ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৫ রানে হারিয়ে এবার লজ্জা দিল ক্যারিবীয়রা

পাকিস্তান খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে!

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পাকিস্তান খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বকাপ মিশনের শুরুতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হেরে মনোবল অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান দল। সেটা বোঝা গেল তাদের দ্বিতীয় ম্যাচেই। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছে তারা। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে প্রথম ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩১০ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পরে পাকিস্তান জেরোমি টেইলর ও আন্দ্রে রাসেলের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৩৯ ওভারে মাত্র ১৬০ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ইনিংসের শুরুতেই মাত্র ১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লজ্জার এক রেকর্ডও গড়েছে পাকরা। এ জয়ের ফলে প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়াল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এ পরাজয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথটা দুর্গম হয়ে গেল পাকদের জন্য। টানা দুই ম্যাচে হারের কারণে এখন পরবর্তী ৪ ম্যাচেই এখন চাপে থাকতে হবে তাদের। পরিসংখ্যান থেকে আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল ক্যারিবীয়দের পক্ষে পাল্লাটা ভারি। কারণ বিশ্বকাপে আগের ৯ মোকাবেলায় ৬ বারই পাকদের হারিয়েছে তারা। তবে সম্প্রতি ফর্ম ও আইরিশদের কাছে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর আর ক্যারিবীয়দের পক্ষে বলা যাচ্ছিল না। আর পাকরাও বিশ্বকাপ মিশনে আসার আগে বেশ সাফল্য পেয়েছে। দু’দলের জন্যই হ্যাগলি ওভালে জয় পাওয়াট ছিল জরুরী। টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকরা। দলীয় মাত্র ২৮ রানের মধ্যেই দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন স্মিথকে সাজঘরে ফেরত পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এদিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ গেইলের ব্যাট থেকে ১৪ বলে আসে মাত্র ৪ রান। তবে তৃতীয় উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় আটকান ড্যারেন ব্রাভো ও মারলন স্যামুয়েলস। প্রথম ম্যাচে রান না পেলেও এদিন স্যামুয়েলস ৩৮ রানের মাঝারি একটি ইনিংস খেলেন। তিনি আউট হয়ে গেলেও দারুণ খেলছিলেন ব্রাভো ও দিনেশ রামদিন। তবে রান নিতে গিয়ে পায়ের পেশিতে তীব্র টান লাগায় মাঠ ছাড়তে হয় ৭৮ বলে ৩ চারে ৪৯ রান করা ব্রাভোকে। এরপর অবশ্য রামদিনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে লেন্ডল সিমন্স অর্ধশতক আদায় করেন। তিনি ৪৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ এবং রামদিন ৪৩ বলে ৭ চারে ৫১ রান করে দলকে একটি মজবুত অবস্থানে নিয়ে যান। আর সে কারণেই পরে রাসেল নেমে তা-বলীলা শুরু করেন। মাত্র ১৩ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংস খেলেন। ড্যারেন সামির সঙ্গে শেষ ৬ ওভারে তিনি ক্যারিবীয় ইনিংসে যোগ করেন ৮৯ রান। সামির স্বাচ্ছন্দ্য আর রাসেলের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ক্যারিবীয়রা তিন শ’ পেরিয়ে ৬ উইকেটে ৩১০ রানের একটি বড় সংগ্রহ দাঁড় করায়। পাকদের পক্ষে সফলতম বোলার হিসেবে হারিস সোহেল দুটি উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল বিভীষিকাময়। গতির ঝড়ে উইন্ডিজ টপঅর্ডার ল-ভ- করে দেন পেসার টেইলর। প্রথম ওভারেই মেডেনসহ ওপেনার নাসির জামশেদ (০) ও ইউনুস খানের (০) উইকেট তুলে নেন টেইলর। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিপদ আরও ঘণীভূত হয় পাক শিবিরের যখন হারিসকে (০) সাজঘরে পাঠান তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলেই আহমেদ শেহজাদকে (১) ফেরত পাঠান জ্যাসন হোল্ডার। মাত্র ১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো অন্ধকারে পতিত হয় পাক শিবির। চার ব্যাটসম্যান হারিয়ে এত কম দলীয় রানের নতুন রেকর্ড এটি ওয়ানডের ইতিহাসে। এর আগে কানাডা ৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে পোর্ট অব স্পেনে। এরপরই পাকদের যুদ্ধটা হয়ে যায় মূলত বড় লজ্জা থেকে বাঁচার। কিন্তু সেটা হয়নি। দলীয় ২৫ রানের সময় ফিরে যান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকও। ষষ্ঠ উইকেটে সোয়েব মাকসুদ ও উমর আকমলের জোড়া অর্ধশতকে তোলা ৮০ রানের জুটিতে বড় লজ্জা এড়ানো গেছে। মাকসুদ ৬৬ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ এবং আকমল ৭১ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রান করে ফিরে যান। ১১ ওভার বাকি থাকতেই মাত্র ১৬০ রানে থেমে যায় পাক ইনিংস। ১৫০ রানের জয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। ২৩ বছর আগে হওয়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপে সিডনিতে ১৩৩ রানে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতদিন সেটাই ছিল সেরা।
×