ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভার্সিটিতে যে কোন মূল্যে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ মার্চ ২০১৫

ভার্সিটিতে যে কোন মূল্যে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধসহ নৈরাজ্য কাটিয়ে সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে যে কোন মূল্যে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। হরতাল-অবরোধে দুই মাস ধরে ক্যাম্পাস অনেকটা সচল থাকলেও গত এক সপ্তাহে শিবির, ছাত্রদল ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তৎপরতায় কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক বন্ধের প্রেক্ষাপটে ইউজিসির এ নির্দেশ এলো। এছাড়া হরতাল-অবরোধের মধ্যে শিক্ষা খাতের ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে শুক্র-শনিবার ছাড়াও অন্য সরকারী ছুটির দিনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোরও নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি। রবিবার উপাচার্যদের সঙ্গে আয়োজিত এক জরুরী সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী এ আদেশ দিয়েছেন। উপাচার্যরাও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুুষিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাস সচল রাখার বিষয়ে এক মত পোষণ করেছেন। যদিও অধিকাংশই বলেছেন, তাদের ক্যাম্পাস সব সময়েই সচল আছে। তারপরও হরতাল বা নাশকতার কারণে সপ্তাহের কোন দিন বন্ধ হলেও ছুটির দিনে ক্ষতি পুুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাস নেন তারা। এর আগে শনিবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি বলেছে, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী বহিরাগতদের মদদে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সমিতির জরুরী সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যদি কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঐ সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া কোন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলে ভবিষ্যতে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়েও ঐ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে না। বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধের প্রেক্ষাপটে নৈরাজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। গত দুই মাসে হরতাল অবরোধে শিক্ষার ক্ষতি হলেও শুক্র শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনেকটা সচল রাখা হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। পুরোপুুরি বন্ধ হয়নি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু হরতাল-অবরোধেও পুরোপুুরি সচল হওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে শিবির, ছাত্রদল ও হিযবুত তাহরীর। বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলতে উস্কানিদাতা হিসাবে কাজ করে শিবিরের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। যাদের নামও প্রকাশ হয় গণমাধ্যমের খবরে। এক সপ্তাহে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বন্ধ হচ্ছিল রাজধানীর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির কিছু ‘শিক্ষার্থী’ হরতালে ক্লাস বন্ধের দাবি তুললে ওই দাবি প্রতিষ্ঠানটির গ-ি পেরিয়ে আশপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হঠাৎ করেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে ছাত্রদের কথিত আন্দোলনের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এমন এক অবস্থার মধ্যেই রবিবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বসে ইউজিসি। সভায় উগ্র জঙ্গীদের হামলায় নিহত ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়ের ওপর শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। ইউজিসি মিলনায়তনে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা একরাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রফিকুল হক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আমিনুল হক ভূঁইয়া, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের উপাচার্য অধ্যপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী প্রমুখ। ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, ইউজিসি সচিব ড. মোঃ খালেদসহ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপ-উপাচার্য, ডীন এবং ইউজিসির উর্ধতন কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজাদ চৌধুরী উপাচার্যদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব উদ্যোগে শিক্ষাকার্যক্রম চালাবে। সেশনজট দূর করবে। যদি পেট্রোলবোমা মেরে শিক্ষা কার্যক্রম ধ্বংস করা যায় তাহলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান, সিরিয়া বা ইরাকের মতো হবে। যখন উচ্চশিক্ষায় সংখ্যাগত বিচারে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে তখন হরতাল-অবরোধের মতো অসুস্থ রাজনৈতিক কর্মসূচী শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরমভাবে বিঘিœত করছে। তিনি চলমান জঙ্গী তৎপরতাকে অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আলোর কাছে অন্ধকারের পরাজয় অনিবার্য। অপশক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় সুনিশ্চিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, সব সময় আলোর সঙ্গে অন্ধকারের দ্বন্দ্ব থাকবেই। এটা নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হরতাল-অবরোধেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় একটু ঝুঁকি তো থেকেই যায়। হরতাল-অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার কৃতিত্ব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন শিক্ষার্থীরা আর সেশনজটে পড়তে চায় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, চলমান অস্থিরতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই হরতাল-অবরোধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সকলের মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ সভায় বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর কোন ক্লাস কামাই দেয়া হয় না।
×