ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইয়ের মাহিদুর ও চুটুর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ করিমগঞ্জের আরও তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ করিমগঞ্জের আরও তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এরা হলোÑ রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও মোঃ আজাহারুল ইসলাম। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক চাঁপাইবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী মোঃ মোখলেসুর রহমান জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার ভাই আরিফুলকে মারধর করে বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে আসামি মাহিদুর আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকার চুটু আমার ভাতিজা আরিফুল ও ফিটুকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আজ আসামিপক্ষকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন আহম্মেদের মামলায় আরও তিন রাজাকারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় বর্তমান ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আসামি এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেফহোমে নেয়ার আবেদনও মঞ্জুর করেছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মার্চ। মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মোহাম্মদ সিমন। উল্লেখ্য, এ মামলায় দুই ভাইয়ের মধ্যে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পলাতক রয়েছেন। পুলিশ শামসুুদ্দিন আহম্মেদকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। এর আগে তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ২৫ নবেম্বর কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর ক্যাপ্টেন (অব) নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে। এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন তদন্ত কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ এক বছর পাঁচ মাস ১৮দিন তদন্ত করে গত ২৪ নবেম্বর তদন্ত শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগের (চার্জ) মধ্যে রয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী লুণ্ঠন, আটক ও নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধার পিতা আব্দুল বারেকসহ মোঃ হাবিবুল্লাহ, শেখ চান্দু মিয়া, শেখ মালেক, আফতাব উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও আব্দুল মালেককে গুলি করে হত্যা করে। পরে (সকলের) মোট আটজনের লাশ পাওয়া গেছে। ১১ নবেম্বর এটিএম নাছিরের নেতৃত্বে করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে মিয়া হোসেন নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের কলালি গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আব্দুল গফুর নামে একজনকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নির্যাতন চালিয়ে খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ২৩ আগস্ট করিমগঞ্জের বাজারঘাট থেকে নাছির উদিদ্দন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ফজলুর রহমান মাস্টার নামে আটক করে কিশোরগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পে প্রেরণ করে। সেখানে তাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের রামনগর গ্রামে শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে তার সহপাঠী পরেশ চন্দ্র সরকার নামের একজনকে আটক করে নির্যাতনের পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাহিদুর-চুটু ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী মোঃ মোখলেসুর রহমান জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আজ আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করবেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মোঃ মোখলেসুর রহমান। পিতা মৃত- হাশি উদ্দিন, গ্রাম- চাঁদশিকারী, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আমার বর্তমান বয়স ৮৩-৮৪ বছর। আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদশিকারী গ্রামে বসবাস করতাম। আমি চোখে কম দেখি। কানেও কম শুনি। ১৯৭১ সালে আরবি শাবান মাসের একদিন রোজ বুধবার রাজাকার মাহিদুর, রাজাকার চুটু, গফুর, কুবেদ আমাকে ও আমার ভাই ফজলুল হক, ভাইয়ের ছেলে আরিফুলকে মারধর করতে করতে সকাল ৮টা সাড়ে ৮টার দিকে বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে নিয়ে যায়। সঙ্গে পাকসেনারাও ছিল। সেখানে আসার পর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। এরই এক পর্যায়ে মাহিদুর আমার ভাই ফজলুলকে গুলি করে হত্যা করে। আমার ভাতিজা আরিফুল ও ফিটুকে রাজাকার চুটু গুলি করে হত্যা করে। এক পর্যায়ে মাহিদুর আমাকে তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মুখের ওপর আঘাত করে। এত আমি নাকে আঘাতপ্রাপ্ত হই। তখন আমি মাহিদুরকে বলি আমার একটি ছেলে আছে ও রাজাকার বাহিনীতে আছে। জীবন বাঁচানোর জন্য আমি এ মিথ্যা কথাটি বরেছিলাম। এ কথা বলার পর সকাল নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে আমাকে লাইন থেকে বের করে দেয়। সাক্ষী আরও বলেন, বাড়িতে আসার পর আমার ভাইয়ের স্ত্রী ভাইয়ের এবং তার ছেলের খবর নিতে চাইলে আমি তাদের মৃত্যুও খবর দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ি। এর ৫Ñ৭ দিন পর শুনতে পাই এরাদত বিশ্বাসের টোল, কবিরাজ টোলা প্রভৃতি গ্রামসমূহে মাহিদুর গফুরসহ অন্যরা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে।
×