ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটের তিন ধ্বনিমুদ্রিকা ও এক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ মার্চ ২০১৫

ছায়ানটের তিন ধ্বনিমুদ্রিকা ও এক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজ সংস্কৃতি ধারণ ও লালনকারী ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সেই কর্মপ্রবাহের সূত্রে প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রকাশিত হলো তিনটি সঙ্গীত সংকলন বা ধ্বনিমুদ্রিকা এবং একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। শুদ্ধসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ও লোকসঙ্গীতের তিনটি এ্যালবাম হলো ‘রবীন্দ্র-সুরবাণী বিচিত্রা : রূপে রূপে অপরূপ’, ‘বাংলার মাটির সুরছন্দ : অচিনপাখির কলগীতি’ এবং ‘রাগসঙ্গীত বিহারে নজরুল : উত্তর-দক্ষিণের রাগ’। আর লোক গীতিকবিদের নিয়ে প্রবন্ধগ্রন্থটি হলো ‘লোক গীতিকবিদের দৃষ্টি ও সৃষ্টিবীক্ষা : অচিনপাখির কলগীতি’। মঙ্গলবার সকালে প্রবন্ধগ্রন্থ ও তিনটি ধ্বনিমুদ্রিকার মোড়ক উন্মোচন করেন ছায়নটের সহ-সভাপতি ডাঃ সারওয়ার আলী এবং গানের এ্যালবামে সঙ্গীত ও পাঠ পরিবেশন করা শিল্পী চন্দনা মজুমদার, খায়রুল আনাম শাকিল ও আব্দুস সবুর খান চৌধুরী। প্রকাশনা উৎসবে গ্রন্থের ভূমিকা পাঠ করেন আব্দুস সবুর খান চৌধুরী। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃৃতি মিলনায়তনে প্রবন্ধগ্রন্থ এবং তিনটি ভিন্ন আঙ্গিকের গানের ধ্বনিমুদ্রিকা বা সিডির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ এবং তিনটি সিডির মোড়ক উন্মোচনের পরই প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থের ভূমিকা পাঠ করে শোনানো হয়। স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্মল চন্দ্র মজুমদার, নারায়ণ চন্দ্র শীল, তপন মজুমদার, কাজী মদিনাসহ অন্য শিল্পীবৃন্দ। বসন্তের সকালে মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা। একক কণ্ঠে ‘কেন দিলে এ কাঁটা/যদি গো কুসুম দিলে...’ শীর্ষক নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। ‘পড়েছি এবার আমি ঘোর সাগরে/পার করো দয়াল আমায়’ শিরোনামের লালনগীতি পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার। সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। বাংলার শ্রুতি-স্মৃতিনির্ভর আবহমান লোকসঙ্গীত তথা লোকসাহিত্যই বাঙালী সংস্কৃতির আদি বাসা। সরল, সাদামাটা মানুষের গান হিসেবে বাংলার লোকসঙ্গীত সর্বজননন্দিত শিল্প-নিদর্শন। এসব গান মানুষের কথা বলে। আউল-বাউল-ফকির-দরবেশ আর সুফি সাধকদের চিন্তা-চেতনা দিয়ে সমৃদ্ধ এসব লোকসঙ্গীত। এসব গানের একদিকে যেমন আছে ভাষার আকঁাঁড়া সরলতা, অন্যদিকে আছে ভাবের অতলস্পর্শ গভীরতা। এমনই লোকসঙ্গীত এবং সঙ্গীতকারদের নিয়ে প্রবন্ধসমৃদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে ‘লোক গীতিকবিদের দৃষ্টি ও সৃষ্টিবীক্ষা : অচিন পাখির কলগীতি।’ প্রবন্ধ সংকলনটিতে মোট তেরোটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে। গ্রন্থটিতে সুধীর চক্রবর্তীর ‘রূপে নয়ন ডুবল না রে’ শিরোনামের প্রবন্ধের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে দেশের বেশ কয়েক গুণী প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধ। এ ছাড়াও স্থান পেয়েছে ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন’-সংশ্লিষ্ট কজন শিক্ষক-গবেষকের রচনা। যার অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে ‘ছায়ানটে’র সাহিত্য-সংস্কৃতি ত্রৈমাসিক বাংলাদেশের হৃদয় হতে পত্রিকায়। এতে প্রাবন্ধিকের তালিকায় আছে, রামকানাই দাশ (সিলেট, ভাটি-অঞ্চলের লোকগান), আবুল আহ্সান চৌধুরী (লালন সাঁই : মানবিক সংস্কৃতি ও সামাজিক দ্রোহের নায়ক), গোলাম ফারুক খান (জালাল উদ্দীন খাঁ : তাঁর ‘মহাসত্যের দেশ’), শাকুর মজিদ (প্রকৃতির পাঠশালায় শাহ আবদুল করিম), নাদিরা বেগম (ভাওয়াইয়া গানের নারী), কিরণচন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদার (কবিয়াল শ্রেষ্ঠ বিজয়কৃষ্ণ সরকার), তপন মজুমদার (কাঙাল হরিনাথের বাউল গান) ও নাজমুল আহ্সান তুহিন (হাছন রাজার দর্শন ও স্বকীয়তা)সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধ। বাংলার মাটির সুরছন্দ : অচিনপাখির কলগীতি শীর্ষক এ্যালবামে একটি সংগৃহীত গান ছাড়া রয়েছে লালন শাহ্, রাধারমণ দত্ত, শেখ ভানু, পাগলা কানাই, জালাল উদ্দীন খাঁ, মনোমোহন দত্ত, বিজয়কৃষ্ণ সরকার, জসীম উদ্দীন, মহেশচন্দ্র রায়, হরলাল রায় আর একেএম আব্দুল আজিজের লেখা ১২টি গান। দু’টি সম্মেলক গান ছাড়া বাঁকি ১১টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন নির্মল চন্দ্র মজুমদার, নাদিরা বেগম, চন্দনা মজুমদার, নারায়ণ চন্দ্র শীল, সরদার মোঃ রহমাতুল্লা, মোখলেসুর রহমান মিন্টু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, তপন মজুমদার, স্বপ্না রায়, আবুল কালাম আজাদ ও এরফান হোসেন। রবীন্দ্র-সুরবাণী বিচিত্রা : রূপে রূপে অপরূপ শীর্ষক সঙ্গীত সংকলনটির গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেছেন সন্জীদা খাতুন। এতে একক কণ্ঠে গান গেয়েছেন ফাহ্মিদা খাতুন, ইফ্ফাত আর দেওয়ান, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, মিতা হক, আব্দুল ওয়াদুদ, ইলোরা আহমেদ শুক্লা, তানিয়া মান্নান, লাইসা আহমদ লিসা, আজিজুর রহমান তুহিন, মোঃ সিফায়েত উল্লাহ মুকুল এবং সত্যম্ কুমার দেবনাথ। এছাড়াও এই সিডিতে আছে দু’টি সম্মেলক গান। সংকলটিতে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে গান, গান থেকে কবিতা, আবার সেই কবিতাকে সুরে ঢালার দরুণ রূপ থেকে রূপে যাওয়া-আসার পরিচয়বহ রবীন্দ্র-সৃষ্টি উপস্থাপিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের স্বাভাবিক সুরবিহার ছিল উত্তরী পদ্ধতির সঙ্গীত ঘরানায়। আপাতভাবে পৃথক সঙ্গীতরীতি হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণী দেশীয় রীতিতেও তিনি গান বেঁধেছেন। এই সুরস্রষ্টা কেবল দক্ষিণী-ধারার ধ্রুপদী রীতি অনুসরণ করেননি, আপন সঙ্গীত-প্রতিভার গুণে উভয় ধারার সম্মিলনে পৃথক আরেক সুরছন্দ এনেছেন বাংলা গানে। দক্ষিণী সঙ্গীতপদ্ধতির সঙ্গে উত্তরী সঙ্গীতধারার মিলনে নজরুলের সুর-সৃষ্টির অঞ্জলি হচ্ছে রাগসঙ্গীত বিহারে নজরুল : উত্তর-দক্ষিণের রাগ শীর্ষক এ্যালবামটি। ১১টি একক গান নিয়ে প্রকাশিত সিডিটিতে গেয়েছেন শাহীন সামাদ, সেলিনা হোসেন, খায়রুল আনাম শাকিল, নাসিমা শাহিন ফ্যান্সি, ফারহানা আক্তার শ্যার্লি, নুসরাত জাহান রুনা, দেবশ্রী অন্তরা দাশ, তানভীর আহমেদ, লতিফুন জুলিও, প্রিয়াংকা গোপ ও নাহিয়ান দূরদানা শুচি। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে ‘রূপে রূপে অপরূপ’ এবং নজরুলের গান নিয়ে ‘উত্তর দক্ষিণের রাগ’ ধ্বনিমুদ্রিকা বা অডিও সিডির পাঠ এবং আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছেন কাজী মদিনা, আব্দুস সবুর খান চৌধুরী, লিয়াকত খান, কৃষ্টি হেফাজ ও লাইসা আহমদ লিসা। প্রবন্ধগ্রন্থসহ সঙ্গীত সংকলন তিনটি প্রকাশে সহযোগিতা করেছে গ্রামীণফোন। আবৃত্তি একাডেমির কর্মশালা ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক আবৃত্তি সংগঠন আবৃত্তি একাডেমি আগামী ১৩ মার্চ থেকে ‘প্রমিত উচ্চারণ, বাচনিক উৎকর্ষ, আবৃত্তি ও সংবাদ উপস্থাপনা’ শীর্ষক চার মাসব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করেছে। কর্মশালায় প্রশিক্ষক থাকবেন আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মীর বরকত, গোলাম সারোয়ার, শিমুল মুস্তাফা, রেজিনা ওয়ালি লীনা, শাহাদাত হোসেন নিপু, মজমুদার জুয়েল, মৃন্ময় মিজান, মাসুদ আহম্মেদ প্রমুখ। যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বরগুলো হলোÑ ০১৬৭৪৬০৯৬৪৫, ০১৯১১৫৯৪০৫১ ও ০১৫৫২৩২৯২৩৮। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণবিষয়ক কর্মশালা ॥ কপিরাইট আইন কার্যকর হলে মানুষ তার কাজের মূল্যায়ন পাবে। এ ব্যাপারে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেবল, তাহলেই মেধাস্বত্বের অধিকার সংরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে হয়রানি কমে যাবে। মঙ্গলবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লুআইপিও) আয়োজিত ‘কপিরাইট নিবন্ধন মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনজুরুর রহমান, উপসচিব মোঃ নবীরুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লুআইপিও)-এর প্রতিনিধি ইয়োশিতো নাকাজিমা, নিক গারনেট, মিজ উই ইমা, সুরকার ফুয়াদ নাসের বাবু, সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু, বামবা’র সভাপতি হামিন আহমেদসহ অন্যরা। রণজিৎ কুমার বিশ্বাস আরও বলেন, কোন সৃজনশীল কর্মের ওপর সৃজনকারীর নৈতিক এবং আর্থিক অধিকারই হচ্ছে কপিরাইট। এর মধ্য দিয়ে নিজের ও উত্তরাধিকারীর মালিকানা সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে এর সুরক্ষা, নৈতিকতা এবং আর্থিক বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের কপিরাইট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মনজুরুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পাইরেসির সমুদ্রের মধ্যে ডুবে আছে। কপিরাইট মানে কপি করার অধিকার নয়। এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের ভিত্তিমূল। এ ব্যাপারে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িতদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর আইনী সুরক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। জানতে হবে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি সর্বনিম্ন ৩ বছর। তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন কোন গান যদি সোনারগাঁও হোটেলের লবিতেও বাজে তাহলেও এর জরিমানা গুনতে হবে। অন্য বক্তারা বলেন, কপিরাইট আইনে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করতে হবে। এ ব্যাপারে বোর্ডে দাখিলকৃত অভিযোগগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এ জন্য প্রচলিত কপিরাইট আইন সংশোধন ও কার্যকর করতে হবে।
×