ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারাদেশে ১৪ দলের গণমিছিল

খুনী, বোমাবাজদের সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খুনী, বোমাবাজদের সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান নাশকতা-সহিংসতার প্রতিবাদে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় রাজধানীসহ সারাদেশে বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তির পক্ষে ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একযোগে গণমিছিল কর্মসূচী পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, না হলে যুক্তিতর্কে আমরা হেরে যাব। অনেক মন্ত্রীই নানা শর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক ছড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সংলাপকে ‘না’ বলে দিয়েছেন, সেখানে আমাদের মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অবরোধ-হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার অপরাধে খালেদা জিয়াকে কীভাবে গ্রেফতার করা যায়- এ বিষয়েও আলোচনা করেছেন চৌদ্দ দলের নেতারা। রবিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নতুন এ কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে তামাশা চলছে। জনগণের কাছে হরতাল এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। কারণ সবকিছু স্বাভাবিক, ঢাকাসহ সারাদেশে দোকানপাট খোলা আছে, সরকারী ও বেসরকারী অফিসের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। খালেদা জিয়ার ডাকা হরতাল-অবারোধ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করায় তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জোট বর্তমানে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। এটা কোন আন্দোলন নয়। খালেদা জিয়ার তথাকথিত এ আন্দোলনের মধ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। পাকিস্তান এ আন্দোলনে পুরোপুরি সহায়তা দিচ্ছে। কারণ তারা একাত্তরের পরাজয়ের বদলা নিতে চায়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কেউ আপোস করেনি। আপোস করলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ লাদেনের সঙ্গে এবং আমেরিকা জঙ্গী আইএসের সঙ্গে সংলাপ করত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। কেউ বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের বিপক্ষে তিনি এ আন্দোলন ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তিনি সেটা পারবেন না। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত তাদের সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে তারা একই কাজ করেছিল। সেদিন শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সংলাপে বসার জন্য। কিন্তু খালেদা জিয়া আল্টিমেটাম দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ এখন উনি (খালেদা) যেমন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন, ঠিক সে কাজটি করতে চেয়েছিলেন নয়াপল্টনে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতাসংস্থার উদ্বেগ প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশীরা বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমাদের (সরকার) নিয়ে নয়। আমিও তো উদ্বিগ্ন। শিশুরা উদ্বিগ্ন। দেশবাসী উদ্বিগ্ন। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। জঙ্গীবাদী, নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস এগুলো গণতন্ত্র এবং মানব সমাজের শত্রু। এগুলো দানবের সমাজে ঘটে। সুতরাং মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখতে হলে দানবের সঙ্গে কোন সমঝোতা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি যে, দানবের সঙ্গে মানবের কোন সংলাপ সম্ভব নয়। যারা সন্ত্রাস বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়ে সংলাপের কথা বলছেন, কার্যত তারা দানবকে সংলাপের টেবিলে এনে দানবের সব কাজ হালাল করার চেষ্টা করছেন। ষড়যন্ত্রই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই বক্তব্য পরিষ্কার, দানবের জায়গা সংলাপের টেবিল নয়, আদালতের বারান্দা এবং কারাগারে। বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে, সম্পদের ক্ষতি করে বিএনপি জোট দেশকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর জন্য তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে পারেনি। এখন আবার জামায়াতকে রক্ষা করার জন্য সারাদেশে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাস ও মানুষ পোড়ানো হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক চরিত্র। তবে এসব করে কিছুই হবে না। একাত্তরের ঘাতকদের বিচার সম্পন্ন হবেই। তাদের কোন এজেন্ডাই বাস্তবায়ন হবে না। খুনি, বোমাবাজদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না, ১৪ দল এ সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। চৌদ্দ দলের এই মুখপাত্র জানান, দেশজুড়ে গণমিছিলের অংশ হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের একটি গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা অনিবার্ণে গিয়ে শেষ হবে এবং সেখানে শপথ গ্রহণ করা হবে। গণমিছিল কর্মসূচী সফল করতে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে সকল শ্রেণীপেশা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া একই উদ্দেশে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় উত্তরা আজমপুর মার্কেটের সামনে, ২৩ ফেব্রুয়ারি একই সময়ে রাজশাহীর কাটাখালী ১৪ দলের উদ্যোগে পৃথক দুটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে ১৪ দল। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণতন্ত্রী পার্টির নূরুর রহমান সেলিম, গণআজাদী লীগের এসকে শিকদার, আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আফজাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, সুজিত রায় নন্দী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. অসিত বরণ রায় প্রমুখ।
×