ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কট উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ বান কি মুনের ॥ ওয়াশিংটনে মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক

নিরীহ মানুষের ওপর হামলা সহ্য করা যায় না ॥ কেরি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নিরীহ মানুষের ওপর হামলা সহ্য করা  যায় না ॥ কেরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে সাধারণ জনগণকে টার্গেট করা কোনভাবেই সহ্য করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি বিএনপি জোটের প্রতি এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তাঁরা এই আহ্বান জানান। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া সহিংসতায় প্রাণহানিতে পুনরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বান কি মুন। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সূত্র জানায়, চলমান সহিংসতা থেকে জনগণকে রক্ষার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে কার্যকর পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। সেই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন তিনি। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আহ্বানে হোয়াইট হাউসে সহিংস উগ্রপন্থা নির্মূল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে যান মাহমুদ আলী। গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতির উত্তরণ প্রত্যাশা করে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে চিঠি পাঠিয়েছেন বান কি মুন। এদিনও বৈঠকে বাংলাদেশে অবরোধ-হরতালে সহিংসতায় প্রাণহানিতে মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে তাঁর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে নিরীহ জনগণের সুরক্ষা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার কাজ করছে বলে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, সহিংসতা থেকে জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের এবং গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সব দলের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা উচিত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদারে জাতিসংঘের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন মহাসচিব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ অবদানের পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান মহাসচিব বান কি মুন। জন কেরির সঙ্গে বৈঠক ॥ বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনে সহিংসতায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি জোটকে অবিলম্বে এ ধরনের হামলা বন্ধের কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে জন কেরির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের লিখিত বক্তব্যে একথা বলা হয়েছে। বৈঠকে জন কেরি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে নিরীহ মানুষকে টার্গেট করার কৌশল বা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতপ্রকাশে বাধা কোনভাবেই বরদাশত করা যায় না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান সহিংসতার অবসানে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সব রাজনৈতিক দলের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন জন কেরি। দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির কর্মসূচী পালনে বাধা পেয়ে গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অবরোধের পাশাপাশি হরতালও আহ্বান করছে তারা। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালে প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাসসহ যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও হাতবোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৯০ জন, আহত হয়েছেন ৫৫৬ জন। এ সময় ৬৬৪টি যানবাহন পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে ৪১০টি গাড়ি। ২৮টি স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রেলপথে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ২৫টি ও নৌপথে ছয়টি। চলমান এই রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত কথা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন জন কেরি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কর্মকা-ে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন কেরি ও মাহমুদ আলী। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং শ্রমিকদের পরিস্থিতির উন্নয়ন সংক্রান্ত দুই দেশের অভিন্ন প্রচেষ্টা নিয়েও কথা বলেন তারা। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে-মন্তব্য করে বাংলাদেশের মৌলিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ওপর জোর দেন জন কেরি।
×