ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মান্না লাশ চান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মান্না লাশ চান

বিভাষ বাড়ৈ ॥ দেশজুড়ে হত্যাকা-সহ ভয়াবহ নাশকতার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই থেকে শুরু করে দেশী ও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের আশীর্বাদেই চলছে সাধারণ মানুষকে পুুড়িয়ে হত্যাসহ অব্যাহত নাশকতা। বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে একসঙ্গে কাজ করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সব জঙ্গী সংগঠন। আন্দোলনের নামে জঙ্গীরূপে চালানো নাশকতার ষড়যন্ত্রে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজে’র ব্যানারে জড়িয়ে পড়েছেন সুশীল সমাজের একটি অংশ। হত্যাযজ্ঞের কারণে জনরোষে পড়া বিএনপিকে রক্ষা করতেই সংলাপের সেøাগান নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। জনগণের কাছে নিজেদের নিরপেক্ষ হিসেবে জাহির করে চললেও কথিত এ নাগরিক সমাজের আসল চেহারা ফাঁস করে দিয়েছেন উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজেরই উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্না। ফোনালাপে সরকার উৎখাতে বিএনপিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যাসহ নাশকতার পরামর্শদানের ঘটনা ফাঁসের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ফাঁস হওয়া কথোপকথনে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপির সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের যোগাযোগ আছে। সেনা হস্তক্ষেপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে মন্ত্রিসভায়। এ কথোপকথনকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রিসভার সদস্যের অনেকেই মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মান্নাকে বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অপর এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার কথোপকথনের অডিও নিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে ওই অডিও নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ মান্নার আগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেছেন। তারা বলেন, মান্না একেক সময় একেক দল করেছেন। কখনও জাসদ, কখনও বাসদ, এর পর আওয়ামী লীগ; এভাবে দল বদল করেছেন। তার নিজের রাজনৈতিক কোন চরিত্র নেই। বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ হয়ে এখন তিনি কাজ করছেন বলেও মন্ত্রিসভার সদস্যের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মান্নার বড় ভাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ করতেন মান্নার বড় ভাই। ঘটনাচক্রে হয়ত মান্না জাসদে যোগ দিয়েছিলেন। মন্ত্রীদের ক্ষোভের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথোপকথনের যে তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, তারা একটা ষড়যন্ত্র নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। এখন আপনারাই চিন্তা করেন, ভেবে দেখেন, কী করা যায়? রবিবারই ষড়যন্ত্রের কথা পরিষ্কার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ সরকার উৎখাতে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কথা রবিবারই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশে ভয়াবহ ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এসব অপরাধীর বিচার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে বোমা প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী, আদেশদাতা ও অর্থের যোগানদাতাদের বিচার কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক হওয়া প্রয়োজন। রবিবার সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনাকালে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসম্পৃক্ততা হারিয়ে খালেদা জিয়া পাক হানাদারবাহিনীর মতো গণহত্যা শুরু করেছেন। উনি একদিকে একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস’র (ইসলামিক স্টেট) পথ ধরে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছেন। উনি দেশকে দোজখখানা বানাতে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন কীসের আশায়? অন্যদিকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে ‘উত্তরপাড়া ও বিদেশী প্রভুদের’ দিকে চেয়ে থাকেন। কখন তারা তাকে ক্ষমতায় নিয়ে গিয়ে বসাবেন! এমন নানা আকাক্সক্ষা নিয়ে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে বসে আছেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর সেই স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না। উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে কোন লাভ নেই। উনি যাদের নিয়ে ভাবেন তারাও জানে এভাবে ক্ষমতায় এলে কি পরিণতি হয়। আগুনে কেউ পা দিতে আসবে না। অতীতে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদেরকেও খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। জিয়া-এরশাদের পরিণতি কী হয়েছে? অনেককে দেশ ছেড়ে (মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন) যেতে হয়েছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নাগরিক কমিটির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুশীলদের নিয়ে ১৭ জনের একটি কমিটির তালিকা দেখলাম। যাদের অধিকাংশই সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মরত থাকা অবস্থায় অনেককেই পদোন্নতির জন্য, মুখ্য সচিবসহ নানা পদের জন্য তদবির করতে দেখেছি। সরকারী চাকরি শেষেই তারা সুশীল হয়ে ছবক দেন। কিন্তু দেশের মানুষ আজ খুবই সচেতন। কেউ মিথ্যা কথা বলে তাদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না। আর সুদখোর, ঘুষখোর ও চাটুকারদের দিয়ে কখন কোন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া তারা (সুশীল সমাজ) ভুলে গেছে- সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনারা যখন বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন তখন মানুষ ভেবেছিল তারা খালেদা জিয়াকে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা বন্ধ করতে বলবেন। এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে বলবেন। তারা ন্যায়নীতির কথা বলেন, টকশোতে টেলিভিশন ফাটিয়ে ফেলেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এসব কোন কথাই তারা বলেননি। হয়ত তারা মনে করছেন, এভাবে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চললে কিছু একটা ঘটবে, অনেকের গাড়িতে পতাকা উড়তেও পারে। কিন্তু সেই আশাও কোনদিন পূরণ হবে না। খালেদা জিয়া নিজের দেশের জনগণের পরিবর্তে উনি পরদেশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার এত আশা সেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রীও তাকে নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বলেছেন। বিএনপি-জামায়াতের মদদে সরকার উৎখাতে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন ॥ আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গীরূপে চালানো নাশকতার মধ্যেই হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে ছাত্রশিবির একাকার হয়ে কাজ করছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ও সরকারবিরোধী গ্রুপগুলো জোটবদ্ধ হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে হামলা ও নাশকতার লক্ষ্যেই জোটবদ্ধ হচ্ছে এসব সংগঠন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে গোয়েদা কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশব্যাপী চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে জঙ্গীদের ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশব্যাপী বিভিন্নস্থানে যেসব নাশকতা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে এসব নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ও সরকারবিরোধীরা একত্রিত হয়ে বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আরও ভয়াবহ নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন দেশব্যাপী পেট্রোলবোমা হামলা করতে জেএমবি, হুজিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা গেছে, বাইরে দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই যে কোন মূল্যে সরকার উৎখাত চায় উগ্রবাদী এ চক্রটি। এর অংশ হিসেবেই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার অপকৌশল নেয়া হয়েছে। গণসংযোগ কর্মসূচীর নামেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সঙ্কট তৈরিতে একাট্টা বিএনপি, জামায়েত, শিবির ও হিজবুত তাহরীর। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ তৎপরতার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিএনপি জোটের কর্মসূচীতে যুক্ত করেছে ‘রাজবন্দীদের মুক্তি’র দাবি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে হিযবুত তাহরীর ছাড়াও সরকার ও গণতন্ত্রবিরোধী অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিএনপি। গণমিছিল ডেকে খবর নেই ড. কামাল-মান্নার ॥ সোমবার ‘শান্তি ও সংলাপের দাবিতে গণমিছিল’ ডেকে আসলেন না মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনিও এই গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন না। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিলের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য। অন্যান্য নেতাকর্মী নির্দিষ্ট সময়ে গণমিছিলে আসলেও আসেননি ড. কামাল-মান্না। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আকরাম বলেছেন, অনিবার্য কারণে তারা গণমিছিলে উপস্থিত হতে পারেননি। তারা কেন মিছিলে আসেননি তার সঠিক কারণ আমাদের জানা নেই। নাগরিক ঐক্যের এক নেতা বলেন, ড. কামাল হোসেন বিদেশ থেকে আজই দেশে এসেছেন। তিনি (ড. কামাল হোসেন) অনেক টায়ার্ড, সেজন্য আসেননি। মান্নার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দাবি আকবর আলি খানের, অন্যরা মুখ লুকিয়ে ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা বা সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে আনার বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুর রহমান মান্নার দুটো কথোপকথন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত নানা সংবাদ পড়েছেন তিনি। বলেন, জানি না এসব সত্য কি না, তবে সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হোক তার (মান্না) বিরুদ্ধে। সুশীল সমাজের অংশ হিসেবে পরিচিত একজনের এ ধরনের কার্যকলাপকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন-জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কোন সংজ্ঞা নেই। তারা কোন না কোনভাবেই যেকোন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা বা সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মান্নার আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, ‘এগুলো অবশ্যই বেআইনী কাজ। প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া উচিত তার বিরুদ্ধে। মাহমুদুর রহমান মান্নার সংলাপের উদ্যোগের সমর্থক বিএনপিপন্থী সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পুরো বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, কে ফোনে কি বলেছেন সে বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। এসব বিষয় জানতে চাইলে গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। নাগরিক সমাজের সদস্য হিসেবে আলোচনায় থাকা সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। কথা বলতে চাই; লিখে তার সেলফোনে ম্যাসেজ পাঠালেও কাজ হয়নি। এরপর কল করা হলে মোবাইল বন্ধ করে দেন তিনি। মান্নাকে গণধোলাইয়ের ঘোষণা ছাত্রলীগের, গ্রেফতার দাবি ভিসির ॥ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের দায়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে ষড়যন্ত্র! এটা তো অচিন্ত্যনীয় একটি বিষয়। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চলছে ওই নেতার বক্তব্যের মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলাকে কেন্দ্র করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গণধোলাই দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি এ হুমকি দেন। সমাবেশে থেকে ছাত্রলীগ নেতারা মান্নাকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, রবিবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে বিএনপির আন্দোলন বেগবান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাশকতা ঘটানো ও লাশ ফেলার বিষয়ে খোকাকে পরামর্শ দেন মান্না। এই অডিও টেপ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে ঢাবির মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু হানিফ, যুগ্ম-সম্পাদক হাসানুজ্জামান তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এরশাদুর রহমান চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ আল হাসান, কৃষি সম্পাদক রাইসুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ। নাজমুল বলেন, গণতন্ত্রের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়ার যে নীলনকশা বিএনপি-জামায়াত তৈরি করছে তাতে পেছন থেকে উস্কানি দিচ্ছে সুশীল সমাজ নামধারী প্রমিত বাংলা উচ্চারণকারী, গভীর রাতের তোতাপাখি মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো কুলাঙ্গার। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের লাশ ফেলতে দ্বিধাবোধ করেন না। তার সার্টিফিকেট বাজেয়াপ্ত করার জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশের সকল শ্ক্ষিা প্রতিষ্ঠানে আজ থেকে অবাঞ্ছিত। তাকে বাংলাদেশের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই দেয়া হবে। সভাপতির বক্তব্যে বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পরামর্শে ও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে পেট্রোলবোমা মেরে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তারা এদেশের ১৫ কোটি এসএসসি পরীক্ষার্থীকে জিম্মি করে, দেশের মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে ক্ষমতায় চাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আপনি ও আপনার কুলাঙ্গার ছেলের এই সকল দেশবিরোধী কর্মকা- বন্ধ করুন, নয়ত বাংলাদেশ থেকে আপনি ও আপনার পেট্রোলবোমাবাজ নেতারা পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। সমাবেশে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×