ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভালবাসার দিনে এক ডাইনি!

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভালবাসার  দিনে এক  ডাইনি!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র চারদিন আগে সাহিদা বিয়ে করেন সাইফুল নামের এক যুবককে। এ বিয়েতেও তার মন ভরেনি। তাই আবার ঠিক করেন চারদিন পর ভালবাসার দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি আরও একটি বিয়ে করার। কিন্তু এ জন্য কি মাত্র দু’বছর বয়সী কোলের শিশুটিকেও মেরে ফেলতে হবে? তাও গলাটিপে? সে কি মা, নাকি ডাইনি? শনিবার এমন প্রশ্নই ছিল তার পরিচিতদের। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই বছরের শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পুলিশও বিস্মিত। কি করে মা পারলেন এমন দুধের শিশুকে গলাটিপে হত্যা করতে। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ভালবাসার দিনে যখন বর্ণিল সাজে সজ্জিত কপোত-কপোতীর অনুরণন তখনই পুলিশ ছুটে হতভাগা এ শিশুর মরদেহ নিয়ে। এতে ক্ষণিকের জন্য হলেও যেন ছন্দপতন ঘটে, ভালবাসার উচ্ছ্বাসে। ভালবাসায় ছেদ টেনে কপোত-কপোতীরাও ছুটে যায় পুলিশের কাছে থাকা সেই শিশুর লাশ দেখতে। তাদের মুখেই শোনা গেছে নানা মন্তব্য, “ভালবাসার দিনে মানুষ হৃদয়ের উচ্ছ্বাসে যতটা আবেগতাড়িত হয়, প্রেমপূজারি হয়, রোমান্টিক হয়Ñ বিপরীতে ততটাই কাম-ক্রোধের তাড়ায় হিংসাত্মক হয়। সাহিদা তারই প্রতীক। মা হয়েও তিনি নিজের রিপুর কাছে পরাজিত হয়ে ডাইনির ভূমিকায় মেতে ওঠেন।” এ তো গেল প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রতিক্রিয়া। এ ঘটনায় পুলিশ কি বলছে? এ সম্পর্কে জানতে চাইলেÑ শাহবাগ থানার দারোগা সোহেল রানা জানান, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে উদ্যানের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের অংশে পিডব্লিউডি মালীদের কোয়ার্টারের সামনে রাখা সেনিটারি রিংয়ের ভেতর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুর মা পলাতক থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, তিনিই এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। তবে অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা সাহিদার পরিচিতজনদের বরাত দিয়ে বলেন, এই মহিলা চারদিন আগে বিয়ে করেছেন। আজও (শনিবার) তার আরেকটি বিয়ে করার কথা ছিল। সে জন্যই কি তিনি পথের কাঁটা ভেবে শারমীনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। তার পরিচিতজনদের মুখে এমন মন্তব্যও শোনা গেছে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাসমান কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মাঝে মাঝে তার কাছে বিভিন্ন লোকজন আসতেন। রাতে তাদের সঙ্গে বাইরে যেত সাহিদা। তার কোলে শিশুটিকে দেখা গেছে দুদিন আগেও। এদিকে সাহিদার চারদিন আগে বিয়ে করা স্বামী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা উদ্যান ও হাইকোর্ট এলাকার ফুটপাথে থাকি। গত বুধবার তার সঙ্গে মিরপুর শাহ আলী মাজারে পরিচয় হয়। এরপর মাজারকে সাক্ষী রেখে আমরা বিয়ে করি। কেন শিশুটিকে হত্যা করা হলো জানি না। সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে লেবারের কাজ করেন। পুলিশ জানায়, সাহিদা পলাতক। শিশুটির মরদেহ হাসপাতাল থেকে কে গ্রহণ করবে সেটাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে শিশুটিকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে সুরতহালের রিপোর্ট দেখে বলা যায়Ñ এটা শ্বাসরুদ্ধজনিত হত্যাকা-। সাহিদার একাধিক বিয়ে হয়েছে। শিশুটি কোন্্ স্বামীর ঔরসজাত কন্যা সেটা জানা গেলে অনেক রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হতো।
×