ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসে অর্থায়ন নীতিমালা পালনে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২ মার্চ ২০১৫

সন্ত্রাসে অর্থায়ন নীতিমালা পালনে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল

এম শাহজাহান ॥ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থ ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। সন্ত্রাসে অর্থায়ন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়ছে বলে মনে করছে সরকার। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও আশঙ্কা সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দেশে তালেবানী স্টাইলে জঙ্গী তৎপরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই বাস্তবতায় সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর চারটি ধারা সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা বা ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন আইন ১৯৪৭ সংশোধন করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে ধারাগুলো সংশোধন করে সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অর্থ পাচার বন্ধ এবং বিদেশী বিনিয়োগ সহজ করতে প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা বা ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন আইন ১৯৪৭ সংশোধন করা হচ্ছে। এই আইন সংশোধন হলে- যারা দেশ থেকে বিভিন্ন হুন্ডি, ওভার ইনভয়েস এবং অন্যভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে থেকে সম্পদ বা অর্থ আয় করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছেন, কিংবা বাংলাদেশে কোন অবৈধ কার্যক্রমে সহায়তা করছেনÑ তাদের বিরুদ্ধেও এই আইনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। শুধু ব্যক্তি নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও সংশোধিত আইনে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যেসব শাখা বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত (অথরাইজড ডিলার ব্রাঞ্চ বা এডি শাখা), তাদের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালার অধীনে কোন অনিয়ম প্রমাণিত হলে আর্থিক দ- বা তাৎক্ষণিক জরিমানা করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তিনটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অর্থ পাচার বন্ধ করা এবং বিদেশী বিনিয়োগ সহজ করা। সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশ নিয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের যে অপতৎপরতা রয়েছে তা বন্ধ হবে। এ লক্ষ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ধারা-৯ অপরাধের তদন্ত ও বিচার, ধারা-১২-দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদনের অপরিহার্যতা, ধারা-১৪ সম্পত্তির অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোক আদেশ এবং ধারা ২৩-মানিলন্ডারিং অপরাধ দমন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ক্ষমতা রয়েছে তা সংশোধন করা হবে। জানা গেছে, টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে ইতোপূর্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ পাস করা হয়েছে। যার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশীয় সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ করা। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও জাল নোট তৈরির মতো অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের সক্ষম করবে বলে মনে করা হয়েছিল। ওই আইনে মানিলন্ডারিং সম্পর্কিত অপরাধগুলোর সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৮ কর্মকা-কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোকুল চাঁদ দাস জনকণ্ঠকে বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আইন দেশে রয়েছে। কিন্তু এই আইনের ফাঁকফোকরেও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইন সংশোধন হলে ব্যাংকগুলোকে আরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, অবিলম্বে আইনটি সংশোধন করা হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইনটি এখন সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে অফিস করে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। এর পরই তৎপরতা বাড়ায় বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংক। সন্ত্রাসে অর্থায়নে ব্যাংকগুলো যাতে কোনভাবেই ব্যবহৃত হতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় তিনি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ব্যাংক যাতে কোনভাবে সন্ত্রাসে অর্থায়নে ব্যবহৃত হতে না পারে বা কোন সন্ত্রাসী যাতে ব্যাংকের মাধ্যমে কোন লেনদেন করতে না পারে তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওই সময় আরও জানানো হয়, কোনো ব্যাংক মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিএফআইইউ অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা, সেবাকেন্দ্র, বুথ বা এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করতে পারে। এমনকি লাইসেন্স বাতিলও করা হতে পারে। এ ছাড়া কোন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে চেয়ারম্যান বা প্রধান নির্বাহীকেও অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে। এমনকি পদ হতে অপসারণ করতে পারে বিএফআইইউ। জানা গেছে, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি বিশেষ করে হুজি, হরকত-উল-জিহাদ, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম, আইএস, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও জেএমবির তৎপরতা বাড়ায় সরকার অস্বস্তিতে রয়েছে। সর্বশেষ অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে এদেশে জঙ্গীরা জোরেশোরে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মৌলবাদী শক্তি আল কায়েদা, আইএস এক হয়ে দেশে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- করতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
×