ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে এ আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং সকল প্রকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এ আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে এগিয়ে যেতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ২০১৪-’১৫ কোর্সে স্নাতক ডিগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন। খবর বাসস’র। অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক স্বাগত বক্তৃতা দেন। মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্তপ্রতীক হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য যা যা করা দরকার আমরা সবই করব, ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর প্রথম সরকারের মেয়াদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ডিফেন্স পলিসির অনুসরণে সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে অনেকগুলো ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সদ্য সমাপ্ত বিগত সরকারের মেয়াদে ফোর্সেস গোল ২০৩০’র আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বহু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। এবারও সরকার গঠনের পর উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ সীমিত। আর এ সীমিত সম্পদ দিয়েই আমরা একটি যুগোপযোগী, দক্ষ ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’ বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান উন্নত ও আধুনিক হবে, এ আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের সকল দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে- সমমর্যাদার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। তিনি বলেন, ‘মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অন্যান্য জাতিগঠনমূলক কাজে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন। তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা, গণতন্ত্রে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে নতুন মাত্রা ও বহুমাত্রিকতা যোগ হয়েছে। সময়ের এ চাহিদা পূরণে স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের সরকারের আমলে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, এমআইএসটি ও আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সময়ের পরিক্রমণে আমাদের সশস্র বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজ আন্তর্জাতিক পরিম-লে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের আগে বাংলাদেশকে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। শিক্ষাখাতে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কাছে ভিক্ষা করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলে নতুন প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চাই।’ শেখ হাসিনা সফলভাবে কোর্স সম্পন্নের জন্য স্নাতক ডিগ্রী অর্জনকারী কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পিএসসি ডিগ্রী সশস্ত্র বাহিনীর যে কোন অফিসারের জন্যই গৌরবের বিষয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২০১৪-২০১৫ কোর্সের স্নাতক ডিগ্রীপ্রাপ্তদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। এই কোর্সে মোট ২১৪ কর্মকর্তা স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১২০, নৌবাহিনী ২৩ ও বিমান বাহিনীর ১৯ জন এবং চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্দান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপিন্স, কোরিয়া, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়ন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার ৫২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
×