ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোর্ট থেকে পরোয়ানা নিয়ে থানায় রওনা;###;পরোয়ানা হাতে পেলেই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ;###;এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় এ পরোয়ানা ;###;পরোয়ানা হাতে পেলেই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ

খালেদা কালও যাননি আদালতে ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা কালও যাননি আদালতে ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানা

আরাফাত মুন্না ॥ এতিমের সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ তিন জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বুধবার তিন জনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খালেদা ছাড়া বাকি দু’জন হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। খালেদার আইনজীবীরা পরে পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করলে আদালত তাও নাকচ করে দেয়। এ দিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতেই জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার বাদী হারুন অর রশীদের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। আসামিরা উপস্থিত না থাকায় প্রথম সাক্ষীর জেরা বাতিল করে পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দী শোনার জন্য আগামী ৪ মার্চ দিন ধার্য করেন বিচারক। দুদকের আইনজীবীর আবেদনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও ওই দিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয় আদালত। তারেক চিকিৎসার কথা বলে উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এতিমের টাকা আত্মসাতের দুই দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এ দুটি মামলার বিচার চলছে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে। এ পর্যন্ত এ দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমে মোট ৬৩ দিন আদালত বসেছে, তবে খালেদা জিয়া হাজির ছিলেন মাত্র সাত দিন। নিজের দলের ডাকা হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানানোর মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ফলে মামলার প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ করতেই সময় লেগেছে ছয় মাসেরও বেশি। তাদের এ ধরনের কর্মকা-কে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে দুটি সময়ের আবেদন জানান। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাক্ষ্যগ্রহণ অব্যাহত রাখার আবেদন জানান। বেলা পৌনে এগারোটার দিকে এসব আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে দুই আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁর এবং দীর্ঘদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় অন্য দুজনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আদালত আদেশে জানায়, গত ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বুধবার তাঁকে অবশ্যই হাজির করাবেন বলে জানিয়েছিলেন। জামিনদাররা সে কথা রাখেননি। এছাড়া মামলা দুটির ৬৩ ধার্য তারিখে তিনি মাত্র সাত বার আদালতে হাজির হয়েছেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, নিরাপত্তার কারণে আদালতে যাননি বেগম জিয়া। তাঁরা দুই কারণে দুটি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানাটি আসামিদের বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ট থানায় যাবে। থানা পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সময়ের আবেদন জানানোর পরও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এখানে বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পাননি বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবির। ওয়ারেন্টের কপি হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে বুধবার বিকেলেই ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের আদালত থেকে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার উদ্দেশে রওনা হন আদালতের পেশকার আরিফুল ইসলাম ও পুলিশের ডিসির সহকারী কনস্টেবল তাজুল ইসলাম। তবে রাত দেড়টায় পরোয়ানা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেননি তিন থানা কর্তৃপক্ষ। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোকের কথা জানিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি আদালতে না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান খালেদা জিয়া। বিচারক সে দিন তা মঞ্জুর করে সাক্ষ্য শোনার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারিও আদালতে যাননি খালেদা। ওই দিন আদালতে হাজির না হওয়ার কারণ হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে খালেদাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার কথা বলেছিলেন আইনজীবীরা। বিচারক তাঁকে সেদিনের হাজিরা থেকে রেহাই দিলেও সময়ের আবেদন নাকচ করে বাদীর সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ায় আদেশ দেন। এ নিয়ে আদালতে হৈ চৈ হয় এবং খালেদার আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানান। তার আগে ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসেবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবু আহমেদ জমাদারকে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন। সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে বকশীবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ৭ জানুয়ারি ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক। ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হলেও খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে ফের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের গুলশানের কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বিএনপি নেত্রী। পুলিশী ‘অবরোধ’ সরিয়ে নেয়া হলেও তিনি বাসায় ফেরেননি। নিজের দলের ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে বুধবারও খালেদা জিয়া আদালতে না এসে সাক্ষ্য পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে আবারও আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে লিভ টু আপীল এবং হরতাল ও অবরোধের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে এই আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক দুই আবেদনই খারিজ করে দেন। টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায় জামিন বাতিল করে তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবং ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে এ দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতবছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিচার শুরু করে। এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও তিনজন আসামি হিসেবে রয়েছেন। এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠন ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আপীল বিভাগে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়। খালেদার অনুপস্থিতিতেই গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় বাদী হারুন অর রশীদের জবানবন্দী শোনা শুরু করে আদালত। কিন্তু আসামিপক্ষ দফায় দফায় সময়ের আবেদন করায় তার সাক্ষ্য এখনও সমাপ্ত করা যায়নি। ৬৩ দিনের ৫৬ দিনই অনুপস্থিত খালেদা ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত শুনানি হয়েছে ৬৩ দিন। তবে এর মধ্যে মাত্র ৭ দিন আদালতে হাজির হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৫৬ দিনই আদালতে হাজির না হয়ে বার বার সময় আবেদন করেছেন তিনি। তাঁর এ ধরনের কর্মকা-কে বিচারকাজে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন। আদালতে আসতে তাঁর বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। তিনি আদালতে না আসতেই পারেন। তবে তাঁর পক্ষে তো কাউকে দায়িত্ব নিয়ে মামলা পরিচালনা করতে হবে। কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে যেসব আইনজীবীরা শুনানি করেন তাঁরা শুধু সময় আবেদনই করেন। কেউ দায়িত্ব নিয়ে মামলা পরিচালনা করেন না। তারেক রহমানের উদাহরণ দিয়ে কাজল বলেন, তারেক রহমান বিদেশে আছেন। আদালতে আসেন না। তবে তাঁর পক্ষে একজন আইনজীবী দায়িত্ব নিয়ে হাজিরা দেন। তাই আদালত তো তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন নাই। তারেক রহমানকে আদালতে হাজির করতে তাঁর আইনজীবীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন চাইলে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই সেখানে তাঁকে উপস্থিত থেকে আবেদন করতে হবে। দলের হরতালই অজুহাত ॥ নিজের দলের হরতাল ও অবরোধের অজুহাত দেখিয়েই আদালতে হাজিরা দেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলেন, যে দিন এই দুই দুর্নীতি মামলার শুনানি থাকে, কোন না কোনভাবে সে দিনই হরতাল আহ্বান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর আদালতে এসে সেই হরতালের অজুহাত দেখিয়ে সময় আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বুধবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাসহ দুটি সময় আবেদন করেন। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, বুধবার নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাননি খালেদা জিয়া। তারা দুই কারণে দুটি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়। মামলা বৃত্তান্ত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ॥ ২০১১ সালের ৮ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশীদ। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেনÑ খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন। অরফানেজ ট্রাস্ট ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশীদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন ছিলেন, তবে বুধবার খালেদাসহ তাদের জামিনও বাতিল করে আদালত। বাকি দুইজন পলাতক। টিএইচ খানের বাসায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বৈঠক ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের মোহাম্মদপুরের বাসায় এ বৈঠক হয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে অংশ নেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকের পর টিএইচ খানের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খন্দকার মাহবুব বলেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে খ্যাতিমান বিচারপতি টিএইচ খানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আগামী মার্চে সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো আমি সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্যানেলের জন্য দোয়া চাইতে এসেছি বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে। এর আগে, বিকেল থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের টিএইচ খানের বাসায় জড়ো হওয়ার খবরে বাসার চার পাশে অবস্থান নেয় র‌্যাবের কিছু সদস্য। রাত দেড়টায় পরোয়ানা পাওয়ার কথা অস্বীকার করে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আতিকুর রহমান ও রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, ‘এ ধরনের কাগজ আমরা এখনও পাইনি।’ গুলশান থানার ডিউটি অফিসার এসআই সুজনও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন বেগম জিয়া ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সনকে যে কোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে- এ লক্ষ্য সামনে রেখে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে পুলিশ। এজন্য পাঁচ শতাধিক মহিলা পুলিশকে তৈরি রাখা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার তিনি যদি আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন সেক্ষেত্রে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করার সমুদয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।
×