ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় এলওসি দিচ্ছে ভারত

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দ্বিতীয় এলওসি দিচ্ছে ভারত

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) সফলভাবে পরিচালনা করায় দ্বিতীয়বারের মতো এলওসির আওতায় ঋণ দিচ্ছে ভারত। এর পরিমাণ হতে পারে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে কি পরিমাণ অর্থ দেয়া হবে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারতীয় ঋণে চলতি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান এবং ভারতীয় প্রতিনিধি দলের পক্ষে যুগ্ম সচিব (ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ এ্যারেজমেন্ট) অলক সিনহা। এর আগে মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশকে এলওসির আওতায় ঋণ দিলেও পরবর্তীতে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠন করায় এক ধরনের অনিশ্চয়তার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এই ঋণের ভবিষ্যত নিয়ে। কিন্তু চলমান এলওসিতে এ রকম কোন প্রভাব তো পড়েইনি। উল্টো দ্বিতীয় এলওসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে চলতি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন এলওসির বিষয়ে আলোচনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি দ্বিতীয় এলওসিতে কত টাকা তারা আমাদের দেবে। তবে এ বিষয়টি এজেন্ডায় রয়েছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে জানা যাবে। চলমান এলওসির অর্থছাড় বিষয়ে তিনি বলেন, বড় বড় কয়েকটা প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন পর্যায়ে যায়নি। এগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হলে একবারেই মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হবে। তখন অর্থছাড়ের পরিমাণ একবারেই বেড়ে যাবে। সূত্র জানায়, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ১১ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ১২ জানুয়ারি ঘোষণা দেয়া হয় ৫০ দফা যৌথ ইশতেহার। সেখানে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত সরকার। ওই বছরের ৭ আগস্ট ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশকে দেয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে গণ্য হবে বলে ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে বাংলাদেশকে ৮০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, দ্রুতই এগিয়ে চলছে ভারতীয় ঋণের অর্থে গৃহীত প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে ৭টি প্রকল্প। নতুন করে কন্ট্রাক সাইন হয়েছে একটি প্রকল্পের। গত জানুয়ারিতে দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে খুলনা-মংলা পোর্ট প্রকল্পে, বর্তমানে এ প্রকল্পে কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েল গেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মোট ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যেই যে ৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো হলো- ৮১টি বগি ট্যাঙ্ক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো বাস সরবরাহ করেছে ভারত), ১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে বাংলাদেশে), ১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাঙ্ক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প (সবগুলো ওয়াগন সরবরাহ করেছে ভারত), প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্পের আওতায় সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে, ১৭০ ফ্লাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ঋণের অর্থে বাস্তবায়নাধীন থার্ড-ফোর্থ লাইন ডুয়েল গেজ সংক্রান্ত প্রকল্পটি কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এতে আরও নতুন কম্পোনেন্ট যুক্ত হয়েছে। গত বছরের ১৪ এপ্রিল ভারতের পক্ষ থেকে এটি বাস্তবায়নের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। খুলনা-মংলা পোর্ট সংক্রান্ত প্রকল্পটির কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। ডিটেইল্ট প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ শেষ। দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটির জন্য দুটি আলাদা বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে এবং গত বছরের জানুয়ারি মাসে মূল সেতু বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর একটি সেতু বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ২ বছর এবং অন্যটির আড়াই বছর। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে জানান, এখন পর্যন্ত প্রকল্পগুলো অগ্রতিতে আমরা সন্তুষ্ট। কেননা লোকোমোটিভসহ হার্ডওয়্যার ক্রয় সংক্রান্ত সব কাজই শেষ হয়ে গেছে। সিভিল ওয়ার্ক যে কয়েকটি প্রকল্পে আছে সেগুলো বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত কারণেই একটু সময় লাগছে। তারপরও সেগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন ইতোমধ্যেই ১২০ কোচ প্রকল্পের বিষয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন হয়েছে। খুলনা-মংলা পোর্ট এবং থার্ড-ফোর্থ ডুয়েল গেজ প্রকল্পের দরপত্রের কাজ শেষ এখন কনসালট্যান্ট নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দ্রুত এগুচ্ছে।
×