ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৪০০তম ম্যাচে সেঞ্চুরির মহাকাব্য সাঙ্গাকারার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

৪০০তম ম্যাচে সেঞ্চুরির মহাকাব্য সাঙ্গাকারার

জাহিদুল আলম জয় ॥ কোন প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারতেœ দিলশান ব্যাট হাতে যে মহাকাব্য রচনা করেছেন তার প্রশংসার ভাষা খুঁজে পাননি কেউই! ম্যাচ চলাকালীন টিভি ধারাভাষ্যকারদেরও ছিল একই অবস্থা। প্রশংসা স্রোতের এই কারণ সাঙ্গাকারা ও দিলশানের চোখ জুড়ানো ব্যাটিং। দুই মহাতারকাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তুলে নেন সেঞ্চুরি। আর এই কীর্তিগাথা গড়ার পথে দু’জনই অংশীদার হয়েছেন গৌরবময় রেকর্ডের। উপমহাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪০০তম ম্যাচ খেলতে নামেন লঙ্কার সাবেক অধিনায়ক সাঙ্গাকারা। বাংলাদেশী ফিল্ডারদের বদান্যতায় দুইবার জীবন পেয়ে এলিট ক্লাবে নাম লেখানো স্মরণীয় করেন শতক হাঁকিয়ে। ইনিংসের ৩৩ ও ৪২ ওভারে সাঙ্গার ক্যাচ ছাড়েন টাইগার ফিল্ডাররা। তবে ৪২তম ওভারে পয়েন্টে মুমিনুল যেভাবে তাকে জীবন দেন, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! নতুন জীবন পাওয়া তারকা এই ব্যাটসম্যান মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শেষ পর্যন্ত খেলেন হার না মানা ১০৫ রানের ইনিংস। এটি একদিবসীয় ক্রিকেটে ৩৭ বছর বয়সী সাঙ্গার ২২তম সেঞ্চুরি। ৭৩ বলে সাঙ্গাকারার এই সেঞ্চুরিটি তার ক্যারিয়ারের আবার দ্রুততম সেঞ্চুরিও। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে বরাবরই সফল সাঙ্গাকারা। লাল-সবুজের দেশের বিরুদ্ধে পঞ্চম শতক তুলে নিয়ে সে স্বাক্ষর আরেকবার রেখেছেন তিনি। দিলশানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দেশের হয়ে রেকর্ড গড়েন সাঙ্গা। দু’জন মিলে করেন হার না মানা ২১০ রান। যা বিশ্বকাপ ক্রিকেট তো বটেই, একদিনের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার পক্ষে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান। আর রানের দিক দিয়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে নবম সেরা জুটি এটি। লঙ্কানদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড ২৮৬ রানের। ২০০৬ সালের ১ জুলাই লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রেকর্ড এই জুটি গড়েছিলেন উপল থারাঙ্গা ও সনাথ জয়সুরিয়া। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ২৪ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে তারা করেন ৩৭২ রান। রানের হিসেবে সাঙ্গাকারা ও দিলশানের ২১০ রান বিশ্বকাপে ১১তম সেরা জুটি। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্যাম্পিংয়ের রেকর্ডও গড়েছেন উইকেটরক্ষক সাঙ্গা। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফিকে ম্যাচসেরা দিলশানের বলে স্ট্যাম্পিং করে এ কৃতিত্ব দেখান তিনি। ইতিহাসের ৪র্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০ ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সাঙ্গাকারা। এর আগে এই ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকর (৪৬৩) এবং সাঙ্গাকারার দুই স্বদেশী সনাথ জয়সুরিয়া (৪৪৫) ও মাহেলা জয়াবর্ধনে (৪৪৪*)। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেকের পর ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের শাসন করেছেন সাঙ্গাকারা। মাশরাফি, সাকিব, তাসকিন, রুবেলদের তুলোধোনা করে আরেকবার দেখিয়েছেন নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেঞ্চুরি ছিল না সাঙ্গার। শেষ অবধি সেই অপূর্ণতাকেও পূর্ণতা দিয়েছেন তারকা এই ব্যাটসম্যান। এই ইনিংসের সুবাদে বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড বুকে ছয় নম্বরে উঠে এসেছেন সাঙ্গাকারা। এই তালিকায় সবার ওপরে আছেন ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকর। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে ৪৫ ম্যাচে শচীনের সংগ্রহ ২২৭৮ রান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিংয়ের রান ৪৬ ম্যাচে ১৭৪৩ রান। তিনে থাকা ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার রান ৩৪ ম্যাচে ১২২৫। আর সাঙ্গাকারার ভা-ারে জমা ৩৩ ম্যাচে ১১৪২ রান। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার দিক দিয়ে সাঙ্গাকারার অবস্থান ১৫তম। ১৯৯৬-২০১১ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৬ ম্যাচ খেলেছেন পন্টিং। ৪৫ ম্যাচ খেলে এ তালিকায় শচীনের অবস্থান দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার সেঞ্চুরি করার পর সাঙ্গাকারার ওয়ানডে ক্রিকেটে রানসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৮৪৪। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ২২ ও হাফসেঞ্চুরি ৯৩টি। শুধু তাই নয় ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানও সাঙ্গাকারার। ৪৬৩ ম্যাচে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীনের রান ১৮৪২৬। আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বিশ্বকাপের পরই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। বিদায়ক্ষণটা তাই স্মরণীয় করে চলেছেন সাঙ্গাকারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুধু সেঞ্চুরি করেই থেমে যাননি দিলশান। তারকা এই ওপেনার করেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় দেড় শতাধিক রান। তার অপরাজিত ১৬১ রান আবার ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারসেরাও। এটি তার ক্যারিয়ারের ২১ নম্বর সেঞ্চুরি। এর আগে ৩৮ বছর বয়সী দিলশানের সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ১৬০। আক্রমণাত্মক এ ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চতুর্থবারের মতো তিন অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছেন। দিলশানের হার না মানা ১৬১ রান বিশ্বকাপে ৯ম সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস।
×