ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় পৌঁছেই তৎপর

এফবিআই সদস্যরা ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেছেন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ মার্চ ২০১৫

এফবিআই সদস্যরা ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিনিধি দল। উগ্র মৌলবাদী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গীরা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে বলে এফবিআইকে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি হেফাজতে ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা হিযবুত জঙ্গী শফিউর রহমান ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেছেন এফবিআই সদস্যরা। এফবিআই সদস্যরা ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশের জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বৃহস্পতিবার এফবিআই ঢাকায় পৌঁছার পর তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। তবে এফবিআই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নাম পরিচয় পদবী কিছুই বলতে রাজি হননি তিনি। এফবিআই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বুধবার রাতেই পৌঁছান ঢাকায়। অভিজিতের ওপর হামলাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত এবং এই হত্যাকা- নিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এফবিআই সদস্যরা। ডিবি সূত্র জানায়, এফবিআই সদস্যরা ডিবির কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে কারা? ডিবির কর্মকর্তারা এফবিআই সদস্যদের জানিয়েছেন, উগ্র মৌলবাদী নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর জঙ্গীরা তাকে হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকে হত্যা করা হলো কেনÑ এফবিআই সদস্যদের এই প্রশ্নের উত্তরে ডিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, অভিজিৎ ছিলেন ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লেখালেখির কারণে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর কাছ থেকে হত্যার ক্রমাগত হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। ডিবি কর্মকর্তারা এফবিআই সদস্যদের জানিয়েছেন, অভিজিৎ হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের নির্দেশে বিদেশ থেকে দায় স্বীকার করে টুইটারে টুইট করা হয় ‘আনসার বাংলা-৭’ জঙ্গী সংগঠনের নামে। অভিজিৎ খুন হওয়ার পর সাবেক শিবির নেতা শাফিউর রহমান ফারাবীর ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে আসা একটি কমেন্ট শেয়ারে অভিযুক্ত হন। ওই কমেন্টে বলা হয়, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব নয়। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।’ এর আগে ফারাবী বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে অভিজিৎ রায়ের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন। ফেসবুকের এসব কমেন্ট, টুইটারের টুইট, ব্লগারদের নাম ও সংগঠন ইত্যাদি বিষয়ে অবহিত করা হয় এফবিআই সদস্যদের। এফবিআই সদস্যদের প্রশ্নের উত্তরে ডিবি পুলিশ বলেছে, ফারাবীকে নিয়ে তার ‘সমমনা উগ্র ব্লগারদের’ সঙ্গে গ্রেফতারকৃত ফারাবীর সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানোয় ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়েও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এই ফারাবী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে ফারাবীকে ওই বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ফেসবুক ব্যবহার করে রাজীবের জানাজার ইমামকে হত্যার হুমকি দেয় ফারাবী। ফারাবী ‘নাস্তিকদের’ হত্যাকা-ের বিষয়ে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমার দৃষ্টিতে নাস্তিকরা হচ্ছে, পোকামাকড় আর পোকামাকড়দের মরে যাওয়াই ভাল।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হলেও হিযবুত তাহরীরে সক্রিয় হয়ে লেখাপড়া শেষ করেনি ফারাবী। এরপর ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেন এফবিআই সদস্যরা। এফবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ডিবির কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের ওপর হামলাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত এবং এই হত্যাকা-ের আগে ফেসবুকের কমেন্ট, টুইটারের টুইট ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ রায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তের চাপাতির কোপে গুরুতর জখম হয়ে মারা যান অভিজিৎ রায়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। বন্যা ইতোমধ্যেই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছেন। অভিজিৎ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। এই হত্যা মামলার তদন্তে এফবিআই কারিগরি সহায়তা দিতে পারবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা শি। এর আগে একুশ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা- তদন্তে সহায়তার জন্য ঢাকা এসেছিলেন এফবিআই সদস্যরা। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে জঙ্গীবাদীরা হুমকি দিয়ে আসছিল বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। জঙ্গিবাদীরাই এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিজিতের বাবা। হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে হিযবুত তাহরীর নেতা উগ্রপন্থী ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হিযবুত তাহরীর নেতা ফারাবীকে ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, অভিজিৎ হত্যাকা-ে অনুতপ্ত নয় তিনি এবং এই হত্যাকা-কে সমর্থন করেন। আনসার বাংলা-৭ নামে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে টুইট করেছিল হিযবুত তাহরীর। হিযবুত তাহরীর নেতা গ্রেফতারকৃত ফারাবীকে দিয়েই হত্যাকারী শনাক্ত করার চেষ্টার করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, দেশের জঙ্গী দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নেয়ার এখনই সময়। এফবিআই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে জঙ্গী দমন করছে সেভাবে বাংলাদেশের জঙ্গী দমনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ জানানো প্রয়োজন। অভিজিৎ হত্যাকা-ে প্রমাণ করে দেশে আবারও জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
×