ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাচ মিসের মাসুল দিল মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ক্যাচ মিসের মাসুল দিল মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রিকেট খেলায় চিরন্তন একটি কথাই আছে, ‘ক্যাচ মিস, ম্যাচ মিস।’ বৃহস্পতিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাই করল বাংলাদেশ। শুধু কী চার-পাঁচটি ক্যাচ মিস হলো; ফিল্ডিং মিস হলো, রান আউট করতে পারল না ফিল্ডাররা, স্ট্যাম্পিং মিস হলো। এত ভুলের পর কী আর ম্যাচে টিকে থাকা যায়। এরপর ব্যাটিং ব্যর্থতা হলে তো কথাই নেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাই পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। তিলকারতেœ দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারার যথাক্রমে অপরাজিত ১৬১ ও ১০৫ রানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটেই এই দুইজনের ২১০ রানের জুটিই ডুবিয়ে দিল বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জুটিই গড়ে ফেললেন দিলশান-সাঙ্গাকারা। বাংলাদেশের হারও হলো ৯২ রানের ব্যবধানে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড ঐতিহ্যে ভরপুর। সেই মাঠে প্রথমবার খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারেই ঐতিহ্যে ঘেরা মাঠে ভাল ফল বয়ে আনবে কি, উল্টো হতাশার যেন শেষ নেই। এক রুবেল হোসেন ছাড়া আর কোন বোলারই উইকেট নিতে পারলেন না! রানও দিলেন একেক বোলার ভূরিভূরি। কত আশা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে জেতার পর যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে; তা দিয়েই ভাল করবে বাংলাদেশ। অথচ মাঠে যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের খুঁজেই পাওয়া গেল না। টস জিতে আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপে এবার যে অবস্থা, মেলবোর্নে যে দল আগে ব্যাট করে তারাই ৩০০ রানের উপরে করে। জিতেও বড় ব্যবধানেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া যেমন ৩৪২ রান করে ১১১ রানে জিতেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতও যেমন ৩০৭ রান করে ১৩০ রানে জিতেছে, শ্রীলঙ্কাও সেই পথেই হেঁটেছে। ১৪৬ বলে ২২ চারে করা দিলশানের অপরাজিত ১৬১ রানের (২১তম ওয়ানডে শতক) সঙ্গে সাঙ্গাকারার ৭৬ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্কায় করা অপরাজিত ১০৫ রানেই (২২তম ওয়ানডে শতক) ৫০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৩২ রান করেছে শ্রীলঙ্কা। একমাত্র আউট হওয়া লাহিরু থিরিমান্নের ব্যাট থেকেও আসে ৫২ রান। বাংলাদেশ বোলারদের যেন এদিন ‘পাড়া-মহল্লার’ বোলার বানিয়ে ফেলেন দিলশান-সাঙ্গাকারা। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মিলে এমন ব্যাটিংই করেছেন, মাশরাফি, সাকিব, তাসকিনরা রুখতেই পারেননি। রানও দিয়েছেন অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি হয়েছে তাসকিনের বলে। ১৩ চার হয়েছে। রানও দিয়েছেন এ পেসারই সবচেয়ে বেশি (১০ ওভারে ৮২ রান)। এ বিশাল রান অতিক্রম করে কী আর বাংলাদেশ জিতবে? তা যেন কেউ কল্পনাই করেনি। তাই বলে ২৪০ রানেই গুটিয়ে যাবে দল! মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠে যে রান হচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছে। অনেক বড় মাঠ। ছক্কা হাঁকানো কঠিন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার চেয়ে দুটি ছক্কা (৩ ছক্কা) বেশিই হাঁকিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের যে টিকে থাকতে হবে, তাই করতে পারেননি। সাব্বির রহমান রুম্মন শুধু অর্ধশতক (৫৩ রান) করতে পেরেছেন। লাসিথ মালিঙ্গা (৩/৩৫), দিলশান (২/৩৫), সুরাঙ্গা লাকমলদের (২/৪৯) সামনে কুলিয়েই উঠতে পারলেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। যাদের নিয়ে এত ভরসা, সেই তামিম (০), এনামুল (২৯), সৌম্য (২৫), মুমিনুল (১), মাহমুদুল্লাহ (২৮), সাকিব (৪৬), মুশফিক (৩৬) নীরব ভূমিকাতেই থাকেন। এত বড় স্কোর অতিক্রম করতে গেলে লাগে একটি বড় ইনিংসের। বড় জুটিরও। একটিরও দেখা মিলল না। ৪৭ ওভারে অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। হারও হলো নিয়তি। সাঙ্গাকারা কত বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান, তা এর আগেও টের পেয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এ ব্যাটসম্যানের ক্যাচটি লুফে নিতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। তখন সাঙ্গাকারার ছিল ২৩ রান! নিজে বল করে, নিজেই সাঙ্গাকারার মতো বড় মাপের ব্যাটসম্যানের ক্যাচটি তালুবন্দী করতে পারেননি। ৬০ রানের সময়ও সাঙ্গাকারা আবারও ‘নতুন জীবন’ পেলেন। এবার রুবেলের বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো মুমিনুল হক সহজ ক্যাচটি হাতছাড়া করলেন। সেই যে সুযোগ পেয়ে গেলেন। আর কোন সুযোগই দিলেন না সাঙ্গাকারা। নিজের ৪০০তম ম্যাচে এসে আরেকটি শতক করে ফেললেন। ৩৮ শতক করা সনাথ জয়সুরিয়ার পর এখন সাঙ্গাকারাই (২২ শতক) শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শতক করার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। তৃতীয় স্থানে আবার যিনি আছেন, সেই দিলশান বাংলাদেশ ফিল্ডারদের অবশ্য কোন সুযোগই দিলেন না। সুন্দর ইনিংস খেলে গেছেন। একটি রান আউট হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া অবশ্য করেছেন বিজয়। কিন্তু সেটি আর হয়নি। ২১তম শতক তুলে নিয়েছেন দিলশান। তবে শুরুতে যদি থিরিমান্নের দুটি ক্যাচের একটিও লুফে নিতে পারতেন এনামুল হক বিজয়, তাহলে খেলার রূপ অন্যরকম হতেও পারত। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ও নবম ওভারে থিরিমান্নের ক্যাচটি সিøপে ধরে ফেলতে পারলেই হতো। থিরিমান্নে দ্রুত আউট হলে দিলশানকেও হয়ত আউট করা যেত। তখন শ্রীলঙ্কার রানের লাগাম টেনে ধরা যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ফিল্ডাররা এদিন খেলতে নেমেছিলেন, না কি করতে নেমেছিলেন; তা কেউই বুঝতে পারেনি। না হলে এত বেশি ফিল্ডিং দুর্বলতা এর আগে কখনই দেখা যায়নি। বিজয় দুটি ক্যাচ মিস করেছেন, মুমিনুলও তাই। বিজয় একটি রান আউট করতে পারেননি। আবার মুশফিকুর রহীমও স্ট্যাম্পিং করতে পারেননি। এত ভুল হলে খেলায় কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। বাংলাদেশ তাই নিয়ন্ত্রণ রাখতেও পারেনি। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং শেষে যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হলো, রানের খাতা খোলার আগেই মালিঙ্গার গতির কাছে পরাস্ত হয়ে তামিম আউট হয়ে যেতেই যেন শুধু হারের ব্যবধান কমানোই বাংলাদেশের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য-বিজয়ের ৪০, চতুর্থ উইকেটে বিজয়-মাহমুদুল্লাহর ৪৩, ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-সাকিবের ৬৪ ও সপ্তম উইকেটে মুশফিক-সাব্বিরের ৪৪ রানের ছোট্ট ছোট্ট জুটিতে সেই ব্যবধান কমলও। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোন পরশই মিলল না। হারও হলো বড় ব্যবধানেই।
×