ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

মতলববাজদের মুখোশ খসে পড়ছে ...

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মতলববাজদের মুখোশ  খসে পড়ছে ...

মাহমুদুর রহমান মান্না ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে একেবারে হাতেনাতে ধরা খেলেন। একই সাথে তিনি সুশীল, সুজন, বিশিষ্ট নাগরিক, কাফনের কাপড় পরা অথবা চকচকে লাল-কালো পাঞ্জাবির বুদ্ধিজীবীদেরও কুৎসিত চেহারার নেকাবটা উন্মোচন করে দিয়েছেন। জাতি জানল ওই সব সুশীল, সুজন, বিশিষ্টতার আড়ালে এরা কতখানি কুশীল, কুজন বা কুবুদ্ধিজীবী বা অবিশিষ্ট। মান্না তাঁদের চেহারাটা উন্মোচন করে দিয়ে বরং জাতির উপকারই করলেন। জাতি মান্নার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরও চিনতে পারল। এরা যে কোন চরিত্রের জাতির সামনে তাও পরিষ্কার হয়ে গেল। এই মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। কখনও গণতন্ত্রের নাম করে, কখনও সংলাপের কথা বলে, কখনও বা মানবাধিকারের জন্য মায়াকান্না কেঁদে, রাষ্ট্রদ্রোহী-জাতিদ্রোহী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়েছেন। এরা গণতন্ত্রের কথা বলে মিলিটারি শাসনের পক্ষে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন, ধর্মের কথা বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছেন, এঁরা দেশপ্রেমিক শক্তির নামে পরাজিত পাকিস্তানীদের দালালী করেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না ভেবেছিলেন এঁদের ভেতরে ঢুকতে পারলে বস্তুগত সুবিধা (ইসলামী ব্যাংকের প্রকল্প) যেমন অর্জন করতে পারবেন তেমনি তাদের ঘাড়ে চেপে বাংলাদেশ-বিরোধী বিদেশী শক্তিগুলোর সমর্থন-সহযোগিতা আদায় করতে সহজ হবে। নাম বলে এদের চিহ্নিত করার প্রয়োজন নেইÑ ‘ডেইলি স্টার’ ‘প্রথম আলো’ ‘মানবজমিন’ ‘নিউ এজ’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে এই গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে এবং এদের নেতা হলেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল এককালে বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষ ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর দয়ায় সংসদ সদস্য হন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে মন্ত্রী হন। এমনকি শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁকে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থী করেন। অথচ আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করছেন আওয়ামী লীগ ও নেত্রী শেখ হাসিনার। মান্নাও তাদের নিয়ে টিভি টকশো বা প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক করে রাজনীতির শীর্ষে উঠতে চেয়েছিলেন। নিজেকে বড় বেশি ওভার এস্টিমেট করেছিলেন। মান্নারই বা দোষ কি? মূল তো হলো ইসলামী ছাত্র সংঘ। পাকিস্তানী আমলে যে ইসলামী ছাত্র সংঘ করত। যে লোক ১৯৭১-এর আগে ছাত্র সংঘ করেছে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর কী ভূমিকা ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমার এক বন্ধুর মুখে শুনেছি (যে জাসদ ছাত্রলীগ করেছে স্বাধীনতার পর) একাত্তরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ছাত্র-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় ছেলেমেয়েরা একত্রিত হয়ে চাঁদা তুলে একুশে সংকলন বের করত। যা দেশব্যাপী ছাড়িয়ে যেত এবং যার মাধ্যমে আমাদের গণসাহিত্য যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি অনেক গণলেখকেরও জন্ম হতো। মান্নারা তখন নয়াপল্টনে থাকত। ওই পাড়ার ছেলেমেয়েরা একত্রিত হয়ে একুশে সংকলনের জন্যে চাঁদা তুলতে মান্নাদের বাসায় যায়। দরজা নক করলে এক তরুণ দরজা খুলে সামনে এসে নিজের পরিচয় দেয় তার নাম মাহমুদুর রহমান মান্না। চাঁদা চাইলে বলে, ‘ভাষা আন্দোলনের শহীদরা কিসের শহীদ?’ সেই মান্না জাতে উঠে স্বাধীনতার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে। ভাল বক্তৃতা দিতে জানত এবং সেই সুবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস এবং ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদেরও ভিপি নির্বাচিত হন। এখানে বলতেই হবে জাসদ একটি বড় অপকর্ম করেছিল সংঘ ছেলেদের ছাত্রলীগে গ্রহণ করে, যেমন আরেক সংঘ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে জিএস জিয়াউদ্দিন বাবলু (বর্তমানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব)। জিয়াউদ্দিন বাবলু যেমন জাতীয় পার্টিতে গিয়ে জাতে উঠেন, তেমনি মান্নাও সাতঘাটের পানি খেয়ে আওয়ামী লীগে এসে বহুত্যাগী ছাত্রনেতাকে পেছনে ফেলে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে একবার নমিনেশন পেয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচন করে অকৃতকার্য হন। পরের বার আর নমিনেশন পাননি। এরপরই দেখা গেল তার আসল চেহারা। নাগরিক ঐক্য নামে একটা দল করে এবার রাজাকার-আলবদর, জামায়াত-শিবিরের গডমাদার বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে নেমে পড়লেন। বিভিন্ন সেমিনার-গোলটেবিল কিংবা টিভি টকশোতে বসে খালেদা জিয়ার অবরোধ-হরতালের আড়ালে গানপাউডার বা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে নারী-শিশুসহ শতাধিক মানুষ হত্যাকেও প্রকারান্তরে সমর্থন দিতেন। তাই তো দেখি দা-কুড়াল-খুন্তি নিয়ে রাস্তায় নামার জন্যে ঢাকার বিএনপিকে আহ্বান করে ব্যর্থ হয়ে আমেরিকায় পলাতক সাদেক হোসেন খোকাকে মান্না বললেন, কোনভাবেই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। যতটা না ওই বর্বর পৈশাচিক হত্যার বিরুদ্ধে বলেছেন তার চেয়ে বেশি ‘সংলাপ’ ‘সংলাপ’ করে মুখে ফেনা তুলেছেন। পারলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আরও এক বছর আগেই শেখ হাসিনাকে নামিয়ে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতেন। মান্নার মতো আরেক সংঘ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ ইব্রাহিম। মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন পাকিস্তান আর্মিতে যোগ দেন এবং কমিশন লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিয়ার মতো বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং বীরপ্রতীক খেতাবও অর্জন করেন। কথায় আছে কোন এক বিশেষ প্রাণীর লেজ ৯০ বছর চোঙ্গায় ঢুকিয়ে রাখার পর ছেড়ে দিলেও সেই পূর্ববত বাঁকাই থাকে, সোজা হয় না। মান্নার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে কল্যাণ পার্টি নামে দল করে সরাসরি বেগম জিয়ার জোটে ঢুকেছেন। ইসলামী ছাত্র সংঘও যে কতখানি হিংস্র ছিল তা-এর বর্তমান সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির দেখলেই বোঝা যায়। একাত্তরে ওই ছাত্র সংঘই আলবদর, আলশামস বানিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিল। তখন নেতা ছিল নিজামী-মুজাহিদ, এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে। এরাই হয়ত মান্নার মূল নেতা। আগেই বলেছি সাদেক হোসেন খোকা আমেরিকায় পলাতক। তাঁর সঙ্গে সাবেক সংঘ সদস্য মান্নার টেলি-কথোপকথন দিকে তাকালে দেখা যাবে। যেমন মান্না : ‘ধরেন ইউনিভার্সিটিতে একটা মিছিল হলো। ধরেন যা মারামারি বাইরে হচ্ছে। ইউনিভার্সিটিতে মারামারিতে গেল দুই... তিনটা ... কি আর করা যাবে? কিন্তু ... আপনারা গবর্নমেন্টকে শেইক করে ফেললেন।’ ‘আমি মাস তিনকে আগে ... ‘কে’ বলেছিলাম যে কোনভাবেই হোক আপনি আগে ইউনিভার্সিটিতে দুই তিনটা হল দখল করেন। ... একটা বড় ধরনের কিছু হলে ঘটনাই পাল্টে যাবে। গবর্নমেন্ট সুতার ওপর ঝুলছে এখন। যে টোনে কথা বলতে দেখছি তাতে আমার মনে হয়েছে, গবর্নমেন্ট রিয়াল একটা শেইক পজিশান আছে। আমি জানি না কেরির সঙ্গে ওখানে কি কথা হচ্ছে বা হবে। দ্যাট উইল বি ভেরি ভাইটাল।’ কী হিংস্র! ঠিক খালেদা জিয়ার মতোই মনে হয় না-কি? বলছে ‘মারামারিতে গেল দুই তিনটা। এই ‘গেল’-এর অর্থ বুঝতে কষ্ট হয় না। কি আর করা যাবে...’ বিষয়টা ঠিক এ রকম যে, খালেদা জিয়ার যেমন বোমা, পেট্রোলবোমা, গানপাউডারে প্রতিদিন মানুষ মরছে, নারী-শিশু মরছে, তাও আবার পেট্রোলবোমার আগুনে জ্বলে-পুড়ে, সহস্রাধিক আগুনে পোড়া মানুষ ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তাতে তার কিছু আসে-যায় না? তাঁর ক্ষমতা চাই। ঠিক মান্নারও ইউনিভার্সিটি ছাত্র নিহত হলে ‘তাতে কি’? কিছু আসে যায় না। মান্না তাঁর নাগরিক ঐক্যের মিছিল করার জন্যে সাদেক হোসেন খোকার কাছে লোক চেয়েছেন। অথচ এই সাদেক হোসেন খোকা ঢাকা সিটির ১০ বছরের মেয়র, বিএনপির ঢাকার সভাপতি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পতনে ‘দা-কুড়াল-খোন্তা’ নিয়ে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে নয়াপল্টনে রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেই যে আমেরিকায় পালালেন আর ফিরলেন না। যাঁরা নিজেদের (২০ দল) কর্মসূচী পালনেই লোক নামাতে পারেন না, দলীয় নেতাকর্মীরা পর্যন্ত ঘরে বসে হিন্দী সিরিয়াল-সিনেমা দেখে, তারা কিভাবে মান্নার মিছিলে লোক যোগান দেবেন? তবে হ্যাঁ, নাগরিক ঐক্যের ছত্রচ্ছায়ায় পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারী শিবির-ছাত্রদল জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের নামালেও নামাতে পারেন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্যেÑ মান্নার ভাষায় সরকারকে ‘শেইক’ করার জন্যে। মান্না খোকাকে ফোনালাপে বলছেনÑ ‘... মাঝে আপনি দূর থেকেও যেটুকু কিছু একটা ‘ইয়ে’ করেছেন আমার উপকার হয়েছে।’ এই ‘ইয়ে’টা কী? এটা ইসলামী ব্যাংকের ‘ইয়ে’ও হতে পারে, রাস্তায় বাসে-ট্রাকে-ট্রেনে ছুড়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার ‘ইয়ে’ও হতে পারে। ইঙ্গিতটা তেমনই। একপর্যায়ে মান্না বলছেন, তিনি এবং নূরুল কবীর (নিউএজ সম্পাদক) বিভিন্ন চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে একটা ব্যাপার প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, বর্তমান সংকটের মূল ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচন। তিনি এবং নূরুল কবীর এরই মধ্যে অলি আহাদের মেয়ে (নাম বলেনি) এবং ব্যারিস্টার পারভেজসহ ৫-৭টা ছেলেমেয়েকে তৈরি করেছেন যাদের বিভিন্ন চ্যানেলের টকশোতে পাঠিয়ে জনমত সৃষ্টি করবেন। আগেও দেখা গেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের (শেখ হাসিনার কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত) টকশোগুলোতে মান্না-কবীর-আসিফ নজরুলদেরই প্রাধান্য। বেশি বেশি কথা বলতে সুযোগ পেতেন এমাজউদ্দিন আহমেদ, ফেরদৌস হোসেন, আমেনা মহসিন, মাহবুবুল্লাহ, মাহফুজুল্লাহ, কাজী সিরাজ, ফরহাদ মাযহার, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী স্বাধীনতা-বিরোধীরা। কিছুসংখ্যক ছোকরা ব্যারিস্টারও রয়েছেন। তাঁরা সবাই একটা বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিতেন তা হলো পেট্রোলবোমা, বোমা, গানপাউডারে যানবাহন পোড়ানো, পুড়িয়ে মানুষ হত্যার পেছনে সরকারের হাত আছে অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ এ কাজ করছে। খালেদা জিয়া বা ২০ দলীয় জোট দায়ী নয়, বরং তারা সরকারের ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছে? অর্থাৎ যেভাবেই হোক দায়টা খালেদা জিয়ার কাঁধ থেকে সরাতে হবে। অথচ এই লোকগুলো মা-বেটার মতো অশিক্ষিত-মূর্খ নন, কারও কারও বিদেশের ডিগ্রীও আছে। সাংবাদিকরা তো তুলনাহীন, জাতির বিবেক (না-কি বিবাদ), সর্বজান্তা, জ্যাক অব অল ট্রেডÑ একটা ট্রেডও ভাল জানেন না, তাই ‘অল’ বলে নিজেদের মূর্খতা ঢাকা দিচ্ছেন। এই শিক্ষিত মানুষগুলো (?) প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলছেন, নিজের পেশার সঙ্গে মুনাফেকি করছেন, এ জন্য তাদের কোন অপরাধ বোধ নেই। যেমন ডেইলি স্টার পত্রিকার ১১ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় ৩-এর পাতা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’-এর একটি পোস্টার, যা ফার্মগেটের একটি দেয়ালে সাঁটানো ছিল, এর পূর্ণ অবয়বে ছবি ছেপেছে। যাতে লেখাÑ ‘হে দেশবাসী, অনতিবিলম্বে জালিম হাসিনা ও বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পতন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের সংগঠিত করতে হবে। এই কাজে হিযবুত তাহরীরকে সহযোগিতা করুন এবং সক্রিয়ভাবে জড়িত হউন।’ ডেইলি স্টার এই পোস্টারটি ছেপে বলেছেÑ ‘ধর্মান্ধরা তাদের কুৎসিত চেহারা নিয়ে আবার প্রকাশ্যে এসেছে।’ স্টার বলছে, তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এটা ছেপেছে। এটা কি ধোপে টেকে? প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, এজন্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তখন সম্পাদক মাহফুজ আনাম ক্ষেপে গেলেন। প্রথমে স্বনামে মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপলেন এই বলে যে, সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন। তাতেও শান্তি পেলেন না, নিজের স্বাক্ষরে সম্পাদক পরিষদের সভায় বক্তব্যের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে পাঠালেন। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার এবং সদস্য শ্যামল দত্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বললেন, কোন সভা না করেই এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কথা হলো ডেইলি স্টার যতই বলুক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ছেপেছে। কিন্তু দেয়ালে সাঁটা একটি পোস্টার কতজন দেখতÑ ১০০, ২০০, ৩০০-এর বেশি নিশ্চয় না। স্টারের দাবি অনুযায়ী তাদের সার্কুলেশন ৬০ হাজার, অর্থাৎ পাঠক কমপক্ষে ৫ জন করে তিন লাখ। তাছাড়া এই কাগজটি বিদেশীরা পড়ে। হিযবুত তাহরীর যেখানে পৌঁছতে পারত না ডেইলি স্টার কৌশলে সেখানে পৌঁছে দিল। নয় কি? ডাকসাইটে সাবেক আমলা ড. আকবর আলী খান, ড. সা’দত হোসেন, সিভিল পার্সোনালিটি এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. রাশেদা কে চৌধুরীÑ তাদের কথা নাইবা বললাম। এদের চারজন একবার মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের এডভাইজার হয়েছিলেন, ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। এখন অবশ্য টকশোতে বসে জ্ঞানদান করছেন। কথায় আছে, মাছের পচন ধরে মাথা থেকে। আমার মনে হয়, মাছের মতোই এসব বুদ্ধিজীবীদেরও মাথায় পচন ধরেছে। এতক্ষণ যাঁদের নাম বললাম এবং যাঁদের নাম বললাম না এরা যে ভাল মানুষ নন এটা এখন স্পষ্ট । এরা মতলব ছাড়া কোন কথা বলেন না। এরা হরতাল-অবরোধের নামে খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসকে কোনভাবেই সন্ত্রাস বা সহিংসতা বলছেন না। বলছেন রাজনৈতিক সঙ্কট। সঙ্গে সঙ্গে ‘সংলাপ’ ‘সংলাপ’ (মূলত সঙদের লাফ) বলে কৌশলে খালেদাকে দায়মুক্তি দিচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার কাতারে দাঁড় করাতে চান এবং খালেদা জিয়ার পেছনে পেছনে নিজেরাও জাতে উঠতে চান। অথচ শেখ হাসিনার তুলনা হতে পারে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কেবল ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে, অন্য কারও সঙ্গে নয়। কী শিক্ষা-দীক্ষা-মননে, কী রাষ্ট্র পরিচালনায়, কী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায়Ñ রাজনৈতিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে সর্বক্ষেত্রে। বস্তুত. মাহমুদুর রহমান মান্নার মতোই এসব মানুষদের মুখোশ একে একে খসে পড়তে শুরু করেছে। ঢাকা-২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×