ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

অভিজিৎদের খুন করা যায় চিন্তা খুন করা যায় না

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ মার্চ ২০১৫

অভিজিৎদের খুন করা যায় চিন্তা খুন করা যায় না

প্রশ্ন হচ্ছে, ইন্টারনেটে কাউকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া বা জঙ্গীবাদ প্রচার করা বন্ধের উপায় আছে কিনা বা যারা এ ধরনের হুমকি দেয় বা প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অবস্থা আছে কিনা! বর্তমান হরতাল-অবরোধের ফাঁদে ফেলে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা যে মানুষ হত্যা করছে সে ব্যাপারে নীতিনির্ধারকরা সব সময় বলছেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনমন্ত্রী এও বলেছিলেন, সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এখনও হয়নি। চার স্তরের নিরাপত্তায় অভিজিৎ খুন হলেন, পুলিশ নির্বিকার। নাকি তদন্ত হবে! পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে যে চিত্রটি ফুটে ওঠে, তাহলো- সরকার জঙ্গী মৌলবাদ বা বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী, গ্রেফতার করা হচ্ছে; কিন্তু দ্রুত কোন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে জঙ্গী মৌলবাদী ও বোমা মেরে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীরা ভাবছে, সরকার সমঝোতায় আসবে। আন্তর্জাতিক কারণে সরকার চাপে আছে। বা সরকারে তাদের লোক আছে। এ সব ভাবনার কারণে ঘটনাগুলো ঘটছে। আশা করি বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা ভাববেন। আগেই বলেছি, ব্লগারদের ঢালাওভাবে নাস্তিক আখ্যা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার একাংশ সহায়তা করেছে। তারা আওয়ামী লীগবিরোধী। সেটিতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু তারা পরোক্ষ বা সূক্ষ্মভাবে জামায়াত বা বিএনপিকেই সমর্থন করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবেও পরিচিত মিডিয়া এ কাজটি করেছে। গত ৩ মার্চ, দৈনিক জনকণ্ঠে তৌফিক ইমরোজ খালিদী এ বিষয়ে চমৎকার একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যাতে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে এরা কাজ করে। অনুরোধ করব পাঠকদের পারলে প্রবন্ধটি পড়তে। এভাবে বিএনপি-আওয়ামী লীগবিরোধী বা সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটি ধারণা সৃষ্টি করা গেছেÑ ব্লগার মানেই নাস্তিক। আর নাস্তিকতো মুসলমানদের মধ্যে থাকতে পারে না। এভাবে সব কিছু মিলে মুক্তচিন্তা সেক্যুলারিজমের জমিটা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। জঙ্গীবাদীরা যে ৬ জনকে খুন করেছে তারা সব ব্লগার। সমাজের নানা অংশের শৈথিল্যের কারণে দিন দিন তাদের ক্ষমতা বাড়ছে। তাদের কথা উঠলেই সবাই থমকে যায়, কথা বলতে বা ব্যবস্থা নিতে ইতস্তত করে, ফলে তারা আরেকটু জমিন অধিকার করে। পাকিস্তান আমলেও প্রগতিশীলদের জমি এভাবে সঙ্কুচিত হয়নি। গত শতকের ষাটের দশকেও অধ্যাপক আহমদ শরীফ ও তাঁর একই মতের বন্ধুরা ‘নাস্তিক সংঘ’ করেছিলেন। কেউ তাদের আক্রমণ করতে আসেনি। সমাজচ্যুতও তাদের করা হয়নি। ইসলামেও নাস্তিকদের স্থান আছে। শুধু তাই নয়, ধর্মে এ কথাও আছে (অবিকল উদ্ধৃতি নয়) যে, তুমি একজনকে খুন করলে তো সবাইকে খুব করলে, একজনকে বাঁচালে তো সবাইকে বাঁচালে। কে প্রকৃত মুসলমান তা আল্লাহ্র বান্দারা নির্ধারণ করবে না, নির্ধারণ করবেন আল্লাহ। ইসলামে তো এ ধরনের খুনখারাবি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিধর্মীদের কি কিতাব নেই? সেই কিতাব কি আল্লাহ দ্বারা অবতীর্ণ হয়নি? এ সব হচ্ছে ধর্মের কথা। কিন্তু ধর্ম ব্যবহারকারীদের কাছে আল্লাহ্র বাণী কোন বাণী নয়। আইএস কি করছে? ফারাবী বলছে, অভিজিতকে হত্যা করা হয়েছে তাতে সে অখুশি নয়। ব্লগাররা সবাই ধর্মকে অকারণে তুলাধুনা করেন না। তারা হয়ত ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তি দেন, যা আবার যুক্তি দিয়ে খ-ন করা বিধেয়। তরবারি দিয়ে নয়। কোন ধর্মই তা সমর্থন করেনি। ইসলামও না। আগেই উল্লেখ করেছি, এইসব ধর্ম ব্যবহারকারি জঙ্গী গোষ্ঠীর উৎস হচ্ছে জামায়াত ও মওদুদীর চিন্তাধারা। গত ৭০ বছর এই চিন্তার প্রভাব বেড়েছে। পাকিস্তান আমলে তারা যেভাবে কথা বলত এখনও সেভাবে বলছে, ফারাবীর উক্তিই তার প্রমাণ। মওলানা ভাসানী শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, আলেম বা পীর হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তাঁর মুরিদ ছিলেন অনেকে, যে কারণে তাঁকে ‘হুজুর’ বলা হতো। গোলাম আযম কিন্তু তাঁকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজনীতিবিদ খালেকুজ্জামান এ বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গোলাম আযম ‘পাকিস্তানে আদর্শের লড়াই’ পুস্তিকায় ভাসানীকে প্রশ্ন করেছেন- ‘আপনি কি মুসলমান?... যদি আপনি মুসলমান হন তাহলে ইসলাম কায়েমের জন্য কাজ করেন না কেন? আপনার দলের নেতা ও কর্মীদের মন, মগজ ও চরিত্রে মুসলমানের কোন পরিচয় নাই কেন? আপনার সভায় কোরআন তেলাওয়াত হয় না কেন? আপনার দল এত সেøøাগান দেয় কিন্তু আল্লাহু আকবর সেøাগান কেন দেয় না? এরা নামাজ রোজার ধার ধারে না কেন? পাকিস্তানবিরোধী পুরনো হিন্দু নামধারী কমিউনিস্টরা আপনার দলে কেন? আপনি টুপি-দাড়ি ও মওলানা উপাধি নিয়ে মুসলমানদের ধোঁকা দিতে চেষ্টা করলেও আপনার দল যে টুপি, দাড়ি ও আলেমের ঘোরতর দুশমন সে কথা কি গোপন আছে?’ (পৃ. ৪৯-৫০) তিনি আরও লিখেছেনÑ ‘...সমাজতন্ত্রীরা বেঈমান ও চরিত্রহীন গু-াবাহিনী তৈয়ার করে এবং এ ধরনের লোকদের হাতে ছলে বলে কৌশলে দেশের ক্ষমতা তুলে দেয়। তাই সমাজতন্ত্র মানেই গু-ারাজ ও জালেমদের শাসন।’ (পৃ. ৪৩) এই যে মনোভঙ্গি এটি কিন্তু দূর হয়নি এবং তারা প্রশ্নগুলোই বার বার তুলে মগজে সেঁটে দিচ্ছে। মওলানা ভাসানী এর যথার্থ উত্তর দিয়েছিলেন। গোলাম আযম তার প্রত্যুত্তর দিতে পারেননি। পারার কথাও নয়। গোলাম আযমরা ১৯৭০ সালে সেøাগান দিয়েছিলÑ ‘তোমার আমার ঠিকানা মক্কা এবং মদীনা’, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ্ আকবর।’ বাঙালীদের সেøাগান ছিলÑ ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যুমনা’, ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা মনোজগতে এমন আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন যে, গোলাম আযমরা ধুয়েমুছে সাফ। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানী, তাদের পুনর্বাসন না করলে বাংলাদেশে আজ তারা আবার আধিপত্য বিস্তার করতে পারত না। ওই আমলের নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করব না; কিন্তু পাকিস্তান আমলের মতো ইসলামের জুজুর ভয় দেখিয়ে সমাজকে কাবু করতে চাইলে বর্তমান নেতৃত্ব এর বিপরীতে কিছু করবে না। বর্তমানের দ্বন্দ্ব বা জঙ্গীদের খুনোখুনির মূল কারণ পাকিস্তানী জারজদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছে তাদের বইপত্র, ক্যাসেট বাজারে এখনও কিভাবে চালু? গোলাম আযম/মওদুদী/নিজামীদের সব বইপত্র দেদার বিক্রি হচ্ছে। সাঈদীর ক্যাসেট বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ায় যাদের বিচার হচ্ছে তাদের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ। কম্বোডিয়ায় মানবতাবিরোধী বিচার বিশেষজ্ঞ হেলেন জারভিস বলেছেন, যারা খুনী তাদের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব নয়Ñ ‘অনেকেই সমঝোতার কথা বলেন। কিন্তু যারা গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ করেছেন তাদের সঙ্গে সমঝোতা কিভাবে?’ (প্রথম আলো ৪.৩.১৫) এ কথা আমরাও বারবার বলেছি, সরকার গুরুত্ব দেয়নি। অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধী, জঙ্গী মৌলবাদীদের বিচার হতে পারে; কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনার ফসলে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। বেশ একটা হবুচন্দ্র হবুচন্দ্র রাজার দেশের ভাব। ১৯৭০ সালে গোলাম আযমরা যা বলেছেন, আজকে জঙ্গীরাও তাই বলছে। তখন রাজনীতিবিদ থেকে সিভিল সমাজ তাদের প্রতিরোধ করেছে। অথচ রাজনীতিবিদরা ইতস্তত করছেন আর সুশীল নামক কিছু টাকাখোর সেকেন্ডারি বাঙালী তাদের সমর্থন করে যাচ্ছে। ক্ষমতা অন্বেষী কিছু মিডিয়াও যার সঙ্গে জড়িত। এটিই ট্র্যাজেডি। এই যে যুক্তির বিষয়, এটি আমাদের সমাজ থেকে ক্রমেই অপসৃত হচ্ছে। এটিও ট্র্যাজেডি বা ভয়ের কারণ। হুমায়ুন আজাদ থেকে চারজন নিহত হয়েছেন গত এক দশকে, কারও বিচার হয়নি। এটি কিন্তু তাদের এক ধরনের দায়মুক্তি। এই যে আমরা জমি হারাচ্ছি সে জমি পুনরুদ্ধারে বা নিজ জমির আয়তন বাড়াতে যে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার, সেটি করা হচ্ছে না। সরকার যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সরকার, সেহেতু শিক্ষা-সংস্কৃতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরী ছিল। সব কি প্রধানমন্ত্রীকেই বলতে হবে বা উদ্যোগ নিতে হবে? তাহলে এত মন্ত্রীর দরকার কী? তারা কী এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী বাদ সেধেছেন, তাওতো নয়। ১৪ দলেরও কোন সমন্বিত প্রচেষ্টা নেই। মোহাম্মদ নাসিম কর্তৃক ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষিত মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি কই? অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া দেশের সমাজ-সংস্কৃতি অন্ধকারেই থাকে; কিন্তু শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষের মনকে স্বাধীন বা মুক্তমনা করে না। এর সঙ্গে শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নও দরকার। দুটি একত্রিত না হলে একটি দেশ আধুনিক হয় না। আমাদের নীতিনির্ধারকরা শেষোক্তটিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। হুমায়ুন আজাদ থেকে ব্লগার যাদের খুন করা হয়েছে তাদের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সময়ই খুন করা হয়েছে। এর প্রতীকী অর্থ আছে। ফেব্রুয়ারি হচ্ছে বাঙালী জাতীয়তাবাদের মাতৃভূমি। বইমেলা হচ্ছে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার। আর লেখকরা [যারা খুন হয়েছেন বা খুন হওয়ার পথে] হচ্ছেন যুক্তির নির্মাতা। এদের খুনের অর্থ হচ্ছেÑ যারা মুক্তমনা, গণতন্ত্রী, অপসংস্কৃতির বিরোধী, যুক্তিবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধের সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া। চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে এরকম যে, আমরা করছি তোমরা কী করতে পারবে? কিছুই না। যে বিএনপি-জামায়াত দু’মাস ধরে এ কথাই বলছেÑ আমরা মানুষ খুন করেছি, কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করেছি, তো কী হয়েছে? কিছুদিন পর মানুষের মনোভাব যদি এরকম হয় যেÑ সরকারতো পারছে না, শান্তি আসছে না, তাহলে তারাই থাকুক। স্টকহোম সিনড্রোমের মতো আর কী! এ ধরনের চিন্তা কিন্তু ভয়ানক চিন্তা। এ চিন্তা যারা করে বা করছে তারা কিন্তু ক্ষমতায় গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে বিরুদ্ধবাদীদের নিকেশ করবে এবং সবাইকে দমিত করবে। উদাহরণ আফগানিস্তান, ইরাক বা সিরিয়া বা কোন কোন ক্ষেত্রে পাকিস্তান। এ বিষয়ে নাজি আমলে লিখিত একটি পোস্টারের কথা মনে পড়ছে। আপনারা হয়ত অনেকেই সেটি জানেন। নাজিরা কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী, উদারপন্থী সবার বিরোধী ছিল। পোস্টারটির ভাষ্য ছিল এরকমÑ প্রথমে তারা কমিউনিস্টদের খোঁজে এলো, ভাবলাম আমি নিরাপদ। এরপর তারা সোশ্যালিস্টদের খোঁজে এলো, আমি ভাবলাম আমরা তো নিরাপদ। তারপর তারা এলো লিবারেলদের খোঁজে। আমার খোঁজে তো নয়। তারপর তারা এলো আমাকে নিতে। চারদিকে দেখলাম, আমাকে সাহায্য করার জন্য কেউ নেই। আমি কাউকে দোষারোপ, সমালোচনা বা অভিযুক্ত করছি না। আমি আজকের সময় ও সমস্যা এবং সঙ্কটকে অনুধাবন করার কথা বলছি। যদি ‘আনসার ৭’ বা হিযবুত বা জামায়াত-বিএনপি জয়ী হয় তাহলে অন্যপক্ষের পক্ষে জীবনযাপন করা দুঃসহ হয়ে উঠবে। শাহরিয়ার কবির জানালেন, এদের এক ব্লগে তার ছবি সেঁটে ক্রশ চিহ্ন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পরবর্তী টার্গেট তিনি। সবচেয়ে বড় টার্গেট শেখ হাসিনা। ‘রাজীব বা অভিজিৎ মারা গেছে, তারা এক্টিভিস্ট ছিলেন, প্রাণ দিয়েছেন, আমি তো এসবে নেই, আমি নিরাপদ’Ñ এ ধারণা ভুল। বিএনপি-জামায়াত যে ১০০ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে তারা কি সমাজের পরিচিত কেউ? গাড়িবোমা বা বোমায় যারা নিহত হন তারা কি পরিচিত কেউ? সরকার সংশ্লিষ্টদের শুধু অনুরোধ করবÑ সমন্বিত প্রচেষ্টা নিন এদের মোকাবেলায়। যদি এর জন্য মন্ত্রিসভা বা দলের নীতিনির্ধারক বদলাতে হয় একটি ঝাঁকুনি দেয়ার জন্য সেটিও যেন কারও দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সরকার প্রধান সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি এখন জরুরী। সবশেষে একটি কথা বলবÑ শুরুতে ধর্ম যেভাবে প্রচারিত হয়েছে পরবর্তীকালে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে বিভক্তি হয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, মুসলমান সব ধর্মেই। ধর্ম মানুষের কল্যাণ বা আল্লাহ/ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণÑ এ বার্তা নিয়ে যারাই সরকারের কথা বলেছেন তারাই আক্রান্ত হয়েছেন। আব্বাসীয় যুগে যখন ইজতেহাদ প্রাধান্য পেয়েছিল, তখন তাকে বলা হয়েছে স্বর্ণযুগ। ইসলামের ইতিহাসে সে আমলটিই এ্যাচিভমেন্টের যুগ। পরবর্তীকালে ইজতেহাদের প্রভাব লুপ্ত হয়। সে থেকে উগ্রচিন্তাই প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু লড়াইটা কি একতরফা হয়েছে? সভ্যতা সংস্কৃতির আরেক নাম যুক্তি। আজ আমরা যে অবস্থায় পৌঁছেছি তা যুক্তির কারণেই। যুক্তির ক্ষেত্র যদি একেবারে অবলুপ্ত হতো, তা হলে তো সভ্যতা সংস্কৃতি বিকশিত হতো না। আমি বিশ্বাস করি না যে, বাংলাদেশের সমাজ থেকে যুক্তি একেবারে অপসৃত হবে। ১৯৭১ সালেও ছিল যুক্তি। কেননা যুক্তিকে অবলুপ্ত করা যায় না, যদি যেত তাহলে সভ্যতা-সমাজ কিছু থাকত না। থাকত ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ভরা এক সমাজ। ওই যুগ তো আমরা পেরিয়ে এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষকে হত্যা করা যেতে পারে, তার চিন্তা ধ্বংস করা যায় না। অভিজিৎ খুন হতে পারেন, মুক্তমনের চিন্তা তো খুন করা যাবে না। যেমনটি বলেছে অভিজিৎ-বন্যা দম্পতির কিশোরী কন্যাÑ শব্দ হত্যা করা যায় না। (সমাপ্ত)
×