ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় জাদুঘরে ‘আনা ফ্রাঙ্ক এ হিস্ট্রি ফর টুডে’ প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জাতীয় জাদুঘরে ‘আনা ফ্রাঙ্ক এ হিস্ট্রি ফর টুডে’ প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘যদি আমি মহৎ কিছু লিখতে পারতাম? আমি ওই রকম আশাও করি, ওহ্ এটা অনেক বেশি কারণ, লেখালেখিই আমাকে সবকিছু রেকর্ড করার সুযোগ করে দেয়, আমার সমস্ত চিন্তা, আদর্শ ও বাঁধনহারা কল্পনা।’ জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে আনা ফ্রাংকের এ কথাগুলো। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ কথাগুলো তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন। আনা ফ্রাংক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর পরিবারের সঙ্গে জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাতে বন্দী ছিলেন। হল্যান্ডের মুক্তির দুই মাস আগে ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে র্বেজেন বেলসেন বন্দীনিবাসে আনার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর আনার ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার হয়, যা আনা ফ্রাংক ডায়েরি নামে খ্যাত। শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও নেদারল্যান্ডের আনা ফ্রাংক হাউস যৌথভাবে আনা ফ্রাংকের ডায়েরি, ব্যক্তিগত জীবন ও ঐতিহাসিক দলিলের এক বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। জাতীয় জাদুঘরে সোমবার বিকেলে ‘আনা ফ্রাঙ্ক এ হিস্ট্রি ফর টুডে’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নেদারল্যান্ডের ডেপুটি চীফ অব মিশন মার্টিন ভি হুগ্সগ্রাটেন স্ট্রাটেন। জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, আনা ফ্রাংক সারাবিশ্বে এক পরিচিত নাম। আমাদের দেশেও আনা ফ্রাংকের ডায়েরির মতো অনেকের লেখা রয়েছে, যার প্রেক্ষাপট আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। রশিদ হায়দারের লেখায়ও এ ধরনের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। আনা ফ্রাংকের লেখায় কোন হতাশা নেই। আমরা বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের এ ধরনের লেখা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আনা ফ্রাংকের ডায়েরি বই হিসেবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। এ কথাগুলো এতই বিখ্যাত হয়ে ওঠে যে এগুলো তাঁর শৈশবের স্কুলের দেয়ালে লিখে দেয়া হয়। এর এক বছর পরেই আনা ফ্রাংক নিহত হন। আনা তাঁর ডায়েরির মাধ্যমে সকল ইহুদী যারা নাজিদের ভোগান্তি ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের নিকট প্রতীকে পরিণত হন। কিন্তু আনা নিজেও সফল হননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬ মিলিয়ন ইহুদী নিগৃহীত ও নিহত হয়েছিল। এই গণহত্যাকে আমরা বলি নিধনযোগ্য। এর বিচার চেয়েছিলেন আনা ফ্রাংক। এক বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আনা ধরা পড়েন। হিটলারের অত্যাচারে তাদের পরিবারের কেহই রেহাই পায়নি। আনার বাবা অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তাঁর কাছ থেকেই আনার ডায়েরি উদ্ধার হয়। এ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে প্রায় ২১টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি, সেখানে আমাদেরও আনার মতো আশায় বুক বেঁধে থাকতে হবে, নিরাশ হলে চলবে না। বক্তব্য শেষে অতিথিরা ফিতা কেটে পাঁচ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী দেখেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। চৈতন্যে ভাষা আন্দোলন : নাটক কবর ও মুনীর চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা সভা ॥ ‘চৈতন্যে ভাষা আন্দোলন : নাটক কবর ও মুনীর চৌধুরী’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও পাঠ অভিনয় অনুষ্ঠিত হয় ডেইলি স্টার ভবনের এএস মাহমুদ সেমিনার হলে সোমবার বিকেলে। গণমাধ্যম সংস্থা ঘাসফুল আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সহধর্মিণী লিলি চৌধুরীকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আঙিনায় সোমবার সকালে ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগী শিশুদের সরব উপস্থিতি। শিশুরা একাগ্রচিত্তে রং-তুলি দিয়ে তাঁদের ক্যানভাস তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কারও আঁকা চিত্রে রয়েছে ফুলেল শ্রদ্ধায় বাঙালী জাতির সম্মিলিত শক্তির আধার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কেউবা এঁকেছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র, আবার কারও আঁকা ছবিতে শোভা পাচ্ছে গ্রাম-বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য। শিশুদের তিনটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ক বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে যথাক্রমেÑ ফাহ্মিদা জাহান অর্পা, র্ফাহিনা জাহান অর্পিতা, ওয়ারিশা বিনতা বশির, সুবাহ্ নূর ও তীর্থ মজুমদার। খ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে যথাক্রমে- মুবাশ্বির রহমান স্বচ্ছ, শাহাদাৎ হোসেন, আসমুবা শাহ্রীন, মায়মুনা আহমেদ রিচি ও জীরফ উদ্দিন আহমেদ। গ গ্রুপে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করে যথাক্রমে- মাইশা মালিহা সিদ্দিকী, সাদমান আহমেদ, নাফিসা ইসলাম তুতুল, হাসিবুর রহমান নাবিল ও তাহানা রহমান সওদা। বিকেলে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বিদেশী দূতাবাসের শিল্পীরা।
×