ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সাতই মার্চের তারুণ্য উদ্দীপ্ত কনসার্ট জয়বাংলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ মার্চ ২০১৫

সাতই মার্চের তারুণ্য উদ্দীপ্ত কনসার্ট জয়বাংলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার ছিল ঐতিহাসিক সাতই মার্চ। একাত্তরে জাতিকে মুক্তির বার্তা দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অনন্য ভাষণের দিন। আর এ উপলক্ষে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো জয় বাংলা শীর্ষক কনসার্ট। সাতই মার্চের ভাষণ উপলক্ষে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের প্রতিধ্বনিময় এ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশনের তত্ত্বাবধানে ইয়াং বাংলা। দেশের প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় শিল্পীরা কনসার্টে নিজেদের গানের পাশাপাশি গেয়ে শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অমর গানগুলো। যা শিল্পীরা উৎসর্গ করেছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনবাজি রেখেছিল। ইয়াং বাংলা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত কণ্ঠস্বর। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছেÑ বাংলাদেশের সর্বস্তরের যুবকদের সমন্বিত করে তাদের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। দেশের প্রতিটি দুর্দিনে ৭ মার্চের চেতনায় গর্জে ওঠার দুরন্ত আহ্বান নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে হাজির হয়েছিল দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল, অর্ণব এ্যান্ড ফ্রেন্স, ক্রিপটিক ফেইট, শিরোনামহীন, নেমেসিস, আর্বোভাইরাস, শূন্য প্রমুখ। কনসার্টটি উপভোগ করার জন্য প্রায় ৩০ হাজার তরুণ সম্পূর্ণ বিনামূলে এই ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে। জাতীয় সঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় শুরু হয় কনসার্ট। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই পুরো আর্মি স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। গানের সুরে নেচে গেয়ে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। তবে সন্ধ্যার পরে লেজার শোয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর সংগ্রাম ও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়। যা স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রতিটি তরুণের মন ছুঁয়ে যায়। তারা উপলব্ধি করেন কতটা ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই স্বপ্নের বাংলাদেশ। বিকালে জাতীয় সঙ্গীতের সুর মূর্ছনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর ‘ওরা আসবে চুপি চুপি’ এই গানের অর্কেষ্ট্রা বাজিয়ে শোনান শিল্পীরা। দেশের স্বনামধন্য সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর আয়োজন মন ছুঁয়ে যায় সব দর্শকের। প্রথম দল হিসেবে মঞ্চে আসে এই সময়ের তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘শূন্য’। এরপর একে একে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন ওয়ারফেইজ, আর্টসেল, অর্ণব এ্যান্ড ফ্রেন্ডস, ক্রিপটিক ফেইট, শিরেনামহীন, নেমেসিস, আর্বোভাইরাস প্রভৃতি জনপ্রিয় ব্যান্ডদল। সপ্তাহব্যাপী পথনাটক উৎসবের সমাপ্তি ॥ সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণে পয়লা মার্চ থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। ‘আগুনে পুড়ছে দেশ বাঁচাও জীবন বাঁচাও প্রতিবেশ’ সেøাগানে উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা, হত্যা ও সহিংসতা প্রতিরোধের উচ্চারণ এসেছে এবারের উৎসবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন নাট্যদলের ৩১টি পথনাটকে সাজানো উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। সহিংসতার প্রতিবাদসহ নানা বিষয় উঠে আসে এসব নাটকে। পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়কে উপজীব্য করে নির্মিত নাটকগুলো দর্শকের সামনে হাজির হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ হিসেবে। শনিবার সমাপনী দিনের বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পরিবেশিত হয় ছয়টি পথনাটক। মানস নাট্য অঙ্গন উপস্থাপিত নাটকের শিরোনাম ছিল টার্মিনাল মনজুর আলম সিদ্দিকীর রচনা থেকে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন আরিফ হোসেন। টাকার চক্কর শীর্ষক নাটক পরিবেশন করে ঢাকা থিয়েটার। প্রযোজনাটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন খন্দকার শাহ আলম। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটক রাজারবাগ একাত্তর পরিবেশন করে মেট্রোপলিটন পুলিশ নাট্যদল। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মান্নান হীরা। টঙ্গীর নাট্যদল নাট্যভূমি উপস্থাপন করে কানার হাটবাজার শীর্ষক পথনাটক। শহীদ হক খান শ্যাননের রচনা থেকে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন শাজাহান শোভন। কুমিল্লা নাট্যদল পরিবেশিত নাটকের শিরোনাম ছিল দাবি। প্রদীপ দেওয়ানজীর রচনা থেকে প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী নাসির উদ্দিন। প্রাচ্যনাট পরিবেশিত আগুন খেলা শিরোনামের প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেষ হয় উৎসব। ত্বকী হত্যার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। আট মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পাওয়া যায় তাঁর লাশ। শনিবার ত্বকী হত্যার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত হলো ‘ত্বকী হত্যা ও গণজাগরণে প্রথম আলো’ শীর্ষক গ্রন্থ। বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে প্রকাশিত ড. সফিউদ্দিন সম্পাদিত বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও লেখক ড. হায়াৎ মামুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ত্বকীর বাবা ও আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। মামলার সুচারু ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোন ফল পাইনি। এ হত্যার পেছনে যা কিছু ঘটেছে তা উদ্ঘাটন করা হোক এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ত্বকী এখন শুধু কোন ব্যক্তি নয়, প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন প্রয়োজন তেমনি এই বিচারও ছিল প্রয়োজনীয়। বর্তমান সময় এমন হয়েছে যে, ভরসা করতে হচ্ছে সামাজিক শক্তির ওপর। সন্ত্রাস বিরোধী ত্বকী মঞ্চ, বই, গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক পরিম-ল হচ্ছে সেই সামাজিক শক্তি। বাংলার বাঁশি কর্মশালা ॥ সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে শনিবার সকাল থেকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলার বাঁশি কর্মশালা’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ ভবনের মহড়া কক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র বাঁশের বাঁশি। বাঁশি চর্চার মাধ্যমে যারা বাংলার মৌলিক সংস্কৃতির সেবা করছেন তাদের উৎসাহিত করা এবং বাঁশি চর্চাকারী ও তাদের শিক্ষাগুরুদের মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বাঁশি বাজিয়ে নিজেদের দক্ষতা স্তর প্রদর্শন করেন। পরে ওস্তাদ মনিরুজ্জামান এবং প্রধান অতিথি মোবারক হোসেন খান বাঁশিচর্চার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানান এবং একটি সুরের তালিম দেন। এছাড়াও সংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষ থেকে ছয়জন বাঁশি ওস্তাদকে স্মারক শুভেচ্ছা নিবেদন করা হয়। তারা হলেন ওস্তাদ আব্দুর রহমান (মরণোত্তর), ওস্তাদ শামসুল হক, ওস্তাদ মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর), ওস্তাদ খবির উদ্দিন (মরণোত্তর), সংগীত পরিচালক ধীর আলী মিয়া (মরণোত্তর) ও দেবু ভট্টাচার্য (মরণোত্তর)। বাংলার ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য তাদের মাঝে সনদপত্রও বিতরণ করা হয়। আমন্ত্রিত ওস্তাদরা এই সনদপত্রগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন। সব শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সংগঠনের আহ্বায়ক বিশিষ্ট সুরকার ও গীতিকার সেলিম রেজা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। নাট্যমেলায় মঞ্চস্থ শেষের কবিতা ও মহাজনের নাও ॥ দেশে নিয়মিতভাবে রবীন্দ্র নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন প্রাণ সঞ্চারকারী নাট্যসংগঠন ‘প্রাঙ্গণেমোর’। আর, সময়ের পথ পরিক্রমায় দেশের অনন্য নাট্যসংগঠনে পরিণত হওয়া ‘প্রাঙ্গণেমোর’-এর আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে এবং পরীক্ষণ থিয়েটার হলে চলছে ‘দুই বাংলার নাট্যমেলায় রবীন্দ্রনাট্য ও অন্যান্য-২০১৫’ শিরোনামে নাট্যমেলা। শনিবার ছিল এই নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় দু’টি নাটক। নাট্যশালায় মূল হলে আয়োজক নাট্যসংগঠন ঢাকার প্রাঙ্গণেমোর প্রদর্শন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটক ‘শেষের কবিতা’। পরীক্ষণ হলে সুবচন নাট্য সংসদ মঞ্চস্থ করে বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবনীভিত্তিক নাটক ‘মহাজনের নাও’। নাট্যাভিনেতা ও নির্দেশক অনন্ত হীরার নাট্যরূপে প্রাঙ্গণেমোর-এর শেষের কবিতা নাটকটির নাট্য নির্দেশনা দিয়েছেন- নূনা আফরোজ। অপরদিকে বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবনী নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন সুদীপ চক্রবর্তী।
×