ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৬১ বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

৬১ বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একষট্টি বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন নেত্রকোনার ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন আহমদ (৮১)। তিনি বাংলায় কবিতা লিখে পাঠ করার দায়ে ভাষা আন্দোলনের সময় নেত্রকোনার আঞ্জুমান আদর্শ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। শনিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে স্কুলের মানপত্র তুলে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তাকে ১০ শ্রেণীতে ভর্তিরও ঘোষণা দেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক। উল্লেখ্য, বিপ্লবী এই ভাষাসৈনিককে নিয়ে শনিবার জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন ছিল শনিবার। এদিন জেলা শহরের পুরনো কোর্ট চত্বরে দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছিল। সমাপনী অনুষ্ঠানে ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় প্রধান অতিথি থেকে ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিনের হাতে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার প্রত্যয়নপত্র তুলে দেন। এ সময় তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। মন্ত্রী ভাষাসৈনিককে নগদ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতাসহ ভবিষ্যতে সরকারীভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে আঞ্জুমান স্কুলের সভাপতি ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি সিকদার বলেন, আজিম উদ্দিন চাইলে স্কুলের ১০ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। ভাষাসৈনিকের বড় ছেলে, তাঁর বাবাকে ফের ১০ শ্রেণীতে ভর্তি করার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বজলুল কাদের শাজাহান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা ওসমানগনি তালুকদার প্রমুখ। আজিম উদ্দিন আহমেদ জানালেন, ‘ঘুষের থলি এবং পকেট ভারি’ স্বরচিত এই দুই কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে তিনি স্কুল থেকে চিরদিনের জন্য বহিষ্কৃত হন। সেই দুই কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তিনি জানালেন, পাকিস্তানের শোষণ আমার সহ্য হতো না। সব ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি চমর অবহেলার মানুষিকতা দেখাত। মন চাইতো প্রতিবাদ করতে। সে সময় ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার আন্দোলন শুরু হয় ঢাকাতে। পরবর্তীকালে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দাবির মিছিলে গুলি চালালে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আমরাও সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। সে বছরই ডিসেম্বরে আমি বৃহত্তর ময়মনসিংহ নেত্রকোনা মহকুমায় আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করার দায়ে আমাকে সরকার স্কুলের মাধ্যমে চিরকালের জন্য বহিষ্কার করে। জানা যায়, জীবনের শেষ সময় কাটছে চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যতায়। ভাষাসৈনিক আজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, ছাত্রজীবনে রাজটিকেট পাওয়ায় ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখালেও ভাল কোন চাকরি দিতে পারেননি তিনি । নিজের জীবনের এই কলঙ্কের ছাপ পড়েছে ছেলেমেয়েদের জীবনেও।
×