ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দোকানে দোকানে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার ॥ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

প্রেস রিলিজের হরতাল অবরোধ মানবেন না ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রেস রিলিজের হরতাল অবরোধ মানবেন না ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ বিএনপি-জামায়াতের প্রেস রিলিজনির্ভর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী মানছে না ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। ক্রেতা সমাগম বাড়ায় মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে বেচাবিক্রি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো। এজন্য প্রতিটি মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলের সামনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ব্যানার দেয়া হয়েছে। হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে ওই ব্যানারে। এছাড়া অজ্ঞাত স্থান থেকে যারা হরতাল আহ্বান করছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি রয়েছে ব্যবসায়ীদের। দেশের বিভিন্ন শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, হরতাল-অবরোধে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ যাতে আর না বাড়ে সেজন্য ব্যবসায়ীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। গায়েবি প্রেস রিলিজনির্ভর কর্মসূচী তাঁরা আর মানবেন না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এভাবে প্রেস রিলিজ দিয়ে তো কোন কর্মসূচী আহ্বান করা যায় না। জঙ্গী সংগঠন যে স্টাইলে আত্মগোপনে থেকে মিডিয়ায় বার্তা পাঠিয়ে থাকে, বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের কাছে ব্যবসায়ীদের সেটা প্রত্যাশা নয়। তারা যা করছে তা দেশের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। সর্বশেষ মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাদেক হোসেন খোকার মধ্যে যে ভাইবার কথোপকথন হয়েছে তা মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। এটা তো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। তাই তাদের কর্মসূচীকে ঘৃণা জানাই। কোন ব্যবসায়ী আর তাদের কর্মসূচীর সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, এটা কোন কর্মসূচীই হতে পারে না। এখন ব্যবসায়ীরা এই কর্মসূচী আর গ্রহণ করছে না। হরতাল-অবরোধের মধ্যেই বাণিজ্যিক কর্মকা- ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাই এখন নিজেদের স্বার্থেই দোকানপাট খোলা রেখে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে টানা হরতাল-অবরোধ পালন করছে। এই হরতাল-অবরোধে ইতোমধ্যে শতাধিক নিরীহ মানুষ পেট্রোলবোমায় প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থনীতিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন বাস্তবতায় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচী রুখে দিতে সাধারণ মানুষও সোচ্চার হয়ে উঠছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজ ও পিকেটাররা গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়াসহ মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সতর্ক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। ক্রেতাদের নির্ভয়ে মার্কেটে আসার অনুরোধ করেছে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কেটগুলোতে নিজস্ব নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে বিএনপি জোটের ডাকা এই কর্মসূচী মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, অজ্ঞাত স্থান থেকে যেসব কর্মসূচী দেয়া হচ্ছে তা মানছে না দোকান মালিক সমিতি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের দোকানপাট খোলা রেখে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্রেতা সমাগম বাড়ায় বেচাবিক্রিও আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের নামে কারা প্রেস রিলিজ দিয়ে কর্মসূচী আহ্বান করছে তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় আনা গেলে হরতাল-অবরোধ আর কেউ মানবে না। এদিকে, হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীরা সারাদেশে জাতীয় পতাকা হাতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ গণঅনশন কর্মসূচী পালন করেছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেও স্মারকলিপি দিয়েছে বিজিএমইএ। কিন্তু অজ্ঞাত স্থান থেকে লাগাতার এই কর্মসূচী দেয়ায় বিজিএমইএ ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও পোশাক খাতের স্বাভাবিক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যে বিজিএমইএর সামনে গণঅনশন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কখনই হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচী সমর্থন করে না।
×