ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধায় দুই শিবির কর্মীর স্বীকারোক্তি

পেট্রোলবোমা হামলা পরিকল্পিত ॥ দুই দল ছিল এ্যাকশনে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পেট্রোলবোমা হামলা পরিকল্পিত ॥ দুই দল ছিল এ্যাকশনে

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ সদর উপজেলার তুলসীঘাট সংলগ্ন বুড়িরঘর এলাকায় বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় গ্রেফতারকৃত জামায়াত-শিবির কর্মী রেজানুর রহমান রূপক ও তাসকিনুর ইসলাম স্বপন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। ফলে দ্রুততম সময়ে নৃশংস এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হয় পুলিশ। স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা হয় ওই হামলাটি ছিল সুপরিকল্পিত। এই ক্লিং মিশনটা ছিল সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক একলাছুর রহমান ও সভাপতি আব্দুর রহমানসহ ওই এলাকার ২০ দলের নেতাকর্মী ক্যাডারদের একটি পরিকল্পিত প্ল্যান। এটি এ্যাকশন লিডার হিসেবে বাস্তবায়ন করেছে পেট্রোলবোমা তৈরিতে দক্ষ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জামায়াত-শিবিরের কুখ্যাত ক্যাডার মোস্তফা মঞ্জিল, যার আওতায় ৫টি পর্যবেক্ষণ টিম ও ২টি এ্যাকশন টিম মর্মান্তিক এ হত্যাকা- সংঘটিত করে। উল্লেখ্য, র‌্যাবের গাড়িতে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে বন্দুকযুদ্ধে মোস্তফা মঞ্জিল নিহত হয়। এ সময় র‌্যাব ৮টি পেট্রোলবোমা, ২টি পিস্তুল, গুলির খোসা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। ওই মোটরসাইকেলটি পেট্রোলবোমা চালিয়ে হত্যার অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সীচা পাঁচপীর এলাকা থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস তুলসীঘাটের বুড়িরঘর এলাকায় পৌঁছলে ওই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে। এতে বাসটি আগুনে ভস্মীভূত হয় এবং দু’জন শিশুসহ ৮ জন নারী-পুরুষ আগুনে পুড়ে মারা যায়। আহত হয় ৩২ জন, যার মধ্যে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখনও অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ জন নামীয় এবং ৯ জন অজ্ঞাত পরিচয়সহ মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে এ্যাকশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত নামীয় আসামি স্বপন ও রূপক স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। ওই ক্যাডারদের প্রদত্ত স্বীকারোক্তি মোতাবেক জানা গেছে, মোস্তফা মঞ্জিল ছিল একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বোমাবাজ। যে নিজে পেট্রোলবোমা তৈরি করত এবং বহনও করত। এ্যাকশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোস্তফা মঞ্জিল ছাড়াও বাঘা, ডিউক, কাবিনুর ও মোজাহিদ এবং স্বপন নামের ৬ জন বোমাবাজ ক্যাডার। এরা তাসকিনুর ইসলাম স্বপনের সাহাপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর বাজারে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে এসব পেট্রোলবোমা তৈরি করা হয়। মোট ৫টি দল ঘটনার দিন গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে মাঠেরহাট থেকে পলাশবাড়ীর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত এলাকার মাঠেরহাট, বুড়িরঘরসহ বিভিন্ন এলাকার ৫টি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। এ্যাকশনের দায়িত্ব ছিল মোস্তফা মঞ্জিলের নেতৃত্বে দুটি দল। যারা বুড়িরঘরসংলগ্ন এলাকা থেকে ১শ’ গজ পূর্বদিকে রাস্তার দু’পাশে অবস্থান করছিল। যৌথবাহিনী ও গাইবান্ধা থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ঘটনার দিন যখন যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকগুলো অতিক্রম করছিল পর্যবেক্ষণ দলগুলো এ্যাকশন পার্টিকে খবরাখবর প্রদান করছিল। যে খবরের ওপর ভিত্তি করে যৌথবাহিনীর প্রথম স্কট দলটি অতিক্রম করার পর দ্বিতীয় দলটি অতিক্রম করা কালে নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসটি অনেক পেছনে পড়ে যায়। এ সুযোগে মোস্তফা মঞ্জিল নিজে ওই যাত্রীবাহী বাসটিতে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে। মোস্তফা মঞ্জিল নিহতের সময় র‌্যাবের উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলটি দিয়েই বিভিন্ন পয়েন্টে সে কিলিং অপারেশনে ক্যাডারদের ডিপুট করে এবং এ্যাকশনে কারা অংশ নেবে সেটাও তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ ক্যাডারই জানত না কতজন অংশ নিচ্ছে এবং কারা এতে আছে। সে কারণেই রেজাউর রহমান রূপক যে মাঠেহাটের দায়িত্বে ছিল সে দেখেছে ২৫ থেকে ২৬ জন; আবার বুড়িরঘর এলাকায় অবস্থানকারী তাসকিনুর ইসলাম স্বপনের মতে তাদের ওই পয়েন্টে ছিল ১৫ থেকে ১৬ জন ক্যাডার। এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ফলে আশা করা হচ্ছে অতিদ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতার করা হবে।
×