ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনেকে দল ত্যাগের কথা ভাবছেন

নাশকতা-সহিংসতায় ক্ষুব্ধ হতাশ উদারপন্থী বিএনপি নেতারাও

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৭ মার্চ ২০১৫

নাশকতা-সহিংসতায় ক্ষুব্ধ হতাশ উদারপন্থী বিএনপি নেতারাও

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শুধু জনগণই নয়, আন্দোলনের নামে নাশকতা-সহিংসতায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ উদারপন্থী বলে খ্যাত বিএনপির সাবেক এমপি-নেতারাও। টানা দুই মাসে ভয়াল নাশকতা চালিয়েও সরকারের ওপর সামান্য চাপ সৃষ্টি করতে না পারা এবং গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গীরূপ ধারণ করায় বিএনপিতে থাকা অপেক্ষাকৃত সজ্জন ও ঘোরতর জামায়াতবিরোধী সাবেক মন্ত্রী-এমপি-নেতারা এখন দল ত্যাগ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্তের কথা ভাবছেন। যেহেতু রাজনীতিই তাঁদের রক্তে মিশ্রিত, তাই রাজনীতির মাঠ না ছেড়ে অন্য দলে যোগদানেরও সুযোগ খুঁজছেন এদের অনেকেই। সেদিক থেকে বিএনপির ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত এসব নেতাদের প্রথম পছন্দ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বড় কোন পদ নয়, শুধু উপযুক্ত সম্মান পেলেই ক্ষমতাসীন দলে যোগদানের মিছিলে বিএনপির প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা পাইপলাইনে রয়েছে বলে নানা সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো এও আভাস দিয়েছে, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গীস্টাইলে বর্তমান চলমান নাশকতা-সহিংসতা বিশেষ করে নৃশংসভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির অনেক নেতাই ভালভাবে মানতে পারছেন না। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ-হতাশ বিএনপির কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে গোপনে সাক্ষাত করে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এঁদের কয়েকজন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও গোপনে সাক্ষাত করেছেন বলে সূত্রটির দাবি। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গোপনীয় বিধায় এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের নেতাই স্পষ্ট মুখ খুলতে রাজি হননি। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতপর্বের বিষয়টিও অস্বীকার করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির কিছু নেতার সাক্ষাতের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ও সাবেক এমপিই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এসব নৈরাজ্যকর কর্মসূচী সমর্থন করেন না। সুযোগ পেলেই তাঁরা বিএনপি নেত্রীর এসব ধ্বংসাত্মক ও মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সরব হবেন। গুঞ্জন রয়েছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি। অন্তত দুই দিন তাঁরা সাক্ষাত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও। আরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও সাবেক এমপি গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন যাঁরা রাজনীতির মাঠে বেশ আলোচিত এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়ও বটে। রাজনীতির মাঠে চলা এসব গুঞ্জনের সত্যতা নিশ্চিতকরণে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ-ই তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই নেতা শুধু এটুকু বলেনÑ ‘সময় হলেই সবকিছু স্পষ্ট হবে।’ তবে নানা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগে যোগদানে ইচ্ছুক বিএনপির এসব সাবেক এমপি-নেতারা বরাবরই দলটিতে উদারপন্থী বলে পরিচিত। যাঁদের অধিকাংশেরই রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছে হয় ছাত্রলীগ, নতুবা বামপন্থী কোন দল থেকে। রাজনীতির হিসাবনিকাশ এবং মন্ত্রিত্ব কিংবা লাভবান কোন পদের কারণে তাঁরা বিএনপিতে যোগ দিলেও দলটির অতিমাত্রায় জামায়াতনির্ভরতা, ঘনিষ্ঠতা এবং গণতান্ত্রিক আচরণ ছেড়ে জঙ্গীবাদী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আগাগোড়ায় ছিলেন ঘোরবিরোধী। শুধু পদ এবং ক্ষমতার কারণে দলটিতে থেকে বিরোধিতা করতে না পারলেও খালেদা জিয়ার গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পরই ক্ষোভে-দুঃখে তাঁরা বিএনপিতে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এ অংশে থাকা সাবেক এমপিরা মনে করেন, ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাঁদের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত, বিএনপিরও ক্ষমতায় যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল। শুধু জামায়াতের কারণে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত তাঁরা কোনমতেই মানতে পারছেন না। জানা গেছে, বিএনপির উদারপন্থী অংশের প্রায় অর্ধশতাধিক সাবেক এমপি ও নেতারা তীব্র হতাশা এবং জামায়াতের ওপর নির্ভর করে দলটির বর্তমান ফ্যাসিস্টরূপ দেখে নিজেদের ঘনিষ্ঠদের কাছে স্পষ্টতই নিজেদের ক্ষুব্ধতা ধরে রাখতে পারেননি। ঘনিষ্ঠদের কাছে তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিএনপির এই উগ্রপন্থার সঙ্গে একাত্মতা ও সমর্থন করে তাঁদের পক্ষে আর চলা সম্ভব নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে উল্টো এখন স্পষ্ট স্বাধীনতাবিরোধী রূপ নিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক জীবনই ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব দিক বিবেচনা করেই তাঁরা চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বাকি রাজনৈতিক জীবনকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে। সূত্র জানায়, সরকারমুখী বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপিদের মধ্যে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের বেশ কয়েকজন অতিপরিচিত মুখ রয়েছেন, যাঁরা এখনও নিজ নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ও কিছুটা হলেও আদর্শবান নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। বিষয়টি এখনও রয়েছে আলোচনার পর্যায়ে। আওয়ামী লীগ রাজি না হলে শেষ পর্যন্ত বিএনপির এসব ক্ষুব্ধ সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা একজোট হয়ে রাজনীতির মাঠে নতুন প্ল্যাটফর্ম খুলেও জাতির সামনে আবির্ভূত হতে পারেন বলেই নানা সূত্র থেকেই এমন আভাস পাওয়া গেছে।
×