্থায় পৌঁছেছেন বলে তিনি নিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও পরবর্তী বছরগুলোতে ওই কথারই প্রতিধ্বনি করেন। তিনি বলেন, আল কায়েদা পরাজিত হওয়ার পথে রয়েছে। সম্প্রতি তিনি বলেন, ইসলামিক স্টেট কোন জুনিয়র ভার্সিটি স্পোর্টস টিমের সঙ্গে তুলনীয়। এরূপ আশাব্যঞ্জক কথাবার্তা এখন বিলীনই হয়ে গেছে। বিশ্লেষকরাও ক্রমশ আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বড় ধরনের হামলা পরিচালিত হওয়ার নিকটসম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ঝুঁকি দ্রুত পুঞ্জীভূত হচ্ছে। সিআইএর অন্যতম সাবেক উপপরিচালক জন ম্যাকলাফলিন বলেন, কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন আপনারা সন্ত্রাসদমন সম্পর্কিত অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন। সন্ত্রাসী দলগুলোর হাতে কখনও এত বিরাট ভূখ- ছিল না। কখনও তাদের হাতে এত বেশি অর্থ ছিল না। কখনও তারা এত বেশিসংখ্যক পশ্চিমা পাসপোর্টধারীদের হাত করতে পারেনি। কখনও তারা এত প্রচার পায়নি। ইসলামিক স্টেট দলটি বিরাট ভূখ- দখল এবং এক নতুন খিলাফত ঘোষণা করতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কাজে লাগায়। একই সময়ে রণাঙ্গনে এর সাফল্য এবং সামাজিক মিডিয়ায় এর ব্যাপক উপস্থিতি আল কায়েদাকে চ্যালেঞ্জ করতে এর পক্ষে সহায়ক হয়েছে। দলটি আল কায়েদার সঙ্গে ইতোপূর্বে সম্পর্ক ছিন্ন করে। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×