ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে বসন্তের বর্ণিল আবহে উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে বসন্তের বর্ণিল আবহে উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সখী, ভাবনা কাহারে বলে/সখী, যাতনা কাহারে বলে/তোমরা যে বল দিবস-রজনী ভালবাসা ভালবাসা-সখী, ভালবাসা কারে কয়...। এভাবেই সুরের আশ্রয়ে ভালবাসার স্বরূপ সন্ধান করেছিলেন কবি। মনের গহীনে আলোড়ন তোলা বিচিত্র এ অনুভবকে উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন অনেকেই। তাই তো গল্প-কবিতা-উপন্যাস কিংবা গানের বাণীতে অজস্রবার উচ্চারিত হয়েছে হৃদয়ঘটিত সে বোধের কথা। আর শনিবার শহরজুড়ে প্রকাশ্যে বা একান্তে প্রকাশিত হয়েছে প্রেমের সেই বার্তা। হয়ত কোন নতুন প্রেমিকযুগল একে অপরের হাতটি ধরে নতুনভাবে বলেছে অনাদিকালের পুরনো সেই কথা ‘ভালবাসি তোমায়’ অথবা কাব্যিক ঢংয়ে বলার ধরনটি ছিল এমন- ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে/সেই কথাটি তোমায় যাব বলে/ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে/পাখির গানে আকাশ গেল পুড়ে...। ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিনটি ছিল ‘সেই’ কথাটি বলার। এদিন ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস। ইতিহাসের পাতায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে। ভালবাসা যদিও দিন-ক্ষণ বেঁধে হয় না। প্রকৃতির নিয়মে সহজাতভাবে হৃদয়ে জাগে ভালবাসা। তবে হৃদয়ের ভাষা প্রকাশের বিশেষ কোন দিন থাকলে মন্দ কি? অন্য দিনগুলোর চেয়ে ওই দিনটিতে না হয় অনেক বেশি উচ্চারিত হলো ভালবাসার কথা অথবা বিশেষ দিবসের সুযোগে প্রকাশিত হলো প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমাকে মনের কথা জানান দেয়ার সুপ্ত বাসনাটি। দেশজুড়ে ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে বসন্তের বর্ণিল আবহে উদযাপিত হলো ভালবাসা দিবস। তাই তো ভালবাসা দিবসে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে ছিলেন প্রেমিকযুগল। হৃদয়ে গভীর অনুরাগ ধারণ করে চষে বেড়িয়েছেন ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মাতাল করা বসন্ত বাতাসের শরীরে ভাসিয়েছেন তাদের মন। অন্তর উজাড় করে বলেছেন আগামী দিনের প্রেম-পথে চলার কথা। সকাল থেকে রাতঅবধি অন্তরের স্পন্দিত আবেগে পালিত হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবস। দিনটি ছিল যেন শুধুই ভালবাসার। ‘নিভৃতে যতনে মনের মন্দিরে’ প্রিয়জনকে আরাধনার একটি দিন। হৃদয়স্নাত সম্পর্কের বন্ধন জোরালো করার এক দিন। জোড়ায় জোড়ায় প্রেমিকযুগল অনাবিল আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছে রাজধানীর নানা আঙিনায়। শনিবারের ছুটির দিনের সুবাদে কিছুটা যানজটমুক্ত নগরে ক্রিং ক্রিং শব্দতোলা তিন চাকার রিক্সায় চেপে কেউ বা কাটিয়েছে মধুর সময়। নির্ঝঞ্ঝাট রেস্তরাঁয় বসে আনন্দময় আহারের সঙ্গে চলেছে ভাব বিনিময়। রাজধানীর বিভিন্ন কফি হাউস থেকে শুরু করে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে বসেও হয়েছে প্রেম বিনিময়। সোহরাওয়ার্দী বা রমনা পার্কের সবুজ-শ্যামলিমায় সম্পৃক্ত হয়ে আবেগের উচ্ছলতায় কেটেছে আনন্দময় মুহূর্ত। ভাললাগার মানুষের প্রতি মুগ্ধ হয়ে হয়ত বলা হয়েছে ‘আমার পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই তুমি তাই গো।’ নিত্যদিনের রুটিনের বাইরে ভিন্ন দৃশ্যপট নিয়ে হাজির হয়েছিল ভালবাসা দিবস। প্রেমিক-প্রেমিকা হৃদয়ের বন্দরে জেগেছিল প্রেমময়তার অপার অনুভূতি। পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে রেস্তরাঁয় বসে মজা করে খাওয়া, মনটাকে প্রসারিত করে উদ্যানে ঘুরে বেড়ানো, প্রিয়জনের হাতে ফুল কিংবা বই তুলে দেয়া, মনজুড়ানো প্রেমের বাণীযুক্ত কার্ড উপহার দেয়া, সিনেমা দেখে লম্বা সময় কাটিয়ে দেয়া-এমন নানা অনুষঙ্গের ভেতর দিয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে ভালবাসা দিবসে প্রেমের উত্তাপ। ভালবাসার কাছে যেন হারিয়ে যায় দূরত্ব। দীর্ঘ পথের ব্যবধানটাও যেন হৃদয় প্রবাহিত উত্তাপে হয়ে যায় খুব কাছের আর এই দূরত্বকে হারিয়ে দেয়া এক প্রেমিকযুগলের দেখা মিলল ভালবাসা দিবসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তন্ময় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী স্নিগ্ধা ভালবাসার প্রকাশ যেন হারিয়ে দিয়েছে দূরত্বকে। খুব সকালে স্নিগ্ধার সঙ্গে দেখা করতে সাভার থেকে বাসে চেপে তন্ময় এসে পৌঁছান ঢাকায়। দুপুরে রমনা পার্কের সামনে কথা হয় এই জুটির সঙ্গে। তন্ময় বলেন, এমনিতে তো সব সময় ভালবাসা থাকে। তবে এ জন্য বিশেষ দিবস থাকলে সেটার তাৎপর্যটা হয় অন্য রকম। তাই ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ভালবাসার মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সাভার থেকে ছুটে এসেছি রাজধানীতে। দু’জন মিলে সকালের শুরুতেই হাজির হয়েছি অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। মেলা ঘুরে ওর হাতে তুলে দিয়েছি পছন্দের কিছু বই। এরপর সারা দিন খাওয়া-দাওয়া, একান্ত আলাপচারিতা ও ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় একজন আরেকজনের কাছ থেকে বিদায় নেব। চারুকলা সংলগ্ন ছবির হাটের সামনে কথা হয় প্রেমিকযুগল শিমুল ও বীথির সঙ্গে। কেমন করে কাটল ভালবাসার দিন জানতে চাইলে বীথি বললেন, সকাল বেলায়ই আমার হাতে ফুল তুলে দিয়েছে শিমুল। ওর উপহারে সিক্ত হয়েছে মনটা। এরপর দু’জন নানা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি আর মজা করে খাওয়া-দাওয়া করেছি। একটু পরেই তো নামবে বিকেল। অন্য সময় হলে বাসায় ফিরে যেতাম। কিন্তু আজ আমরা বিচ্ছিন্ন হব সন্ধ্যার পর। অনেকেই আবার ভালবাসা দিবসে ছুটে গেছেন একুশের বইমেলায়। সকালে প্রিয়জনকে ফুল দিয়েছেন আর বিকেলে দিয়েছেন বই। এমনই এক জুটি ইকবাল হাসান ও ফাহমিদা হায়দার। ইকবাল বললেন, বইয়ের চেয়ে ভাল উপহার তো আর কিছু নেই। তাই ভালবাসা দিবসে প্রিয়তমাকে বই দিয়ে নিজের ভাললাগা প্রকাশ করলাম। আর এতে ওর আনন্দ দেখে নিজের মনটাও হয়ে উঠল প্রফুল্ল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির বইমেলা পর্যন্ত প্রেমিকযুগলদের হাতে হাতে দেখা গেছে লাল গোলাপ। ভালবাসা দিবসকে ঘিরে বিকেলে বাড়তি জনসমাগম ঘটে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের আশপাশের রেস্তরাঁয়-ক্যাফেতে দিনভর ছিল প্রেমিক-প্রেমিকার আনাগোনা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা অনুষদই নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানম-ি লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা বটমূলসহ নানা স্থানে যুগল তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। লাল গোলাপসহ সুগন্ধিময় নানা বর্ণ ও আকৃতির ফুল দিয়ে প্রিয়জনকে বলা হয়েছে হƒদয়ে চাপা থাকা অব্যক্ত কথাটি। এ ছাড়া ভালবাসা দিবসে কেবলই ফুল নয়, শুভেচ্ছা কার্ড, ক্ষুদে বার্তা, ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমেও ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন অনেকে।
×