ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০ পেট্রোলবোমাসহ ছাত্রদলের দুই নেতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

২০ পেট্রোলবোমাসহ ছাত্রদলের দুই নেতা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার বিএনপির অন্যতম প্রধান অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি ২০টি পেট্রোলবোমাসহ ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়েছে। অবরোধ-হরতালে ঢাকায় কোন প্রভাব না থাকায় গ্রেফতারকৃতরা উদ্ধারকৃত পেট্রোলবোমা দিয়ে বহু মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ থেকে ১২ জন প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতার সরাসরি নির্দেশে এমন ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা চলছিল। পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত বুধবার রাত আটটার দিকে রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন কল্যাণপুরের গাবতলী বসুপাড়ায় অবস্থিত রোজিনা পরিবহনের যাত্রীবাহী দোতলা বাস কাউন্টারের সামনে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদ নাসের জনি ও মহরম আলীর নেতৃত্বে একদল ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে বাস কাউন্টারের সামনে থেকে ২০টি পেট্রোলবোমাসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার হয় ছাত্রদলের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম- কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ সব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, দলীয় হাইকমান্ডের পরামর্শে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা হয়। ব্যাপক নাশকতা চালাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদসহ ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নেয়। ঢাকায় অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে সারাদেশে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল অবস্থানকারীদের। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ২০টি পেট্রোলবোমা। অন্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালিয়ে যাওয়া ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কাছেও বিপুল পরিমাণ পেট্রোলবোমা ছিল। তাদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি হলেও তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। সাভার ও ঢাকাতে অবস্থান করতেন। জাকির হোসেনের নির্দেশেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থানরত তার সহযোগীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পেট্রোল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। ইতোপূর্বে জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ডাকা ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিভাগের তালায় সুপার গ্লু আঠা দিয়ে তালা অকোজো করে দেয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করানোর সঙ্গে জড়িত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকদের ফোনে ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি সংবলিত উড়ো চিঠি পাঠানোর সঙ্গেও জড়িত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাশাপাশি সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের অনেক ঘটনায় সে সরাসরি জড়িত। আর গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার বাসিন্দা গ্রেফতারকৃত অপর আসামি মৃণাল কান্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক। তিনি গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেনের ঘনিষ্ঠ। তিনি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মারাত্মক নাশকতা চালাতে এবং নাশকতা চালানোর পুরো প্রক্রিয়াটি মনিটরিং করতে ছাত্রদলের সভাপতিসহ ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতারা সশরীরে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা, যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত ঘটনায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি। প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীতে ছাত্রশিবিরের বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। কারখানা থেকে ১৩০টি শক্তিশালী তাজা বোমা ও গান পাউডারসহ বোমা তৈরির নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। গ্রেফতার হয় ছাত্রশিবিরের বনানী থানা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৫ জন। পরদিন ২১ জানুয়ারি লালবাগ থানাধীন ঢাকেশ্বরী এলাকার ৩১ নম্বর বাড়িতে বোমা তৈরির সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পীর হাতের কব্জি উড়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাপ্পীর মৃত্যু হয়। আহত হয় বাপ্পীর আত্মীয় হ্যাপি (১৪), রিপন (৬) ও রিপনের মা ঝুমুর বেগম (২২)। এছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাজারীবাগের ভাগলপুর লেনের ১৩৬ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হয় বোমাবাজ ও স্থানীয় ছাত্রদল কর্মী পাম্প অপারেটর জসিম উদ্দিন। আহত হয় হাজারীবাগ থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু হোসেন (২৫)। পুলিশ বাড়ি থেকে তাজা বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। রাজুর মা ফাহমিদা হককে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বোমাবাজি ও বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৪৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। যার অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী অবরোধে রাজধানীতে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এজন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হাইকমান্ড চরম অসন্তুষ্ট। দলীয় হাইকমান্ডের তরফ থেকে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে রাজধানী অচল করে দেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। এমন নির্দেশের পরই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় থাকা ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবির বোমা তৈরির কারখানাগুলো পুরোদমে সচল হয়ে উঠে। পেট্রোলবোমা আর ককটেল হামলা করে রাজধানীতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়ে পুরোদেশে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলতে থাকে। ব্যাপক নাশকতা চালানোর চেষ্টার সময়ই বুধবার ছাত্রদলের দুই নেতা ২০টি পেট্রোলবোমাসহ গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
×