ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী গ্রহণ করবেন সাত চিকিৎসক

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১ মার্চ ২০১৫

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন আজ রবিবার। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লক সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের উদ্বোধক ও সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী গ্রহণ করবেন সাত চিকিৎসক। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের লক্ষেèৗর কিং জর্জস মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডাঃ রাভি ক্যান্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২১ জুন। আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় সমাবর্তন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নাম পরিবর্তনসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হয়। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়, যা বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেডিক্যাল উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও মেডিক্যাল চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে । শনিবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন মিয়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার , কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, প্রিভেনটিভ এ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ আলী আজগর মোড়ল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোঃ সায়েদুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী গ্রহণ করবেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কাশেম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক, অধ্যাপক এম নুরুল আমিন, অধ্যাপক ডাঃ রবিউল হোসেন, অধ্যাপক টিএ চৌধুরী, অধ্যাপক রশিদউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক এন আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান। সমাবর্তনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন মিয়া। অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে নিতে হবে। ভাইস-চ্যান্সেলর তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণকে আরও আস্থাশীল করার উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিক সকল চিকিৎসা সুবিধাসংবলিত পূর্ণাঙ্গ ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স, আউটডোর কমপ্লেক্স, অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স, নার্সিং অনুষদ প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক মানসম্মত মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার, বিভিন্ন রকমের গবেষণা পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরি ভবনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তরকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকা- ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসনের আমলে চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেÑযা দেশ ও বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান প্রশাসন ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণাসহ সার্বিক উন্নতি সাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ইতোমধ্যেই ৪৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে নবনির্মিত অত্যাধুনিক আউটডোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২ বিঘা জমি সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবার উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগে বৈকালিক শিফ্ট চালু করা হয়েছে। দেশের আপামর জনগণের চিকিৎসা সুবিধার কথা চিন্তা করে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বিছানা বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বর্তমানে ১৫০০ বেডের হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। একই সঙ্গে গবেষণার ক্ষেত্রেও অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান পাওয়া গেছে। ১৯৯৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বেসিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদ, মেডিসিন অনুষদ, সার্জারি অনুষদ ও ডেন্টাল অনুষদসমূহের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিভাগ হতে এ পর্যন্ত মোট ৪৬৯০ জন চিকিৎসক স্নাত্তকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। যার মধ্যে এমডি ৭৭৪, এমএস ৬৮৭, এমফিল ৭০৬, ডিপ্লোমা ১৭৭৮ এবং এমপিএইচ ৭৪৫ জন রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সিঙ্গাপুর, ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং আগামীতে আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হাসপাতালের সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১১শ’ থেকে ১৫শ’, কেবিনের সংখ্যা ৬২ থেকে ১২৪, অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা ২১ থেকে বেড়ে ৫৬, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের শয্যা সংখ্যা ১১ থেকে ৩৭ তে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
×