ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলন ফ্লপ করায় নাশকতার নতুন নীলনক্সা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৬ মার্চ ২০১৫

আন্দোলন ফ্লপ করায় নাশকতার নতুন নীলনক্সা

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী বর্তমান সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন হিসেবে অপপ্রচার চালিয়ে যে কোনভাবে পতন ত্বরান্বিত করতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নীলনক্সা কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে থাকায় মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে উগ্র ক্যাডারদের নিয়ে বড় ধরনের নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির নতুন পরিকল্পনা হয়েছে। জামায়াত, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলামের উগ্র একটি অংশ, নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরসহ জঙ্গীপনা সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষে কথিত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে যারা বিভোর তারাই এখন মরণ কামড় দিতে উদ্ধত। চট্টগ্রাম বন্দর, দেশের প্রধান জ্বালানি স্থাপনা ও ৩৭ প্রধান প্রধান জেলা শহরে একযোগে নাশকতা চালানোর গোপন তৎপরতা র‌্যাব-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর উগ্র এ গোষ্ঠীটি তাদের শেষ ছোবল মারতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারির কারণে ইতোমধ্যে জঙ্গীপনায় জড়িত বেশকিছু সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়ে গেছে। এদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের প্রণীত নীলনক্সায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য নামীদামী ব্যক্তিদের হত্যা করে আলোচনার ঝড় তোলা। পাশাপাশি বোমাবাজি, আগুন দিয়ে যানবাহন জ্বালানোসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালিয়ে দেশী-বিদেশী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এসব কাজে অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতার নেপথ্যে রয়েছে অঢেল অর্থ। আর এ অর্থের যোগানদাতারা হচ্ছে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া গোপন পথে এ কাজে অর্থের যোগানও আসছে। চট্টগ্রামে নাশকতা ও জঙ্গীপনার উল্লেখযোগ্য তিনটি ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর গ্রেফতারকৃতদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যানারের উগ্রপন্থী এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা এখন নিশ্চিত হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ হরতাল দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই। সঙ্গত কারণে বড় ধরনের নাশকতা ও হত্যাকা- চালিয়ে তারা মরণ কামড় দিতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সেই পরিকল্পনাও ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা এ মুহূর্তে গোপনে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়াসে লিপ্ত। সূত্রে জানা গেছে, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এরা এতদিন নাশকতার কার্যক্রম চালিয়েছে দেদার। ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে, যানবাহনে আগুন দিয়ে ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পনা সরকার কঠোর হস্তে দমন করতে সমর্থ হওয়ায় এরা শিবির, হিযবুত তাহরীর, হেফাজতসহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের কট্টর সদস্যদের নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরা নতুন করে একটি সংগঠনের নামও নির্দিষ্ট করেছে। তা এখনও প্রকাশ করেনি। গেল সপ্তাহে র‌্যাবপ্রধান বেনজীর আহমেদ যখন চট্টগ্রামে এসেছিলেন তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বিষয়টি তারা অবহিত হয়েছেন। নামও জেনেছেন। কিন্তু তদন্তসহ বৃহত্তর স্বার্থে জঙ্গীপনা সৃষ্টির এ দলের নাম জানাতে তিনি পারছেন না। সূত্র জানায়, বর্তমানে নাশকতার ফ্রন্ট লাইনে কাজ করছে হিযবুত তাহরীর সদস্যরা। ঢাকায় বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের মুখোশ এখনও উন্মোচিত না হলেও হত্যাকা- ঘটাতে উস্কানিদাতা যিনি ধরা পড়েছেন তিনি ফারাবী। যিনি এক সময় শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার পর বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। হিযবুত তাহরীর অসংখ্য সদস্য এখন সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে নতুন নতুন নাশকতা সৃষ্টির জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে। নতুন আঙ্গিকে জঙ্গী সংগঠন আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা হিযবুত তাহরীর বলেই প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এরা জেএমবির স্টাইলে বোমা তৈরি, হেফাজতের স্টাইলে পাইপ বোমা এবং নতুন নতুন পদ্ধতিতে বোমাবাজির নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের এ পর্যন্ত সকল আন্দোলন ফ্লপ হওয়ার পর মূলত বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতৃত্বদানকারী নেতা ও কর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে বর্তমানে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। এ সুযোগে জামায়াত-শিবির, হিযবুত তাহরীর, হেফাজতে ইসলামের একশ্রেণীর কট্টর নেতা ও কর্মীরা এখন মাঠে নেমে অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। নাশকতার কাজে অর্থের অভাব না থাকায় এরা এতটাই বেপরোয়া যে, জনবহুল এলাকায় নাশকতা চালিয়ে এরা নির্বিঘেœ কেটে পড়তে সমর্থ হচ্ছে। চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার তিনটি ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বিএনপি, ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাদের নাম। তবে হেফাজত ও হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্টতার কথা জানালেও এদের নাম তাদের অজানা বলে বক্তব্য দিয়েছে। চট্টগ্রামে সিএমপির তত্ত্বাবধানে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে একাধিক টিম বর্তমানে নগরজুড়ে প্রতিনিয়ত চষে বেড়াচ্ছে জঙ্গীপনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে। পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর প্রায় সব সদস্য শিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। অনেকে আবার কর্মক্ষেত্রেও জড়িত। কিন্তু এরা এতটাই প্রশিক্ষিত ও বেপরোয়া যে, সরকারি এত কড়া নজরদারির মাঝেও প্রতিনিয়ত এরা তাদের নিয়মিত ম্যাগাজিন, লিফলেট মিডিয়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পৌঁছে দিতে সফল হচ্ছে। এরা এদের ম্যাগাজিন, লিফলেট বা প্রচারপত্রে বিশ্বব্যাপী বহু মুসলমানদের ওপর পাশ্চাত্যের বর্বরতার বিভিন্ন ঘটনা তুলে এনে তা বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করে ধর্মপ্রিয় ও ধর্মভীরু মুসলিম সমাজকে উত্তেজিত করতে সদা তৎপর। মূলত এরাই এখন মাঠে নেমে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে তৎপর রয়েছে। তবে পেট্রোলবোমাসহ অন্যান্য ছোটখাটো ঘটনার জন্য ভাড়া করা হয় ও নগদ অর্থ দিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার অয়েল বেল্ট ও চট্টগ্রাম বন্দরে নাশকতা চালিয়ে অচল করে দিতে পারলে এদের সফলতা হতো সবচেয়ে বড়। কেননা, বন্দর অচল করতে পারলে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য থমকে যেত, আর অয়েল বেল্ট জ্বালিয়ে দিতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াত তা কল্পনারও বাইরে। পাশাপাশি অয়েল বেল্টের সঙ্গে লাগোয়া রয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাদের নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ বিমানবন্দরও অচল হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। নাশকতার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বর্তমান সরকারকে বড় ধরনের সঙ্কটে ফেলা যেত বলে পরিকল্পনায় ছিল। পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামকে অচল করা যেতে পারলে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত বলে এ পরিকল্পনায় ছিল। কিন্তু সময় র‌্যাব-পুলিশের কাছে পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং ঢাকা থেকে আসা শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল কবিরসহ ৩ জন গ্রেফতার হওয়ার পর পুরো পরিকল্পনা আপাতত ভেস্তে যায়। ফলে এ অবস্থায় রক্ষা পেয়েছে দেশের প্রধান জ্বালানি স্থাপনা পতেঙ্গার গুপ্তখাল এলাকার অয়েল বেল্ট ও চট্টগ্রাম বন্দর। এদিকে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত নাশকতা কার্যক্রম বিরোধী তৎপরতায় জড়িতদের তথ্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্রেপ্রাপ্ত তদন্তের তথ্যের ভিত্তিতে সূত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কথিত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে শিবির এবং হেফাজতের কট্টরপন্থী গ্রুপের পাশাপাশি হিযবুত তাহরীর কর্মীদের নিয়ে নতুন একটি জঙ্গী সংগঠন আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী অর্থায়নে কাজ করা নতুন এ জঙ্গী সংগঠনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরির কৌশলও রপ্ত করেছে। এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং পাহাড়ি এলাকার গোপন আস্তানাগুলোতে চলছে সামরিক প্রশিক্ষণ। জঙ্গী সংগঠনটির নানা কর্মকা-ের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাছে তথ্য থাকলেও এখন পর্যন্ত সংগঠনটির নাম নিশ্চিত হতে পারেনি। নতুন এ জঙ্গী সংগঠনটি নিষিদ্ধ অপর জঙ্গী সংগঠন জেএমবির অনুকরণে সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে বোমা তৈরিরও পরিকল্পনা নিয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করা যায়। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল মুহূর্তে জঙ্গী সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে জামায়াত-শিবির এর সুবিধা নিতে চায়। যে কারণে জঙ্গী সংগঠনটির পাশাপাশি তারাও দেশের ৩৭ জেলায় একযোগে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নাশকতা চালাতে আসা কেন্দ্রীয় শিবির নেতা এনামুল কবীর গ্রেফতার হলেও বাকি ৩৬ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এমনকি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাকি ৩৬ জনের নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরণ পেয়েছে পুলিশ। জঙ্গী সংগঠনটির ব্যাপারে অনুসন্ধানে সম্পৃক্ত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিগত ২০১৩ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম থেকেই কাজ শুরু করে জঙ্গী সংগঠনটি। প্রথম পর্যায়ে তারা শিবিরের কট্টরপন্থী একটি অংশকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসে। এরপর তারা সেসব শিবির নেতাকর্মীদের নিয়োজিত করে হেফাজতে ইসলামের কট্টরপন্থী গ্রুপকে জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজে। তারই ধারাবাহিকতায় শিবির কর্মী এবং বোমা বিশেষজ্ঞ নুরন্নবী সখ্য গড়ে তোলে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলামের ছেলে এবং হেফাজতে ইসলামের সাহিত্য ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহারের সঙ্গে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শিবিরের বোমা বিশেষজ্ঞ নুরন্নবী হেফাজতের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নগরীর লালখানবাজার মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া শুরু করে। তারই ধারাবাহিককায় নুরন্নবী মাদ্রাসার কম্পিউটার ল্যাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে লোহার মোট পাইপের মধ্য গ্রেনেড আকৃতির নতুন এক ধরনের বোমা তৈরির চেষ্টা চালায়। কিন্তু এ গ্রেনেড তৈরির সময় বিগত ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর দুপুরে মাদ্রাসার কম্পিউটার ল্যাবে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে নুরন্নবীসহ তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আহত হয়েছিল আরও পাঁচজন। এ ঘটনায় পুলিশ মুফতি হারুনকে গ্রেফতার করলেও তার বাবা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম এখনও পলাতক রয়েছে। এ জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল আরেক শিবির নেতা আজিজুল হক। নুরন্নবী মারা যাওয়ার পর আজিজুল হক জঙ্গী সংগঠনটির হয়ে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রশিক্ষণ আস্তানা গড়ে তোলে। আর এ কাজে তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছে তার ছোই ভাই শিবির কর্মী ফয়জুল হক ওরফে ফায়াজ এবং বোন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কর্মী রহিমা আকতার। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক এবং বোমাসহ তাদের আটক করে র‌্যাব। আটকের পর ঘটনাস্থলেই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি, এ জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে শিবিরের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করার পাশাপাশি বিদেশী জঙ্গী সংগঠনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে কোন জঙ্গী সংগঠন এ তৎপরতা চালাচ্ছে তার নাম প্রকাশ করেননি। পুলিশ এবং র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে জঙ্গী সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর ভিডিও ক্লিপস দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করছে। এরপর তাদের সেখান থেকে বাছাই করে পাঠানো হচ্ছে দুর্গম এবং গহীন পাহাড়ে তৈরি করা গোপন আস্তানাগুলোতে। যেখানে রাতের অন্ধকারে দেয়া হচ্ছে একে-৪৭ এবং একে-২২ রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে যে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেয়েছিল র‌্যাব তার সঙ্গেও শিবির নেতা আজিজুল হকের সম্পৃক্ততা ছিল। তবে জামায়াতের হয়ে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গত ৭ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি পাড় এলাকা থেকে আজিজুল হককে গ্রেফতার করেছিল। মূলত জঙ্গী প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে এবং পরে অবস্থান নেয়ার জন্য হালিশহরের এ বাসাটিকে তারা হাইড আউট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করত।
×