ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার শেষ আট নিশ্চিতের লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৮ মার্চ ২০১৫

অস্ট্রেলিয়ার শেষ আট নিশ্চিতের লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে গত দুই বারের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কা। মহাবিস্ময়কর কিছু না ঘটলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াও শেষ আটে। কারণ ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে দুর্বলতর স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দু’দলেরই। আর একটি করেই ম্যাচ জিততে হবে উভয় দলকে শেষ আট নিশ্চিত করতে। তবে আজ আগেভাগেই কোয়ার্টার সুনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। সিডনিতে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় লঙ্কানদের বিরুদ্ধে অসিদের এ ম্যাচটি শুরু হবে। দারুণ উজ্জীবিত লঙ্কানরা গত দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিস্ময়কর ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছে। দুটি ম্যাচে রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন লঙ্কান টপঅর্ডাররা। দল সংগ্রহ করেছে ৬৪৪ রান আর সেজন্য হারাতে হয়েছে মাত্র দুই উইকেট। চলতি আসরে অন্য যে কোন দলের চেয়ে লঙ্কান টপঅর্ডাররাই ফর্মে আছেন বেশি। সেজন্য চলতি আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই পরাজয় দিয়ে শুরু করলেও টানা দুটি বড় জয়ে দারুণ উজ্জীবিত লঙ্কানরা। যদিও অস্ট্রেলিয়ার কঠিন পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে নামতে হবে এবার। তবে লঙ্কান শিবিরে ইনজুরির হামলাটা অনেক বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ ও ব্যাটসম্যান দিমুথ করুনারতেœ দল থেকে ছিটকে পড়েছেন ইনজুরির কারণে। দীর্ঘ ৫ মাস ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফেরা পেস স্তম্ভ লাসিথ মালিঙ্গা ঠিক ছন্দে নেই। অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিসও ছিটকে গেছেন দল থেকে ইনজুরির কারণে। তবে দলের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার নির্ভরযোগ্য ওপেনার তিলকারতেœ দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারা আছেন দারুণ ফর্মে। রানের মধ্যে আছেন লাহিরু থিরিমান্নেও। গত দুই ম্যাচে বাকিদের ব্যাটিং করতেই হয়নি। তবে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছেন আরেক অভিজ্ঞ মাহেলা জয়াবর্ধনে। মিডলঅর্ডারে অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে আছেন দিনেশ চান্দিমাল, উপুল থারাঙ্গা ছাড়াও অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। তাই উজ্জীবিত লঙ্কানদের জন্য ইনজুরি সমস্যাটা খুব বড় দুশ্চিন্তার কারণ নয় মোটেও। সমান ৪ ম্যাচ করে খেলে ৬ পয়েন্ট শ্রীলঙ্কার এবং ৫ পয়েন্ট অস্ট্রেলিয়ার। আগের ম্যাচে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একাদশের বাইরে রাখার কারণে অসি টিম ম্যানেজমেন্ট দারুণ সমালোচনার শিকার হয়েছে। সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংও কড়া সমালোচনা করেন ওয়াটসনকে দলের বাইরে রাখার জন্য। আজ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাঁর ফেরাটা প্রায় নিশ্চিত। তবে ইনজুরির কারণে পেসার প্যাট কামিন্স ছিটকে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করলেও চলতি আসরের অন্যতম ফেবারিট স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এরপর দুর্ভাগ্যের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় এক পয়েন্ট নষ্ট হয়েছে। পরের ম্যাচে ট্রান্স-তাসমান শত্রু নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তবে দুর্বল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয় (২৭৫ রানে) ছিনিয়ে নিয়ে আবারও ছন্দে ফিরেছে অসিরা। ব্যাটিংয়ে সেদিন ঝলক দেখিয়েছেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথরা। ফলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়ে অসিরা। তাই নিজেদের মাঠে কোনভাবেই লঙ্কানদের পেয়ে বসতে দেবে না অসিরা। বিশেষ করে দলের মূল শক্তিই একঝাঁক অলরাউন্ডার। ইনজুরি থেকে জেমস ফকনার ফেরার পর সেই শক্তিটা আরও বেড়েছে। এছাড়াও আছেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। সিডনির উইকেটটা বেশ শুষ্ক। আর সেটা খেয়াল করেই এবার অসি নির্বাচকদের নতুন করে একাদশ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার আগে। খটখটে উইকেটে সে কারণে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার জ্যাভিয়ের ডোহার্টি। সেক্ষেত্রে ওয়াটসন ও ডোহার্টিকে জায়গা করে দিতে একাদশের বাইরে যাওয়া লাগতে পারে পেসার জোশ হ্যাজেলউড ও পায়ের সমস্যায় আক্রান্ত মিচেল মার্শকে। আর ব্যাটিং পজিশনেও হতে পারে কিছুটা রদবদল। সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচে ব্যাট হাতে তেমন সুবিধা করতে না পারায় ওয়াটসনকে এ ম্যাচে ৬ নম্বরেও নামতে হতে পারে। আর গত ম্যাচে ওয়ানডাউনে দারুণ ব্যাটিং করায় স্মিথের জায়গাটা অপরিবর্তিতই থাকছে। সিডনির উইকেট দেখে এখন লঙ্কানরাও কিছুটা স্পিন আক্রমণ রাখতে মনোযোগী একাদশে। তবে সেজন্য হেরাথকে পাচ্ছে না তাঁরা। ইনজুরি আক্রান্ত এ অভিজ্ঞ স্পিনারের জায়গায় ঠাঁই করে নেয়া সিকুগে প্রসন্ন আজই নামতে পারেন। এছাড়া স্কোয়াডে দেখা যেতে পারে সচিত্র সেনানায়েকেকে। সিডনিতে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত কোন ম্যাচ জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা। টানা ৮ ম্যাচ হেরেছে প্রতিপক্ষদের কাছে। তবে এরপর আরও ৯ ম্যাচ খেলে ৬ জয় তুলে নিয়েছে তারা, হেরেছে মাত্র দুটি। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ দুই ম্যাচেই এ ভেন্যুতে জয় তুলে নিয়েছে লঙ্কানরা। ২০১০ সালের নবেম্বরে ২৯ রানে এবং ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ উইকেটের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তারা। সেসব অনুপ্রেরণা আজ লঙ্কানদের। যদিও সবমিলিয়ে সিডনিতে ১৩ ম্যাচ খেলে দু’দলের মধ্যে এগিয়ে অসিরাই। তাদের জয় ৮ আর লঙ্কানদের ৪। এ ভেন্যুতে সর্বোপরি অসিদের রেকর্ড বেশ ভাল। ১৭ ম্যাচ খেলে ১০ জয়ের বিপরীতে মাত্র ৬ পরাজয় দেখেছে অসিরা এখানে। তবে ১৯৯২ বিশ্বকাপে এ ভেন্যুতে অসি-লঙ্কা লড়াই হয়নি। যদিও এখন পর্যন্ত পরস্পরের মধ্যে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলেছে দু’দল। এর মধ্যে ৬ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া, ২ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় আছে আর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তবে ১৯৯৬ সালে ওয়াকওভার পাওয়ার পর আরও ৫ বার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়ে জয়ের দেখা পায়নি শ্রীলঙ্কা। একটি পরিত্যক্ত আর বাকি চারটিতেই জিতেছে অসিরা। এখন নিজেদের মাঠ সিডনিতে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকবে অসিরাই। কারণ ওয়ানডের সার্বিক পরিসংখ্যানেও এগিয়ে তারা। মোট ৯০ ওয়ানডের মধ্যে ৫৫ জয় অস্ট্রেলিয়ার। শ্রীলঙ্কার জয় মাত্র ৩১টি।
×