ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে শিক্ষকের লালসার শিকার ছাত্রী মৃত্যুপথে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাগেরহাটে শিক্ষকের লালসার শিকার ছাত্রী মৃত্যুপথে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ শরণখোলায় লম্পট শিক্ষকের যৌন লালসার শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থী (ছাত্রী) এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তাকে শরণখোলা হাসপাতাল থেকে খুমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। চাপেরমুখে অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ছাত্রীটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় সমাজপতিরা মীমাংসার নামে ওই ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য নগদ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধার্য করে, তাও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ শিক্ষকের এ অপকর্ম ঢাকতে প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি জোর তদ্বির করছে। তাদের বাধার কারণে হাসপাতালেও যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারছে না বলে ছাত্রীটির হতদরিদ্র পরিবার অভিযোগ করেছে। জানা গেছে, উপজেলার রাজৈর এলাকায় অবস্থিত শরণখোলা ডিগ্রি কলেজের ভোকেশনাল শাখার (বিএম) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৬ নং খাউলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আঃ হালিম হাওলাদারের পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান একই কলেজের এইচএসসি ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী-২০) প্রাইভেট পড়াতেন। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে সাদা কাগজে ওই ছাত্রীর স্বাক্ষর নিয়ে কাবিননামা ছাড়াই বিবাহের ছল করে। পরে ওই শিক্ষার্থীকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা করানোর নামে খুলনার দৌলতপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ৫/৬ মাস তারা একত্রে বসবাস করে। এরপর ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে লম্পট শিক্ষক মিজান তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। কোন কুলকিনারা না পেয়ে ওই শিক্ষার্থী (ছাত্রী) স্ত্রীর অধিকার ও তার গর্ভে থাকা অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে সম্প্রতি বাগেরহাট আদালতে একটি মামলাসহ কলেজ অধ্যক্ষের নিকট মিজানের বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেন। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাষক মিজানুর রহমানের পক্ষে জোর তদ্বির শুরু করে ওই শিক্ষার্থীকে বৈধ স্ত্রীর মর্যাদার আশ্বাস দিয়ে মামলা প্রত্যাহারসহ তার গর্ভে থাকা সন্তান নষ্টের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। নানা প্রলোভন ও চাপের মুখে গত ০৭ ফেব্রুয়ারি দরিদ্র পরিবারের এ ছাত্রীটির গর্ভপাত করানো হয়। পরে সালিশ মীমাংসার নামে নগদ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধার্য করে ওই পরিবারটিকে দেয়ার কথা বলে গোলবুনিয়া এলাকার জনৈক ব্যক্তির নিকট জমা করে। এ সময় ওই ছাত্রীর নিকট থেকে স্টাম্প ও সাদা কাগজে কয়েকটি স্বাক্ষর গ্রহণ করে সালিশ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে, ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে কলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রভাষক মিজান তার মুঠোফোনটি এক আত্মীয়ের কাছে রেখে গা-ঢাকা দেয়। হাসপাতালে ওই ছাত্রীর বড় বোনের স্বামী (দুলাভাই) মোঃ কবির হাওলাদার বলেন, তার শালিকার নামে স্থানীয় সমাজপতিরা ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ নাসিম তালুকদার বলেন, অসহায় এ মেয়েটির পিতা একজন হতদরিদ্র বনজীবী। শিক্ষকরূপী লম্পটের কারণে এ পরিবারটি এখন চরম বিপাকে পড়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে শরণখোলা ডিগ্রী কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, লম্পট মিজানের কারণে গোটা কলেজের বদনাম হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ মিজানের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিষয়টি নিয়ে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। ডাক্তার জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত বিষয় নিয়ে ওই ছাত্রী তার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তার অবস্থার অবনতির জন্য শুক্রবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রভাষক মিজানুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে তার এক নিকট আত্মীয় বলেন, স্থানীয় সালিশ ব্যবস্থায় ওই ছাত্রীর পক্ষে যাকে মানা হয়েছে আমরা তার কাছে ক্ষতিপূরণের নগদ ২ লাখ ৩০ হাজার প্রদান করেছি। কিন্তু সেই টাকা ওই পরিবার না পেলে আমরা দায়ী হব কেন?
×