ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উগ্র মৌলবাদীরাই দায়ী ॥ খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি বিশিষ্ট জনদের

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

উগ্র মৌলবাদীরাই  দায়ী ॥ খুনীদের  গ্রেফতার ও বিচার দাবি বিশিষ্ট জনদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার জন্য উগ্র মৌলবাদীদের দায়ী করে অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। বাংলাদেশ রুখে দাঁড়ও-এর ব্যানারে এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের বিক্ষুব্ধ বিশিষ্ট নাগরিকরা উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ডাক দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার দেশে মুক্ত চিন্তা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথ উন্মুক্ত রাখতে এবং উগ্র মৌলবাদী শক্তির উত্থান রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ঘাতক জঙ্গীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। নির্মূল কমিটি একই সঙ্গে সকল মৌলবাদী সন্ত্রাসী গঠনের মাতৃসংগঠন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিসহ সকল কর্মকা- অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও-এর ব্যানারে যুক্ত বিবৃতিতে দেশের বিক্ষুব্ধ বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়ও আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে লেখক অভিজিৎ রায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। এ হত্যাকা- মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর হামলা। হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে আমরা আশঙ্কা করছি, ইতোপূর্বে সংঘটিত ড. হুমায়ূন আজাদ, ড. তাহের, ড. ইউনুসসহ সকল হত্যাকণ্ডের হোতা উগ্র ধর্মাদ্ধ গোষ্ঠীই ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিশিষ্ট নাগরিকরা আরও বলেন, দেশে চলমান পরিস্থিতির শুরুতে বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াওয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচীতে সতর্ক করেছিল যে, রাজনৈতিক বিরোধ, প্রতিহিংসা, দেশে উগ্র মৌলবাদী শক্তির অপপ্রয়াস উসকে দিতে পারে। অভিজিৎ হত্যা এ আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিবৃতিকে স্বাক্ষর করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা, লেখক সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও এর পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান, আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, কামাল লোহানী, ড.সারওয়ার আলী, নাসিমুন আর হক, সৈয়দ শামসুল হক, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, রাশেদা কে চৌধুরী, ড. এম এম আকাশ, এ্যাডভোকেট সুপ্রিয় চক্রবর্ত্তী, কাবেরী গায়েন, মোতাহার আখন্দ, লাইসা আহমেদ লিসা, জিনাত আরা হক। এদিকে অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ঘাতক জঙ্গীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুক্তমনা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, যুক্তিবাদী তরুণ লেখক অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী জঙ্গী মৌলবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তমনা ওয়েবসাইট, এর প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় এবং তার পিতা মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোগামী নেতা অধ্যাপক অজয় রায়ের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন পুস্তিকা ও প্রকাশনায় ধারাবাহিকভাবে বিষোদগার করছে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাগরিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ ২০১২ সালে ‘মুক্তমনা’ ওয়েবসাইটকে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক প্রদান করেছিল। মৌলবাদীরা ২০০৪ সালের বইমেলায় যেভাবে প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের ওপর তলোয়ার চাপাতি দিয়ে হামলা করেছিল একইভাবে তারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তার সহধর্মিণী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে গুরুতর আহত করেছে। নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বিশিষ্ট নাগরিকরা আরও বলেছেন, এগার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ হত্যার বিচার হয়নি। ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমানের ওপর হত্যার উদ্দেশে হামলার ঘটনা থেকে আরম্ভ করে এ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগী জঙ্গী মৌলবাদীরা যাদের হত্যা করেছে শতকরা দশ ভাগেরও বিচার হয়নি। বিচার না হওয়া এবং বিএনপির মতো বড় দলের ছত্রছায়ায় থেকে জামায়াত ও জঙ্গী মৌলবাদীদের দেশ ও জাতিবিরোধী এবং মুক্তচিন্তা, মানবাধিকার ও সভ্যতাবিরোধী নৃশংস কর্মকা- সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা অভিজিৎ রায়ের আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদসহ ২০০১ সাল থেকে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা যে সব বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, বিচারক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে তাদের সকলের বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে সকল মৌলবাদী সন্ত্রাসী গঠনের মাতৃসংগঠন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিসহ সকল কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। তারা আরও বলেন, অকুতোভয় লেখক অভিজিৎ রায়ের অকালমৃত্যুতে মুক্তচিন্তার জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবে না। আমরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যসহ মুক্তমনা পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।
×