ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;মিনা রানীর জবানবন্দী

রাজাকার হাসান আলী আমার বাবা ও কাকাদের হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাজাকার হাসান আলী আমার বাবা ও কাকাদের হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পলাতক রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর রিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৮তম সাক্ষী মিনা রানী সরকার জবানবন্দীতে বলেছেন, হাসান দারোগা নিজ হাতে আমার বাবা সতীষ চন্দ্র ঘোষ, কাকা সুরেশ ঘোষ ও জগদ্বীশ চন্দ্র ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর আসামির নির্দেশে অন্যান্য রাজাকাররা বাকি ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ মার্চ। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আদেশ প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে অপর সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম । সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মিনা রানী সরকার। আমার বর্তমান বয়স ৪৫/৪৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম বাড়িওয়ালাপাড়া, থানা গৌরিপুর, জেলার ময়মনসিংহ। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল দুই আড়াই বছর। তখন আমি আমার বাবার সঙ্গে কেন্দুয়া থানার পাইকুড়া গ্রামে বসবাস করতাম। আমি বড় হলে আমার মা সজ্ঞু বালা ঘোষকে আমার বাবা ও কাকাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমার মা আমাদের বলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা ও কাকাদের রাজাকাররা হত্যা করেছে। আমার মায়ের কাছে আমি শুনি যে, ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের পথম দিকে একদিন স্থানীয় রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবা কাকাদের খোঁজ করে। রাজাকাররা তাদের না পেয়ে আমার মা ও কাকিমাদের বলে যে, আমার বাবা-কাকা বাড়িতে ফিরে এলে যাতে মুসলমান হয়, না হলে তাদের বিপদ হবে এবং রাজাকাররা ওই দিন আমাদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে। ওই ঘটনার পর দিন আমার বাবা ও কাকা বাড়িতে এলে তাদের আগের ঘটনা ও হুমকির বিষয় জানায়। এই ঘটনা জানার পর আমার বাবা ও কাকারা দেশে নিরাপদে থাকা সম্ভব নয় বিধায় ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং পরদিন দিবাগত রাতে নৌকা ভাড়া করে আমার বাবা ও কাকাদের পরিবারের সকলে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়। একাত্তরের ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ১০/১১টার দিকে বেরগাঁও এলাকায় পৌঁছায়। এর পর মাঝিরা জানায়, দিনের বেলায় আর যাওয়া নিরাপদ হবে না বিধায় রাতে রওনা হতে হবে। দুপুরের পরে মাঝিরা নৌকাটি নিয়ে মারকান বিলে যায়। সন্ধ্যার পর পরই চারটি নৌকা আমাদের নৌকার দিকে আসতে থাকে। এ সময় মাঝিরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই নৌকা চারটি আমাদের নৌকার কাছে এসে ওই নৌকাগুলো হতে কয়েকজন রাজাকার আমাদের নৌকায় উঠে। ওই রাজাকারগুলোর মধ্যে একজন তখন বলে এই মালাউনরা তোমরা কি ভারতে যাচ্ছ। আমি হাসান আলী দারোগা। তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার। সাক্ষী আরও বলেন, আসামি হাসান আলী দারোগাসহ রাজাকরা আমার বাবা ও কাকাসহ আটজন পুরুষ লোককে নৌকার ছৈয়ের উপরে উঠায় এবং আসামি হাসান আলী দারোগা ও রাজাকাররা নৌকাটিকে রাস্তার পাশে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পর রাজাকাররা আমার বাবা ও কাকাসহ আটজকে নৌকা থেকে নামিয়ে রাস্তার উপরে লাইন করে দাঁড় করায়। পরে আসামি হাসান আলী দারোগা নিজ হাতে আমার বাবা সতীষ চন্দ্র ঘোষ, কাকা সুরেশ ঘোষ ও জগদ্বীশ চন্দ্র ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর আসামির নির্দেশে অন্য রাজাকাররা বাকি ৫ জন পুরুষ লোককে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর পরই দূর থেকে গোলাগুলির শব্দ আসলে রাজাকাররা মাটির উপর শুয়ে পড়ে এবং আমার মা, কাকিমা নৌকার বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। গোলাগুলির শব্দ বন্ধ হলে আসামি হাসান আলী ও অন্য রাজাকাররা আবার নৌকায় এসে আমার মা ও কাকিমাকে মুসলমান হতে বলে। আরও বলে তোমাদের মুসলমান ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হবে। আসামি মা ও কাকিমাদের কাছে থেকে ২৫ হাজার টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।
×