ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বকুলতলায় জাগরণী পরিবেশনা ‘অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্তমাঝে’

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বকুলতলায় জাগরণী পরিবেশনা ‘অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্তমাঝে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বসন্তের পড়ন্ত বিকেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বৃহস্পতিবার বইছে সুরের অনুরণন। গানের বাণীতে উঠে এলো সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণ। সুরাইয়া পারভীন গেয়ে শোনান, চাই না তো সন্ত্রাস/চাই না বারুদের কালো ধোঁয়া ঢেকে দিক সবুজ প্রকৃতি আর নীলাকাশ। উদীচীর শিল্পীগোষ্ঠীর এই শিল্পীর কণ্ঠে গীত হয় আরেকটি গান, আমরা পুবে-পশ্চিমে আকাশে বিদ্যুতে উত্তরে দক্ষিণে হাসিতে সঙ্গীতে নদীর কলতানে আমরা/সাগরের গর্জনে চলি অবিরাম অগ্নি অক্ষরে মোদেরই নাম। আর এমন করেই বিকেল থেকে রাত অবধি প্রতিবাদী গানের সুর ও কবিতার ছন্দে উদ্দীপ্ত হলো চারুকলার বকুলতলা। কবিতা ও গানের সঙ্গে ছিল চলমান রাজনৈতিক নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের সোচ্চার উচ্চারণ। আন্দোলনের নামে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাগরণী পরিবেশনা দিয়ে সাজানো হয় ‘অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্ত মাঝে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি। আয়োজন করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১। বক্তাদের আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা ও কবিতা আবৃত্তি। মাতৃভূমির প্রতি মমতার বাণী উচ্চারণ করে বুলবুলাম ইসলাম গেয়ে শোনান, ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা/তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা। লাইসা আহমেদ লিসা গেয়ে শোনান, আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে। মাহমুদুল হাসানের কণ্ঠে গীত হয়, অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা। এছাড়াও একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রোকাইয়া হাসিনা, ইলোরা আহমেদ, সাদী মহম্মদ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনে অংশ নেয় ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ইকবাল বাহার চৌধুরী। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে কণ্ঠশীলন ও জিয়নকাঠির বাকশিল্পীরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে উদীচীর সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, দুই মাস ধরে হরতাল-অবরোধ দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। আর এই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে বাঁচাতে কাজ করছে দেশী-বিদেশী অপশক্তি। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কেন তাদের প্রতিরোধে রাজপথে নামছে না? এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, রাজনীতি যখন শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয় তখন রাজপথে কেউ নামতে চায় না। তাই স্বার্থের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণমানুষকে জাগিয়ে তোলার বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষকে নিয়েই এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অন্য বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নৃশংসতা ও বর্বরতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তারা পাকিস্তানী ভাবাদর্শের দীক্ষায় এদেশে জঙ্গীগোষ্ঠীর শাসন কায়েম করতে চায়। সাধারণ মানুষকে নিয়ে এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। গড়তে হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। আলোচনায় অংশ নেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ডাঃ সারওয়ার আলী, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারে মেয়ে অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা কামাল পাশাপাশি চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তৌহিদ রেজা নূর।
×